বুধবার, ১৫ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি

ছেলের শোকে পাথর মা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

হাতে স্যালাইন। আঙুল দিয়ে ধরে আছেন সন্তানের ছবি। কখনো অজ্ঞান। জ্ঞান ফিরেই খুঁজছেন সন্তানকে। আবারও হারাচ্ছেন জ্ঞান। দেখা মিলছে না বুুকের ধন সন্তান শহীদুলের। মিলবেও না। তিনি যে না-ফেরার দেশে চলে গেছেন। ছেলের শোকে মা যেন এখন পাথর।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোয় স্মরণকালের ভয়াবহতম বিস্ফোরণে নিখোঁজ হন শহীদুল ইসলাম। তিনি কনটেইনারে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করতেন। বাড়ি বাঁশখালীর দক্ষিণ চাম্বলে। চাকরির কারণে থাকতেন বিএম কনটেইনার ডিপোর অনতিদূরে কেশবপুর গ্রামে। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে শহীদুল দ্বিতীয়।

শহীদুল ইসলামের বাবা জাকের হোসেন বলেন, ‘আমার চোখে যন্ত্রণা হচ্ছিল যে আমি দেখতে পারছিলাম না। তবু আমি চোখ চেপে ধরে ছেলেটাকে খুঁজছিলাম। পরে যখন চোখের যন্ত্রণা বেড়ে যায়, তখন আমার মাথায় খুব খারাপ লাগছিল। তবু চোখ ধরে ধরে আমার সন্তানকে খুঁজছিলাম। পরে আমি নিজেই অজ্ঞান হয়ে যাই। তখন কয়েকজন লোক চোখের চিকিৎসা করাতে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন।’ তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর আজ ১১ দিন পার হলো। কিন্তু আমার সন্তানকে পেলাম না। ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর চোখের পানিতে ছেলে হারিয়ে এখন আমি পাগলপ্রায়। তার মা-ও অসুস্থ। ঘুম ভাঙলেই খোঁজে ছেলেকে।’ জাকের হোসেন বলেন, ‘পুরো ডিপোতে আগুন জ্বলছিল। তা-ও আমার ছেলেকে অনেক খুঁজেছি। অসুস্থ হয়ে পড়ায় আর খুঁজতে পারিনি। পরে অনেকেই খুঁজেছেন ছেলেকে। কিন্তু আমি থাকলে যে কোনোভাবে খুঁজে বের করতাম। আমি তো ছেলের বাবা। আমি জানি সেদিন আমার ছেলে কোন শার্টটা পরেছে, প্যান্ট কোনটা পরেছে। আমার মতো করে আর কেউ খুঁজবে না। মেডিকেল থেকে ফেরার পর থেকে চোখে কম দেখছি। মোবাইলের লেখা দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু আমার ছেলেটাকে যদি একটু দেখতে পেতাম।’ শহীদুলের বোন শারমিন আক্তার বলেন, ‘আমার ভাইয়ের লাশ ডিপোতেই ছিল। ফেসবুকে তার লাশের ছবি দেখেছি। আমরা তার গায়ের কাপড় দেখে চিনতে পেরেছি। ছবিতে দেখেছি ওর পুরো শরীর পুড়ে গেছে, একটা হাত নাই। আমার ভাই ছাড়া আমরা খুব অসহায়। ওর লাশের ছবি দেখে আমার আম্মু-আব্বু পাগলের মতো হয়ে গেছে।’ ৪ জুন রাত ৯টায় সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুরের বিএম কনটেইনারে বিস্ফোরণে ৪৯ জন মারা যান এবং আহত হন ৩ শতাধিক। নিহতের মধ্যে ২৯ জনের লাশ শনাক্ত হওয়ায় পরিবারে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং ১৯ জনের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। ইতোমধ্যে ডিএনএ টেস্টের জন্য অজ্ঞাতদের স্বজনদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর