শনিবার, ১১ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
কুমিল্লা সিটি নির্বাচন

গতি বাড়ছে প্রচারণায়, প্রার্থীদের সঙ্গী স্ত্রী ভাই বোনও

মনোনয়নবঞ্চিত ১৩ নেতাকে নৌকার পক্ষে প্রচারণার অনুরোধ

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের পক্ষে অভিমান ভুলে প্রচারণার জন্য মনোনয়ন বঞ্চিতদের প্রচারণার অনুরোধ করা হয়েছে। গতকাল ঢাকায় ধানমন্ডি দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই অনুরোধ করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুস সবুর। সূত্র জানায়, বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী।

বৈঠক সম্পর্কে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও মনোনয়ন বঞ্চিত অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মিঠু বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে বলেছি আওয়ামী লীগের মনোনয়নের পদ্ধতি পরিবর্তন করার জন্য। কারণ, দল যখন মনোনয়ন ফরম বিতরণ করেছে তখন আমরা সংগ্রহ করে জমা দিয়েছি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে মনোনয়ন চাওয়ার কারণে আমরা শত্রু হয়ে গেলাম। যিনি মনোনয়ন পেলেন তিনি তো একদিনের জন্যও কাজ করতে বললেন না। রিফাত ভাই কাজ করতে না বললেও আমার নেতা-কর্মীরা নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করছি। আঞ্জুম সুলতানা সীমা এমপি বলেন, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত সভা হয়। সভায় নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। আমি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন আচরণবিধির কারণে প্রচারণায় অংশ নিতে পারব না। কিন্তু আমার নেতা-কর্মীরা কাজ করছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুস সবুর বলেন, দলে প্রতিযোগিতা থাকবে। যারা মনোনয়ন পাননি তারা সবাই যোগ্য নেতা। তাদের মান অভিমান ভুলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তারাও কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত মনোনয়ন বঞ্চিতদের মধ্যে ছিলেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আঞ্জুম সুলতানা ও মো. ওমর ফারুক, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক সফিকুল ইসলাম শিকদার, মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক নুর উর রহমান মাহমুদ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক কবিরুল ইসলাম শিকদার, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আনিসুর রহমান, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য মাসুদ পারভেজ খান ইমরান, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য জাকির হোসেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শ্যামল চন্দ্র ভট্টাচার্য, ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য মাহবুবুর রহমান, মহি উদ্দিন মাহী। দলীয় সূত্র মতে, গত ৫-১১ মে পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়। এতে ১৪ জন দলীয় মনোনয়ন পেতে আবেদন ফরম জমা দেন। কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর বঞ্চিত ১৩ নেতাকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৪১ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতেও রাখা হয়নি। তারাও প্রচারণায় নামেননি। বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ কুমিল্লার একটি হোটেলে স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সকালে ১৩ নেতা ও এর বাইরে শ্রমিক নেতা মনির হোসেন ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহীনুল ইসলামকে ঢাকায় তলব করে কেন্দ্রীয় কমিটি।

হাতপাখা প্রতীকের প্রথম ইশতেহার ঘোষণা : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের প্রচারণার ১৪তম দিনে ইশতেহার প্রকাশ করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মাওলানা রাশেদুল ইসলাম রহমতপুরী। সিটি নির্বাচনে পাঁচ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে এটি প্রথম ইশতেহার। গতকাল হাতপাখার নির্বাচনী প্রধান কার্যালয় কুমিল্লা নগরীর কচুয়া চৌমুনীতে তিনি ১৩ দফার এই ইশতেহার তুলে ধরেন।

গণসংযোগ : ১৫ জুন নির্বাচন। সময় যত কমছে প্রার্থীদের প্রচারণার গতি তত বাড়ছে। প্রার্থীদের সঙ্গে তাদের স্ত্রী, ভাই-বোনও প্রচারণা চালাচ্ছেন। গতকাল মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় ছিল এমপি বাহারের কুমিল্লায় অবস্থান। বুধবার নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার জন্য সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তিনি এখনো কুমিল্লায় অবস্থান করছেন। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর দয়াপুর এলাকা থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার নির্বাচনী প্রচারণায় স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার কখনো অংশগ্রহণ করেননি। এরপরও আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু নির্বাচন কমিশনে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন বাহার ভাইকে নির্বাচনী এলাকা থেকে চলে যেতে বলেছেন। তবে বাহার ভাই উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। রিটের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি কুমিল্লায়ই থাকবেন। তিনি আরও বলেন, কুমিল্লার মানুষ বাহার ভাইকে সম্মান করে। রাজনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে সবাই তাকে শ্রদ্ধা করে। আমার কোনো মিটিংয়ে কি আপনারা তাকে দেখেছেন। তিনি আচরণবিধি মেনে বাসায় অবস্থান করছেন। মাঝে মধ্যে আওয়ামী লীগ অফিসে যান। এখন কি আওয়ামী লীগ অফিস বন্ধ করে দেব? সাক্কু বাহার ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন তাকে কুমিল্লা ছাড়তে বলেছে। এটা দুঃখজনক। সাক্কু বাহার ভাইকে কুমিল্লা থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করছেন। সাবেক মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তেলিকোনা এলাকা থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। তিনি বলেন, আমার নেতা-কর্মীদের প্রতিনিয়ত মোবাইল ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। দেশে সরকার নির্বাচন দিয়েছে, জনগণ যাকে ইচ্ছা ভোট দিবে। আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। দেখি নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা নেয়। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার সকাল ১০টায় কুমিল্লা নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীনগর দিশাবন্দ এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছেন। তিনি নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, এই মুহূর্তে যে পরিবেশ আছে তা নির্বাচন পর্যন্ত থাকলে তিনি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা যারা করতে পারে, তারা ২০১৮ তে ভোটের অধিকার হরণ করেছে। সেই নৌকার মাঝি বর্তমান সংসদ সদস্য। তারা এখনো এই ব্যবস্থাটাই গ্রহণ করছেন। আমরা বিভিন্ন সোর্স থেকে খবর পেয়েছি তারা মানুষকে নির্বাচনের দিন ঠেকানোর চেষ্টা করবেন। সংসদ সদস্যকে শুধু নোটিস দিলে হবে না তাকে অকার্যকর করতে হবে। তিনি এখনো সীমানায় বসে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনকে ডাকছেন। তিনি সুজনের (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সভাপতিকেও নৌকার পক্ষে সভায় যাওয়ার জন্য বাধ্য করেছেন। উল্লেখ্য, আগামী ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর