মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে তৈরি হচ্ছে রাজনৈতিক সংকট

মানিক মুনতাসির, জেনেভা, সুইজারল্যান্ড থেকে

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এখনো উন্নত বিশ্বের দেশগুলো একচেটিয়া প্রভাব খাটিয়ে সুবিধা নিচ্ছে। এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলডিসিভুক্ত (স্বল্পোন্নত) দেশগুলো। এসব দেশের বাণিজ্য সুবিধা বাড়ানো এবং এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণের পরও যেন এসব দেশ বাণিজ্য সুবিধা পেতে পারে তার প্রতিই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নজর দেওয়া উচিত। পাশাপাশি বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বিশ্বের সব দেশের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। কেননা প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে সৃষ্ট বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে দেশে দেশে তৈরি হচ্ছে রাজনৈতিক সংকট, যা পরবর্তী সময়ে বিশ্ব অর্থনীতিকে সংকটের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এ সংকট নিরসন ও খাদ্য নিরাপত্তায় সবার ঐকমত্যের আহ্বান জানিয়েছেন ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক এনগোজি ওকনজো-আইওয়ালা। এ ছাড়া কভিড-পরবর্তী যেসব চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে সেগুলোও একত্রে মোকাবিলার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদর দফতরে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর চলমান ১২তম মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সের দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় এসব ইস্যু উঠে এসেছে বারবার। পরে বাংলাদেশের পক্ষে সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোস্তাফিজুর রহমান, বাণিজ্য সচিব তপনকান্তি ঘোষ ও ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলে মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলেছে। প্রধান খাদ্য উৎপাদনকারী দেশগুলো ভবিষ্যতের জন্য ইচ্ছামতো খাদ্য মজুদ অথবা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। ফলে অনেক দেশেই ভোগ্যপণ্যের দাম ইতোমধ্যে আকাশছোঁয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ইন্দোনেশিয়া সম্প্রতি পাম তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যদিও পরে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। প্রতি বছর ২০ লাখ নবজাতক শিশু এবং ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু বর্তমানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশের জনসংখ্যায় চাপ সৃষ্টি করছে। এত বড় জনগোষ্ঠীকে খাওয়ানো এবং পুষ্টির মান বজায় রাখা বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া খাদ্যশস্য রপ্তানিতে আকস্মিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াতে প্রধান খাদ্য উৎপাদনকারী দেশগুলো প্রভাব বিস্তার করছে। সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষে প্রস্তাব তোলা হয় বিশ্বনেতাদের বাংলাদেশে ট্রিপ মওকুফের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য। বলা হয়, ২০৩২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত যাতে বাংলাদেশ কভিড-পরবর্তী চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারে এজন্য বাণিজ্য সুবিধা ও বাণিজ্যবিষয়ক অন্যান্য ইস্যুতে বাংলাদেশ ন্যায্য দাবি করেছে, যা পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এদিকে দিনের শুরুতে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক এনগোজি ওকনজো-আইওয়ালা বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি সব মানুষকেই কষ্ট দিচ্ছে। ঠিক তেমনিভাবে তাঁকেও কষ্ট দিচ্ছে।

এ মুহূর্তে মানুষ বাঁচাতে সব দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঐকমত্য চান তিনি। বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির সর্বোচ্চ আসনে বসে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ ও গোষ্ঠীগুলোর প্রতি তিনি এ আহ্বান জানান। যেসব দেশ একচেটিয়াভাবে খাদ্য মজুদ করছে কিংবা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে তা বৈশ্বিকভাবে খাদ্য সংকট তৈরির নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে বলে তিনি মনে করেন। প্রায় পাঁচ বছর পর শুরু হওয়া এ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধান চারটি ইস্যু তুলে ধরা হয়, যেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। এদিকে বিশ্বব্যাপী অভিবাসীদের নিরাপদ জীবন যাপনের জন্য সম্মেলনে ও এর বাইরে জেনেভা শহরে নানা ধরনের মিছিল-মিটিং অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইউএনএইচসিআর, জেনেভায় জাতিসংঘ ও ডব্লিউটিও কার্যালয়ের সামনে ফিলিস্তিদের জন্য নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা রক্ষায় ব্যানার-ফেস্টুন টানানো হয়েছে। বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ইস্যুতেও ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। এ সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে উন্নত বিশ্বের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়। এ ছাড়া ওষুধশিল্পের একচ্ছত্র আধিপত্য রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দাবি তুলেছে সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দেশের এনজিওগুলো।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর