রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকানোর জন্য পরিকল্পনার পর পরিকল্পনা

প্রথম ছয় মাসেই নিহত ১০০ আহত ১০ জন

উবায়দুল্লাহ বাদল

দেশে দিন দিন বাড়ছে বজ্রপাতে প্রাণহানি। শুক্রবারই মারা গেছেন ১৬ জন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্রের (এনডিআরসিসি) তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ১০০ জনের এবং আহত হয়েছেন কমবেশি ১৫ জন। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এমন পরিস্থিতিতে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমাতে মন্ত্রণালয় শুধু পরিকল্পনার পর পরিকল্পনাই করে যাচ্ছে। বজ্রপাত মোকাবিলায় তালগাছ লাগানোর প্রকল্প বাতিলের পর এবার টেস্ট রিলিফের (টিআর) টাকায় ‘লাইটনিং অ্যারেস্টার’ বা বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র বা ছাউনি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বজ্রপাতে মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ৯০০ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করেও অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) আতিকুল হক গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বজ্রপাতের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। এতে দেশের বজ্রপাতপ্রবণ ১৫ জেলা চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা একটি ডিপিপি তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে সাবমিট করেছি। যার সম্ভাব্য ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৯০০ কোটি টাকা। মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। আমরা সেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাব। এ প্রকল্প পাস না হওয়া পর্যন্ত ওই ১৫ জেলার বজ্রপাতপ্রবণ স্থানে কিছু বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র বা ছাউনি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য টিআর নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে।’

জানা গেছে, গত ১০ বছরে বজ্রপাতে দেশে কমবেশি আড়াই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরও বজ্রপাতে মারা গেছেন আড়াই শতাধিক। গত বছরের ৪ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি বরযাত্রী দলের ওপর বজ্রপাত হলে ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। এরা সবাই বৃষ্টির কারণে একটি ঘরের ভিতর আশ্রয় নিয়েছিলেন। সর্বশেষ শুক্রবার দেশের আট জেলায় বজ্রপাতে মারা গেছেন ১৬ জন। এর মধ্যে ময়মনসিংহে ছয়, সিরাজগঞ্জে তিন, রাজশাহীতে দুজন। এ ছাড়া নওগাঁ, বগুড়া, জামালপুর, ঢাকা ও নাটোরে একজন করে মারা গেছেন। বজ্রপাতে প্রাণহানি বেড়ে যাওয়ায় ২০১৭ সালে সরকার ১০ লাখ তাল গাছ রোপণের পরিকল্পনা নেয়। তখন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, প্রচুর তাল ও নারকেল গাছ রোপণ করা হলে সেগুলো বজ্রনিরোধক দণ্ড হিসেবে কাজ করবে। এজন্য সরকারিভাবে সারা দেশে ১০ লাখ তাল গাছের চারা রোপণ করা হচ্ছে। পরে সরকারের তরফে সারা দেশে কোটি তালের চারা রোপণের পরিকল্পনা জানানো হয়। মুজিববর্ষ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতেও তাল গাছ লাগানো হয়েছিল। তবে এখন আর সে প্রকল্প চলমান নেই বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। তিনি বলেন, ‘তাল গাছ লাগিয়ে বজ্রপাত মোকাবিলার কৌশলে ইতি টেনে দিয়েছে সরকার। বজ্রপাত থেকে বাঁচাতে দেশজুড়ে ১ কোটি তাল গাছ লাগানোর যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, তা আর বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ৩৮ লাখের মতো তাল গাছ লাগানোর পর দেখা গেল যত্নের অভাবে মারা যাচ্ছে। তাই এটা বাতিল করে দিয়েছি। আর একটি তাল গাছ বড় হতে ৩০-৪০ বছর লাগে। তাই এটি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য সমাধান মনে হচ্ছে না।’ তিনি জানান, এর বদলে টিআরের টাকায় হবে ‘লাইটনিং অ্যারেস্টার’ বা বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র স্থাপন। ৭ ফেব্রুয়ারি এ-সংক্রান্ত এক আদেশে বলা হয়- সাম্প্রতিককালে সারা দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। শুধু ২০২০ সালেই বজ্রপাতে দেশে ২৪৭ জন মারা গেছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সরকার বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘লাইটনিং অ্যারেস্টার’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় বজ্রনিরোধক দণ্ড, বজ্রনিরোধক যন্ত্র ও বজ্রপাত নিরোধক ছাউনি স্থাপন করা হবে।

এর সত্যতা নিশ্চিত করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘বজ্রপাতে প্রাণহানি কমাতে আশ্রয় কেন্দ্র ও লাইটনিং অ্যারেস্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর