বুধবার, ২২ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

ইসির সংলাপে যায়নি বিএনপিসহ পাঁচ দল

ইভিএম নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে : সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন কমিশনের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) দেখার আমন্ত্রণে সারা দেয়নি বিএনপিসহ পাঁচ রাজনৈতিক দল। গতকাল ইভিএম দেখতে ১৩ নিবন্ধিত দলকে আমন্ত্রণ জানায় ইসি। উপস্থিত হয়েছিল আট দল। ইসির আলোচনায় অংশ নিয়ে দলগুলো আগামী সংসদ নির্বাচনে আংশিকভাবে ইভিএম ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এ ছাড়া সংলাপে অনেকে ইভিএমে ভোটার ভেরিয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল বা ভিভিপিএটি যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন। এ ব্যবস্থায় একজন ভোটার ভোট দেওয়ার পর একটি কাগজ (প্রিন্ট করা) বেরিয়ে আসে। এতে ভোটার কোন প্রতীকে ভোট দিয়েছেন, তা দেখতে পারেন। আবার ঘরে বসে ভোটদান পদ্ধতি তথা অনলাইন ভোটিং সিস্টেম চালুর পরামর্শ এসেছে সংলাপে।

এদিকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আছে বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইস) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, আমরা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আমরা কিন্তু আপনাদের মতামত শুনছি। আপনাদের মতামতকে মূল্য দিচ্ছি। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইভিএম যাচাই নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার সংলাপে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মত বিনিময় সভার আয়োজন করছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ইসি। দ্বিতীয় দফায় ১৩টি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও আটটি রাজনৈতিক দল ইসির ডাকে সাড়া দেয়। তবে নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণ উপেক্ষা করে বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল বৈঠকে অংশ নেয়নি। ইতোমধ্যে দুই দফা সংলাপে ২৬ দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও উপস্থিত হয়েছে ১৮টি দল। এরপরেও আগামী ২৮ তারিখ আরও ১৩ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসবে ইসি। সংলাপে সিইসি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা ও মো. আলমগীর। এ ছাড়া ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক এনআইডি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সুলতানুজ্জামান মোহাম্মদ সালেহ উদ্দিন, সাবেক এনআইডি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ইভিএম আমার ভোট আপনি, আর আপনার ভোট আমি এটা একেবারেই অসম্ভব। রিসেন্টলি যে নির্বাচন?গুলো হয়েছে, আমরা কিন্তু কোনো সেন্টার থেকে কোনো এলিগেশন পাইনি যে, এটার (ইভিএম) অপব্যবহার হয়েছে। আপনারা টিভিতে দেখেছেন যে, দুয়েকজনের হাত মিলছিল না। সে বাসায় গিয়ে ধুয়ে আসার পরে আবার যখন আঙুলের ছাপ দিল, তখন কিন্তু আইডেন্টিফাই হয়েছে। যন্ত্রের কিছু কিছু সমস্যা হতে পারে। ব্যালটে যেমন একজনের জায়গায় ১০০টা (ভোট) দেওয়া হতে পারে, এখানে একটা জিনিস হাত না মিলতে পারে। কিন্তু আমার ভোট আপনি, আর আপনার ভোট আমি এটা একেবারেই অসম্ভব। তবে তিনি বলেন, ইভিএমে ভোটার ভেরিয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল চালু করা আইনি জটিলতা রয়েছে। সিইসি বলেন, ব্যালটে আমার নিজেরও অভিজ্ঞতা আছে কীভাবে ভোট কেন্দ্র দখল করে এক ঘণ্টায় দু-তিন শ সিল মেরে ভরাট করেছে। আপনারা পাশে থেকেও তো ওটা বন্ধ করতে পারেন নাই। সেই দিক থেকে ইভিএমে যদি কোনো দোষত্রুটি থেকে থাকে, আমি ইভিএম বিশেষজ্ঞ না, তার পরেও আমি এ পর্যন্ত যতটুকু ইভিএম দেখেছি ইতিবাচক দিকগুলো অনেক বেশি। ইভিএম (ফলাফল) আপনারা আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন।

সিইসি বলেন, ইভিএমের ওপর যেহেতু আপনাদের পুরোপুরি আস্থা আসছে না। আমরা আজকের আলোচনাটা আয়োজন করেছিলাম ব্যাপক কনসাল্টেশনের জন্য। ১৩টি দলকে ডেকেছি, এর আগে ১৩টি দলকে ডেকেছিলাম। ১৩টি দল বোধ হয় আসেনি, ৯-১০টি এসেছিল। আমরা জানি ইভিএম নিয়ে আপনাদের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আছে। আমরা কিন্তু আপনাদের মতামত শুনছি। আপনাদের মতামতকে মূল্য দিচ্ছি। এরপর আরও ১৩টি দল আসবে। উনাদের সঙ্গেও আমরা এভাবে মতবিনিময় করব। আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমরা সব দলের মতামত না দিয়ে সিদ্ধান্ত নেব না। তিনি বলেন, তাদের প্রত্যেককে আমরা আমন্ত্রণ করেছি। আমরা আমাদের দিক থেকে শতভাগ সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করব। আমরা যারা কমিশনে আছি- তারা সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কোনো কাজ করব না, সরকারও চাইবে না আমরা আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করি। সিইসি বলেন, আমাদের ওপর যদি আপনারা ডিপেন্ড করেন, তাহলে কিন্তু ইলেকশনটা সুন্দর হবে না। আপনাদের দায়িত্ব আরও অনেক বেশি। আপনারা ফিল্ডে থাকেন, আমি কয়টা সেন্টারে যাব সিইসি হয়ে? আমি কি লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারব? পারব না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর