মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
বিশ্ব রক্তদাতা দিবস আজ

দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা মাত্র ৩২ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৯ লাখ ব্যাগ রক্ত লাগে। এর কেবল ৩২ শতাংশ আসে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে। বাকি ৬৮ শতাংশ আসে রক্তগ্রহীতার স্বজন ও অপরিচিতদের কাছ থেকে। রক্তের চাহিদা থাকায় অবৈধ ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত নিচ্ছে মানুষ। এতে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনে বাড়ছে ঝুঁকি। ছড়িয়ে পড়ছে হেপাটাইটিসসহ বিভিন্ন দুরারোগ্য রোগ। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আসাদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশে ৩০-৩২ ভাগ রক্ত পাওয়া যায় স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে থেকে। কভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে এ হার আরও কমে এসেছে। সন্ধানী, বাঁধন বা কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদানের পাশাপাশি অনেক পেশাদার ব্লাড ব্যাংক গড়ে উঠেছে। রোগীদের সেখান থেকে রক্ত পেতে অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রক্তের প্রয়োজন রোগীর আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে মেটানো হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারিভাবে একটি জাতীয় কর্মসূচির মাধ্যমে শতভাগ স্বেচ্ছা রক্তদান নিশ্চিত করতে হবে। কারণ রক্তের চাহিদার এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অবৈধ অনেক ব্লাড ব্যাংক গজিয়ে উঠেছে। এতে নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন না হওয়ায় দুরারোগ্য রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে।’

চিকিৎসকরা জানান, রক্তদান কতটা নিরাপদ তা নিয়ে কারও কারও মধ্যে সংশয় রয়েছে। রক্তদানে সাধারণত কোনো ঝুঁকি নেই। পুরুষ ও নারীর (প্রাপ্তবয়স্ক) ক্ষেত্রে ওজনের ৬৫ শতাংশ রক্ত থাকে বলে ধরে নেওয়া হয়। একজন মানুষের ওজনের ১৫ শতাংশ পর্যন্ত রক্ত একবারে দান করা যায়। রক্ত সাধারণভাবে সংগ্রহ করা হয় ৪৫০-৫০০ মিলিলিটার। সে হিসেবে রক্ত দান করলে শরীর থেকে সামান্য পরিমাণ রক্ত বেরিয়ে যায়। ফলে রক্তদানে শারীরিক ক্ষতির কোনো আশঙ্কাই নেই।

সূত্র জানান, ২০১৯ সালে সারা দেশে ৯ লাখ ৪২ হাজার ১৭২ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে গ্রহীতাদের দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রকোপের কারণে তা কমে ২০২০ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ লাখ ৬২ হাজার ৭৫৭ ব্যাগে।

সরকারের নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আতাউল করিম বলেন, ‘সরকারি হিসাবে প্রতি বছর সাড়ে ৯ থেকে ১০ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন পড়ে। গত বছর সাড়ে ৭ লাখ রক্ত সংগ্রহ করে গ্রহীতাদের দেওয়া হয়েছে। রক্তদাতাদের ৭০ শতাংশ পুরুষ ও ৩০ শতাংশ নারী। ২২৩টি সেন্টার থেকে আমাদের প্রতিবেদন দেওয়া হয়। আমাদের দেশের নারীদের মধ্যে অপুষ্টি, ওজন ও হিমোগ্লোবিন কম থাকাসহ নানা সমস্যার কারণে রক্তদানে তাদের অংশগ্রহণ কম। যে কোনো দুর্ঘটনা কিংবা প্রয়োজনে রক্তের কখনো সংকট হয়নি। রক্তদাতাদের কাছে থেকে রক্ত আমরা ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তবে পুরো রক্ত না দিয়ে কমপোনেন্ট আলাদা করে সরবরাহ করাতে এখনো আমাদের ঘাটতি রয়েছে। যেমন ডেঙ্গু রোগীদের জন্য প্লাটিলেট আলাদা করা কিংবা অন্য রোগীর জন্য প্লাজমা আলাদা করে দেওয়ার ব্যবস্থা এখনো সীমিত।’

রক্তস্বল্পতা, ওজন কম, অস্বাভাবিক রক্তচাপ, হেপাটাইটিস বি ও সি, ম্যালেরিয়া, এইডস অথবা কোনো যৌনরোগাক্রান্ত ও ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য গ্রহণকারীরা রক্ত দিতে পারেন না। কম ঝুঁকিপূর্ণ রক্তদাতা থেকে রক্ত সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং পরীক্ষার মাধ্যমে যে রক্ত পরিসঞ্চালন করা হয় তাকে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন বলে। নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে একজন রক্তদাতা শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি হৃদরোগ, স্ট্রোকের মতো প্রাণহরণকারী রোগ থেকেও নিরাপদ থাকতে পারেন।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আশরাফুল হক বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী বছরের ৯ লাখের বেশি ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করা হয় এবং চাহিদা এর চেয়ে অনেক বেশি। সংগৃহীত রক্তের মধ্যে কত ভাগ ব্যবহার হয় বা কাজে লাগে সে হিসাবটা না থাকায় রক্তের সরবরাহ অপর্যাপ্ত কি না তা সঠিকভাবে বলা যায় না। তবে নানা সময়ে সামাজিক মাধ্যমে রক্তের আকুতি দেখে অনুমান করাই যায় রক্তের জোগান আমরা এখনো দিতে পারি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘রক্ত যারা স্বাভাবিকভাবে প্রদান করেন তার বাইরে রক্তদাতার সংখ্যা বাড়ছে না, ফলে সংকট কাটে না। রক্ত যেহেতু রোগীর স্বজনদেরই সংগ্রহ করে দিতে হয় তাই নিকটাত্মীয়, সহকর্মী, বন্ধুসহ অনেকেই রক্ত দান করেন। তাদের বলা হয় টার্গেটেড বা পার্টি ডোনার। আমাদের দেশে এমন ডোনারই সংখ্যাগরিষ্ঠ। রক্তদাতাদের জন্য ডিজিটাল কার্ড করা গেলে সঠিক হিসাব রাখা সম্ভব হতো। আশপাশে যারা আছেন তাদের মধ্যে কেউ কারও জন্য রক্ত প্রদান করার মতো আছেন কি না তা-ও জানা সম্ভব হতো। এতে ভোগান্তি ও কষ্ট কমবে।’

সর্বশেষ খবর