শিরোনাম
শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যার ১৯ বছর পর গ্রেফতার সিরাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে হত্যায় অভিযুক্ত স্বামী সিরাজুল ইসলামকে (৪০) প্রায় ১৯ বছর পর গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা জুলেখা বেগম (১৯) হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন তিনি। বুধবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪-এর একটি দল নারায়ণগঞ্জের চরসৈয়দপুরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে- সিরাজ ও জুলেখার ২০০২ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর সিরাজ জুলেখাকে প্রায়ই যৌতুকের জন্য নির্যাতন করতে থাকেন। এরই মধ্যে জুলেখা আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে সিরাজ তার প্রতিবেশী মোশাররফের সঙ্গে জুলেখার পরকীয়ার অভিযোগ তুলে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এর অংশ হিসেবে ২০০৩ সালে জুলেখার গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে নির্মমভাবে হত্যা করেন। পরে লাশ নদীর পাড়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক বলেন, ২০০২ সালে বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে বেশকিছু নগদ অর্থ, গয়না ও আসবাবপত্র দেন জুলেখার বাবা। বিয়ের পর থেকে সিরাজ আরও যৌতুকের জন্য জুলেখাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন। আর যৌতুক না দিতে পারলে তালাক দেওয়ার ভয়ভীতি দেখান। একপর্যায়ে প্রতিবেশী মোশাররফের সঙ্গে জুলেখার পরকীয়ার অভিযোগ তুলে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন। অতিষ্ঠ হয়ে জুলেখার বাবা, ভাইসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠক হয়। সেখানে জুলেখার কোনো দোষ না পেয়ে এবং পরকীয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় সালিশে সিরাজকে গালিগালাজ করা হয়। একই সঙ্গে জুলেখাকে নির্যাতন না করার জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর সিরাজ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে জুলেখাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

২০০৩ সালের ৫ ডিসেম্বর জুলেখাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি সিংগাইরের উত্তর জামশা গ্রামে নিয়ে যান। তিন দিন পর জুলেখাকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে মানিকগঞ্জ শহরে নিয়ে যান এবং বিভিন্ন অজুহাতে কালক্ষেপণ করে গভীর রাতে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে মানিকগঞ্জ শহর ছাড়েন। জুলেখাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি না গিয়ে কৌশলে শ্বশুরবাড়ির নিকটবর্তী কালীগঙ্গা নদীর পাড়ে নির্জন স্থানে নিয়ে যান।

মোজাম্মেল হক বলেন, সেখানে সিরাজ তার ব্যাগে থাকা গামছা বের করে জুলেখার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে নির্মমভাবে হত্যা করে নদীর পাড়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। ৭ ডিসেম্বর থানা পুলিশ জুলেখার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠায়। একই দিন জুলেখার বাবা আবদুল জলিল বাদী হয়ে সিংগাইর থানায় সিরাজ, তার বড় ভাই রফিক, মা রাবেয়া বেগম, খালু শামসুল, চাচা ফাইজুদ্দিন, তাইজুদ্দিন, মামা আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত শেষে সিরাজ, রফিক, রাবেয়া, শামসুলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন। জুলেখাকে হত্যায় সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে ২০০৫ সালের শেষের দিকে মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সিরাজের মৃত্যুদণ্ড হয়। রফিক, রাবেয়া ও শামসুলকে খালাস দেন বিচারক। ঘটনার পর থেকে সিরাজ প্রায় ১৯ বছর পলাতক ছিলেন।

 

সর্বশেষ খবর