সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
কৃষি

ঠাকুরগাঁওয়ে উৎপাদন হচ্ছে সিলিকা

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁওয়ে উৎপাদন হচ্ছে সিলিকা

দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো ধানের তুষ দিয়ে উৎপাদন করা হচ্ছে সিলিকা। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং গ্রামে সাসটেইনেবল এনার্জি অ্যান্ড এগ্রো রিসোর্স লিমিটেড (সোর্স) নামে একটি প্রতিষ্ঠান সিলিকা উৎপাদনের কাজ করছে।

সাদা সোনা খ্যাত সিলিকা, যাকে সিলিকন ডাই অক্সাইড বলা হয়। এটি সাবান, সিরামিক, কাগজ, পেপার বোর্ড, পানি পরিশোধনাগার, ভবন নির্মাণ, গার্মেন্টস, পেট্রোলিয়াম এবং মেটাল তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে বার্ষিক সোডিয়াম সিলিকেটের চাহিদা আনুমানিক ২,০০০ মেট্রিক টন পেরিয়েছে। যে হারে শিল্প কলকারখানা বাড়ছে তাতে করে এ চাহিদা আরও বেড়ে যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বিপুল পরিমাণে সোডিয়াম সিলিকেট (সিলিকা) তৈরির কাঁচামাল থাকা সত্ত্বেও প্রতি বছর সোডিয়াম সিলিকেট আমদানি করার জন্য অনেক বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। দেশের মাটিতে সিলিকা তৈরির প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে দেশের ৫৫-৬০ ভাগ সোডিয়াম সিলিকেটের চাহিদা পূরণ করা যাবে। এতে দেশের টাকা দেশেই থাকবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ধান থেকে চাল প্রক্রিয়াজাত করার পরে আমরা একটি বর্জ্য পেয়ে থাকি। যে বর্জ্যটির নাম হলো তুষ। তুষকে পুরিয়ে ছাই করলে ৬০-৭০ ভাগ সিলিকা পাওয়া যায়। এটি কস্টিক ডাইজেশন করে সোডিয়াম সিলিকেট তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করা যায়। প্রথমে নির্দিষ্ট পরিমাণ ধানের তুষের ছাই মেপে ডাইজেস্টরে নিয়ে কস্টিক সোডা দিয়ে ডাইজেশন (অনবরত নাড়ান) করা হয়। ডাইজেশন প্রক্রিয়াটি ১০০-১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১-২ ঘণ্টা চালানো হয়। এখান থেকে যে ধোঁয়াটি বের হয় সেটি বাইরে ছেড়ে না দিয়ে সেটা দিয়েই বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। উৎপন্নকৃত বিদ্যুৎ দিয়ে পুরো ইউনিটে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হয়ে থাকে। এতে করে বাইরে থেকে কোনো বিদ্যুতের প্রয়োজন পড়ে না। এরপর তরল সোডিয়াম সিলিকেট ২-৩ মাইক্রন ছাঁকনি দ্বারা ছাঁকা হয়। এতে বিশুদ্ধ তরল সোডিয়াম সিলিকেট পাওয়া যায়। চাহিদা অনুযায়ী সোডিয়াম সিলিকেটে পানির পরিমাণ ঠিক রাখার জন্য বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানি বাষ্পীভূত করা হয়। এরপর এই বিশুদ্ধ সোডিয়াম সিলিকেট ২৫০ লিটার স্টিলের ড্রামে ভরে বাজারজাত করা হয়। ছাঁকনি হতে প্রাপ্ত বর্জ্য পদার্থ এক্টিভেটেড কার্বন ড্রাইয়ার এর মাধ্যমে শুকিয়ে বাজারজাত করা হয়। সাসটেইনেবল এনার্জি অ্যান্ড এগ্রো রিসোর্স লিমিটেডের ফোরম্যান দুলাল হোসেন বলেন, আমরা এ প্রতিষ্ঠানে ১৭ জন মানুষ কর্মরত আছি। ছয় মাস থেকে আমাদের প্রোডাকশন হচ্ছে। আমরা ধানের তুষ থেকে সিলিকা পাউডার তৈরি করছি, পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক প্রকৌশলী মানিক হোসেন বলেন, আমরা ধানের তুষ দিয়ে সিলিকা ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করি। যে প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে পরিবেশবান্ধব। পৃথিবীর অল্প কয়েকটি প্লান্টের মধ্যে এটি একটি। আমাদের পুরো প্রক্রিয়াটি শতভাগ পরিবেশবান্ধব। আমরা আশা করছি এটির মাধ্যমে আমরা দেশের যে সিলিকার চাহিদা তা মেটাতে সক্ষম হব।

সর্বশেষ খবর