বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি

সিলেটে এক মাসের ব্যবধানে ফের বন্যা, সুনামগঞ্জ-কুড়িগ্রামে অবনতি

প্রতিদিন ডেস্ক

লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি

এক মাসের ব্যবধানে সিলেটে ফের দেখা দিয়েছে বন্যা। তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। একে একে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে জনপদ। সিলেট, সুনামগঞ্জ ও কুড়িগ্রামে লাখ লাখ মানুষ এরই মধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাও বেড়ে চলেছে। এদিকে গতকাল সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার উমরপুর-রাজনগর গ্রামে বানের পানিতে নৌকা ডুবে স্কুলশিক্ষার্থী ভাই-বোনের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সিলেট : এক মাসের ব্যবধানে সিলেটে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। গেল কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার পাঁচ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। পানি ঢুকে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সুরমা ও কুশিয়ারাসহ জেলার সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সুরমার পানি একাধিক পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সিলেটজুড়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছিল। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছিলেন জেলার    প্রায় চার লাখ মানুষ। আবহাওয়া অধিদফতর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গেল কয়েকদিন থেকে সিলেটে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া সিলেটের উজানে ভারতের মেঘালয় ও আসামের পাহাড়ি এলাকায়ও ভারী বর্ষণ হয়েছে। এতে সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারায় পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। গত মঙ্গলবার রাত থেকে কোথাও নদীর ডাইক ভেঙে আবার কোথাও তীর উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করা শুরু করে। সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গোয়াইনঘাট উপজেলার বেশ কয়েকটি সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলার সদর, পূর্ব ও পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলং, পূর্ব ও পশ্চিম আলীরগাঁও, রুস্তুমপুর, তোয়াকুল ও লেংগুড়া ইউনিয়নের ৯০ শতাংশ এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ রনিখাই এবং পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নেরও ৯০ শতাংশ এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উপজেলা সদরের সরকারি অফিসেও পানি উঠেছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এদিকে মঙ্গরবার রাত থেকে কানাইঘাট পৌরশহরে পানি প্রবেশ শুরু হয়েছে। সুরমা নদীর পানি তীর উপচে পৌরশহরে ঢুকছে। ক্রমেই পানি বাড়ছে। এরই মধ্যে পৌরশহরের দোকানপাটে পানি উঠেছে। এ ছাড়া উপজেলার পূর্ব ও পশ্চিম লক্ষ্মীপ্রসাদ, সাতবাঁক, চতুল ও সদর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সারি ও পিয়াইন নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জৈন্তাপুর উপজেলারও বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। ব্যাহত হচ্ছে গ্রামীণ যোগাযোগ। সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর, জালালাবাদ, টুকেরবাজার ইউনিয়নসহ নদী তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। খাদিমনগর ইউনিয়নের ঘোড়ামারা, আলীনগর, ছয়দাগ ও সাতগাছিসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল  বিকাল ৩টা পর্যন্ত সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, লোভা ও ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট ও সিলেট পয়েন্টে যথাক্রমে বিপৎসীমার ১১৪ ও ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই দুই পয়েন্টে সুরমার পানি দ্রুত বাড়ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। 

সুনামগঞ্জ : ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে মাত্র ১৮ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে পড়েছে সুনামগঞ্জ। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ক্রমেই অবনতি হচ্ছে জেলার বন্যা পরিস্থিতি। গতকাল বিকালে সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। একই সময়ে ছাতকে নদীর পানি ছিল বিপৎসীমার ১৭৪ সেন্টিমিটার ওপরে। জেলায় এদিন গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৬১ মিলিমিটার। স্থানীয় সূত্র জানায়, বন্যায় জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, সদর, দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা বন্যা কবলিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, সবজিখেত, বীজতলা। প্লাবিত হয়েছে ঘরবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। এ ছাড়া সুনামগঞ্জ পৌরসভার উকিলপাড়া, নবীনগর, কাজির পয়েন্ট, ষোলঘর, তেঘরিয়া, কালীপুরসহ নিচু এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে শহরের কয়েটি জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক। সব মিলয়ে গোটা জেলায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। ভোগান্তিতে রয়েছেন তারা। গত তিন দিন ধর তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের তিনটি অংশ পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। এ ছাড়া দোয়ারাবাজার-বুগলা সড়কের অনেক অংশও রয়েছে পানির নিচে।

কুড়িগ্রাম : পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ছয় দিন ধরে রৌমারী উপজেলার জিঞ্জিরাম ও আসামের কালোর ও ধরনী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আবারও বেশ কিছু নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দুই উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ৪৫টি গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। রাস্তা-ঘাট থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় দুর্ভোগ কমেনি পানিবন্দি এসব মানুষের। বন্যার পানি প্রবেশ করায় উপজেলার ৩৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। পানিতে তলিয়ে থাকায় এসব এলাকার প্রায় ৫৯০ হেক্টর জমির আউশ ধান, আমন, পাট, চিনা, কাউন ও বাদামসহ বিভিন্ন প্রকার ফসলের খেত নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অন্যদিকে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ১২.০৫ সেন্টিমিটার লেভেলে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যা বিপৎসীমার মাত্র ১.০৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যে হারে পানি বাড়ছে তাতে আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে বিপৎসীমা ক্রস করবে বলে পাউবো অফিস জানিয়েছে। এদিকে পানি বাড়ায় যমুনার অরক্ষিত অঞ্চল এনায়েতপুর, শাহজাদপুর ও চৌহালীতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ১০ দিনের ব্যবধানে প্রায় অর্ধশতাধিক বসতভিটাসহ ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। প্রতিদিন নতুন নতুন অঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ায় ফসল-শাকসবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর