বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে নৌপুলিশের অভিযান

হাজার কোটি টাকার অবৈধ জাল জব্দ ড্রোন ব্যবহার শুরু

মাহবুব মমতাজী

ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে অবৈধ জালের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে নৌপুলিশ। একই সঙ্গে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধেও অভিযান চালাচ্ছে সংস্থাটি। গতকাল চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে ড্রোন দিয়ে নজরদারি জোরদার করে নৌপুলিশ। গত ১০ বছরে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি অবৈধ জাল জব্দ করেছে তারা।

নৌপুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, এমন অভিযান অব্যাহত রাখায় ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। আর বাজারে এখন প্রতিনিয়ত ইলিশ পাওয়া যায়। নদীতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা টহলের পাশাপাশি চালানো হয় মাছ ও নদী রক্ষার নানা প্রচারণা। নৌপুলিশের সদর দফতরের তদারকিতে গতকাল মেঘনা নদীতে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ ও নৌপুলিশ সদর দফতরের পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. আ ক ম আক্তারুজ্জামান বসুনিয়ার নেতৃত্বে অবৈধ কারেন্ট জালের বিরুদ্ধে ড্রোন অভিযান শুরু করা হয়। এ সময় দূরে অবস্থান করা বিভিন্ন নৌকা, ট্রলার ও বাল্কহেড জাহাজে নজরদারি করা হয়। চাঁদপুরের ষাটনল, মোহনপুর, এখলাসপুর, চরউমেদ, লক্ষ্মীরচর, রাজনাজেশ্বর ও চাঁদপুর সদরে এ অভিযান অব্যাহত রাখা হয়।

অভিযানে অন্তত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের জন্য তিনটি বাল্কহেড থেকে নয়জন এবং তিনটি মাছ ধরা নৌকা থেকে আরও সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ জাল জব্দ করা হয়েছে। 

নৌপুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, নৌপুলিশের ধারাবাহিক অভিযানে নদীতে মাছের উৎপাদন অনেকগুণ বেড়েছে। আমরা এখন নিয়মিত অবৈধ জাল উৎপাদন কারখানায় অভিযান চালাচ্ছি। যেখানে অবৈধ জাল পাওয়া যায় সেখানেই তা জব্দ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ এবং চাঁদপুর এলাকায় এসব অবৈধ জাল কারখানা খুঁজে বের করতে আমরা ড্রোনের ব্যবহার শুরু করেছি। একই সঙ্গে অবৈধ জালের ব্যবহার ঠেকাতে নদীতেও ড্রোন দিয়ে নজরদারি শুরু করা হয়েছে। নৌপুলিশের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৪ সালে তারা অবৈধ জাল জব্দ করে ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৫ মিটার। যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৯৪ লাখ ৮৬ হাজার ৮৭৫ টাকা। ২০১৫ সালে জব্দ করা হয় ২৯ লাখ ৫১ হাজার ২৮৫ মিটার। যার আনুমানিক মূল্য ৫৯ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা। ২০১৬ সালে জব্দ করা হয় ১ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার ৩৫৭ মিটার। যার আনুমানিক মূল্য ২৩ কোটি ২৫ লাখ ৭ হাজার ১৪০ টাকা। ২০১৭ সালে জব্দ হয়েছে ৩৮ কোটি ৪০ লাখ ৫ হাজার ৩৩৭ মিটার অবৈধ জাল। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৭৬৮ কোটি ১ লাখ ৬ হাজার ৭৪০ টাকা। ২০১৮ সালে জব্দ করা হয় ২ কোটি ৯৬ লাখ ২ হাজার ৭৪৬ মিটার অবৈধ জাল। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৭৪ কোটি ৬৮ হাজার ৬৫০ টাকা। ২০১৯ সালে ২০ কোটি ৬৬ লাখ ৪ হাজার ৫৭৬ মিটার অবৈধ জাল জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৫৯৮ কোটি ৮৬ লাখ ৯৩ হাজার ৮৪০ টাকা। ২০২০ সালে জব্দ করা হয় ১৪৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৮ হাজার ৭৬৪ মিটার অবৈধ জাল। যার আনুমানিক মূল্য ৩ হাজার ৭০৩ কোটি ৬৭ লাখ ৮৭ হাজার ৩০ টাকা। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত চলা অভিযানে ৬৯ কোটি ৯১ লাখ ৬৭ হাজার ৩৫০ মিটার অবৈধ জাল জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ১ হাজার ৬৯ কোটি ২৮ লাখ ৫১ হাজার ১০০ টাকা। আর চলতি বছরের ১৪ জুন পর্যন্ত চলা অভিযানে জব্দ করা হয়েছে ৮১ কোটি ৩৭ লাখ ৪৪ হাজার ৬১৪ মিটার অবৈধ জাল। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ২ হাজার ৪৮৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ১২৫ টাকা। নৌপুলিশের এসব অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে ইলিশ উৎপাদনে ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে ৩ দশমিক ৮৫ মেট্রিক টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৮৭ মেট্রিক টনে।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৯৫ মেট্রিক টনে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৯৬ মেট্রিক টনে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ১৭ মেট্রিক টনে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৩৩ মেট্রিক টনে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৫০ মেট্রিক টনে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ৬৫ মেট্রিক টন।

সর্বশেষ খবর