সোমবার, ২০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

বাজেট নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংসদে

উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখবে : সরকারি দল, অর্থ পাচারকারীদের স্বার্থ রক্ষা : বিরোধী দল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাজেট নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংসদে

বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের এমপিরা বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট গণমুখী ও দেশকে এগিয়ে নেওয়ার এ বাজেট। এ বাজেট কভিড-পরবর্তী অর্থনীতিকে এগিয়ে নেবে। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রিন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখবে। পক্ষান্তরে বিরোধী দলের এমপিরা বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বিত্তবান ব্যবসায়ী, মুনাফাভোগী ও অর্থ পাচারকারীদের স্বার্থ দেখা হয়েছে। মধ্যবিত্ত ও গরিবের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে। তারা ‘ওএমএস’-এ বরাদ্দ কমে যাওয়া এবং অতিদরিদ্রের কর্মসৃজন কর্মসূচির বরাদ্দ কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্যানেল স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে গতকাল একাদশ সংসদের বাজেট অধিবেশনের বৈঠকে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সরকারি দলের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বিএনপির ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, আওয়ামী লীগের তানভীর শাকিল জয়, মো. শফিউল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান, মোসা. তাহমিনা বেগম, উম্মে কুলসুম স্মৃতি, সৈয়দা রুবিনা আক্তার, এস এম শাহজাদা, এনামুল হক, মমতা হেনা লাভলী, শামীমা আক্তার খানম প্রমুখ।

শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বিএনপি বলে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে। কিন্তু তা হবে না। কারণ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি খুব মজবুত। আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপ, পাকিস্তান, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের চেয়ে আমাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ কখনো শ্রীলঙ্কা হবে না, বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হবে, মালয়েশিয়া হবে সুইজারল্যান্ড হবে। যে ধারায় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে পরিচালিত করছেন এবং উন্নয়নের যে ধারা অব্যাহত রেখেছেন, সেই ধারায় বাংলাদেশ হবে সুইজারল্যান্ড।

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই বাজেট উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার বাজেট। আজ বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্বের বিস্ময়। তারা জানতে চায়, কীসের জাদুতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এভাবে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এখানে জাদু কিছু না, পিতা বঙ্গবন্ধুর মতোই দেশপ্রেম ও জনগণকে ভালোবেসে ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করে তিনি দুর্বার গতিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। এর মাধ্যমে দেশে নবদিগন্তের সূচনা হলো। যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু পদ্মা সেতু নির্মাণে বিরোধিতাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, বাজেট নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বিত্তবান ব্যবসায়ী, মুনাফাভোগী ও অর্থ পাচারকারীদের স্বার্থ দেখা হয়েছে। সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেছেন, বাজেটে সরকার যেসব খাতে অগ্রাধিকার দিয়েছে সেটা তার ঘোষিত নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বাজেট ব¯ুÍত বৃহৎ ব্যবসাবান্ধব। সামাজিক সুরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ মাত্র ২ শতাংশ  বেড়েছে। ড. আতিউর রহমান বলেছেন, দ্রব্যমূল্যের চাপে থাকা এই বরাদ্দে অবাক করেছে। বিশেষ করে ওএমএস-এ বরাদ্দ ২২৩ কোটি টাকা কমে যাওয়া এবং অতিদরিদ্রের কর্মসৃজন কর্মসূচির বরাদ্দ ৯৫ কোটি টাকা কমে যাওয়াটা এ সময়ের জন্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

বিএনপির এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘এবারের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নেই ঠিকই, কিন্তু যুক্ত হয়েছে তার চেয়েও ভয়ংকর বিষয়। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ বৈধ করা এবং দেশে ফেরত আনার নামে সব  থেকে ১৫ শতাংশ হারে কর ধার্য করে প্রশ্নাতীতভাবে সেগুলো প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে টাকা ফেরত আসার কোনো কারণ নেই। কারণ যারা টাকা বিদেশে পাচার করে তারা ফেরত আনার জন্য টাকা পাচার করে না। এটি করা হয়েছে যাতে কখনো কোনো দেশ যদি এমন টাকা পাচারকারীদের ধরপাকড় শুরু করে তখন যেন তারা নিরাপদে টাকা দেশে আনতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, টাকা ফেরত আনার জন্য নয়, পাচারকারীদের নিশ্চয়তার জন্যই এ পদক্ষেপ। নিশ্চতভাবেই এ পদক্ষেপ আরও অনেককে টাকা পাচারে উৎসাহিত করবে। বাংলাদেশ খুব সতর্ক না হলে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হতে পারে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ বিপৎসীমা পার হয়ে গেছে। তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ থেকে বড় অঙ্কের টাকা আমদানির নামে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পাচার হয়েছে। নির্বাচন এলেই এ দেশে টাকা পাচার বাড়ে, এটি গ্লোবাল ফাইন্যান্স ইন্টেগ্রিটির রিপোর্ট। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে টাকা পাচার ডাবল হয়ে গিয়ে ১ লাখ কোটি টাকা ওই এক বছরেই পাচার হয়েছিল। ২০১৫ সাল থেকে সরকার জাতিসংঘে আমদানি-রপ্তানির তথ্য দেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। এ তথ্য লুকানোর চেষ্টা প্রমাণ করে সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ লোকজন এ পাচারের সঙ্গে জড়িত।

সর্বশেষ খবর