বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

জেনেভায় উন্নত-স্বল্পোন্নতের স্বার্থ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে

ডব্লিউটিও সম্মেলন এক দিন বর্ধিত

মানিক মুনতাসির (জেনেভা, সুইজারল্যান্ড থেকে)

জেনেভায় উন্নত-স্বল্পোন্নতের স্বার্থ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে

চলমান বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১২তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের শেষ দিকে উন্নত, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে। এ নিয়ে মতপার্থক্যও বেড়েছে। ফলে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ন্যায্য দাবি পূরণ না হওয়া এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিশ্ব বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ও নেতারা একমত হতে না পারায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের এ সম্মেলনের সময় আরও এক দিন বাড়ানো হয়েছে। ফলে আজ ১৬ জুন কী ঘোষণা আসছে সেদিকেই তাকিয়ে আছে এলডিসিভুক্ত দেশগুলো। এবারের সম্মেলনের প্রধান দাবিগুলোর অন্যতম ছিল গভীর সমুদ্রে অবাধে মাছ শিকারে ভর্তুকি বন্ধ করা, কৃষিতে ভর্তুকি কমানো, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বাণিজ্য সুবিধা বহাল রাখা। এসব দাবির কোনোটাই পুরোপুরি পূরণ হয়নি। তবে করোনা-পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রতি উন্নত দেশগুলোর আর্থিক ও বাণিজ্য সুবিধা বহাল রাখা এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে খাদ্য চলাচলে বাধা না দেওয়া- এসব ইস্যুতে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর আলোচনায় তিন দিন ধরে চলে আসা বিতর্ক এখন তুঙ্গে। শক্তিশালী দেশগুলোর সঙ্গে চরম মতপার্থক্যের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ইস্যুগুলোর মীমাংসার জন্য সম্মেলনের সময় এক দিন বাড়িয়েছে ডব্লিউটিও। বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন, গুরুত্বপূণ ইস্যুগুলো অমীমাংসিত রেখেই শেষ হতে পারে এবারের সম্মেলন। অবশ্য সম্মেলনের শুরু থেকে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর যেসব দাবি ছিল সেগুলো থেকে অনেকটাই সরে আসতে বাধ্য হয়েছে কোনো কোনো দেশ। উন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- যারা ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ করবে এবং যেসব দেশ ইতোমধ্যে উত্তরণ করেছে তাদের টেকসই উন্নয়ন ধরে রাখার ব্যাপারে সহায়তা দেবে। এক্ষেত্রে ডব্লিউটিও মতবিনিময় প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। যদিও ডব্লিউটিওর ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।  জেনেভা সময় বুধবার সকালে হঠাৎ করেই বাতিল করা সম্মেলনের পূর্বনির্ধারিত নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন এবং ঘোষণা আসে সময়সীমা বাড়ানোর। এতে অংশগ্রহণকারী অনেক দেশের প্রতিনিধি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অনেকেরই টিকিট শিডিউল, হোটেল বুকিং নিয়ে ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে। একইভাবে সংশয় তৈরি হয়েছে বর্ধিত সময়ে আদৌ ভালো কোনো ঘোষণা আসবে কি না, যা হবে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য ফলপ্রসূ।

বাংলাদেশসহ যে কয়েকটি দেশ এবার এলডিসি থেকে উত্তরণ করার কথা যদি এসব দাবি পূরণ না হয় তবে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির সুযোগ হারাবে। এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অন্য দেশগুলোও। ফলে এসব দাবি নিয়ে দর কষাকষির সর্বশেষ ফলাফল কী হতে পারে তার ওপর দৃষ্টি রাখছেন বিশ্লেষকরা। এ প্রসঙ্গে সম্মেলনে অংশ নেওয়া সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সময় এক দিন বাড়ানো হয়েছে এটা ভালো, কিন্তু ফলাফল কী আসে সেটা বড় কথা। এ ছাড়া বড় দেশগুলো তাদের চাহিদা অনুযায়ী দাবি আদায় করে, কিন্তু এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর অনেকেই তা পারে না। যেহেতু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন তাই  হয়তো ভালো কিছু হলে হতেও পারে এবারের সম্মেলনে। সম্মেলনে অংশ নেওয়া এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা ভালো কিছু প্রত্যাশা করছি। দেখা যাক কী হয়।

সর্বশেষ খবর