শনিবার, ২৫ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

শেরপুরে স্ত্রী শাশুড়ি ও শ্বশুরকে কুপিয়ে হত্যা

শেরপুর প্রতিনিধি

শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের খোশালপুর পুটল গ্রামে  স্ত্রী, শাশুড়ি ও জেঠা শ্বশুরকে কুপিয়ে হত্যা করেছে মিন্টু মিয়া (৩৫) নামে এক যুবক। এ ঘটনায় আরও তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতরা হলেন-  মিন্টু মিয়ার স্ত্রী মনিরা বেগম (৩০), শাশুড়ি শেফালী বেগম (৫০) ও জেঠা শ্বশুর মাহমুদ হাজি (৬২)। আহতরা হলেন- স্ত্রীর স্বজন বাচ্চুনী বেগম (৫২), মনু মিয়া (৭৫) ও মিন্টুর শ্যালক শাহাদাৎ হোসেন (৪০)।

ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং শেষরাত পর্যন্ত অবস্থান করেন জেলার পুলিশ সুপার চৌধুরী নাহিদ হাসান। আসামিকে ধরতে জেলা পুলিশের সব ইউনিটকে নির্দেশ দেন। ওই অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পুলিশ সুপার আফরোজা নাজনীন বলেছেন, রাতব্যাপী পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে নৃশংস এ হত্যাকারীকে ধরা গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। লাশ ময়নাতদন্তের কাজ চলছে। আইনগত সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্যমতে, এ নৃশংস হত্যার পর ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ গজ দূরে গাছের ডালে সারা রাত বসেছিলেন অভিযুক্ত মিন্টু মিয়া। ঘাতক যেন পালাতে না পারে সে জন্য সারা রাত পুলিশ এলাকা কর্ডন করে রাখে। শ্রীবরদী থেকে বের হওয়ার সব রাস্তায় ছিল পুলিশের কড়া নজরদারি। পাশেই ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় পুলিশ ও বিজিবি ছিল তৎপর। পুলিশ ঘাতকের মোবাইলে ফোন দিয়ে জানতে পারে সে ঘটনাস্থলের আশপাশেই আছে। গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশ তাকে একটি গাছে সাদা হাফপ্যান্ট পরা অবস্থায় দেখতে পায়। পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন, এ হত্যার কারণ দাম্পত্য কলহ। মিন্টুর নিঃসঙ্গতা এবং সদ্য শ্যালকের বিয়েতে মিন্টুকে দাওয়াত না দেওয়া। সংসারে অভাব-অনটন ও স্ত্রীর অলসতা নিয়ে বিয়ের পর থেকেই কলহ চলে আসছিল। মিন্টু স্থানীয়ভাবে ছাগল ক্রয়-বিক্রয়, কবুতর পালন ও মাঝে মাঝে কৃষি শ্রমিকের কাজ করত। টাকা চাইলে, কাজকর্মে সামান্য ত্রুটি হলেই স্ত্রীকে মারধর করত। এ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার বিচার সালিশ হয়েছে কিন্তু কোনো পরিবর্তন আসেনি।

স্থানীয়রা জানান, গেরামারা গ্রামের মৃত মাইমদ্দিনের ছেলে মিন্টুর সঙ্গে বিয়ে হয় মনিরার। তাদের ঘরে এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। গেল রোজায় ঝগড়া করে স্ত্রী মনিরা বাবার বাড়ি চলে আসে। তারপর আর স্বামীর বাড়ি যায়নি। সপ্তাহখানেক আগে মিন্টুর শ্যালক সাহাদাতের বিয়ে হয়। ওই বিয়েতে শ্বশুরবাড়ির দাওয়াত পায়নি মিন্টু। আগের বিবাদ ও বিয়েতে দাওয়াত না পাওয়ায় রাগে-ক্ষোভে ধারালো রাম দা ও চাকু নিয়ে বোরকা পরে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে মিন্টু মিয়া স্ত্রীর বাড়িতে ঢোকে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রথমে শ্যালককে কোপায়। শাশুড়ি ও জেঠা শ্বশুরসহ অন্যরা এগিয়ে এলে সবাইকে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। এসব দেখে ভয়ে স্ত্রী মনিরা পাশের গোয়ালঘরে আশ্রয় নিলে সেখানে তাকে কোপায় মিন্টু মিয়া। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যান মনিরা বেগম। শাশুড়ি ও জেঠা শ্বশুর কিছুক্ষণ পর মারা যান।

সূত্র জানিয়েছে, মিন্টুর ঘরে সৎ মা রয়েছে। নিজের মা বছর পাঁচেক আগে মারা গেছেন। সৎ মায়ের দিকে তিনজন ভাইবোন রয়েছে। নিজের মায়ের দিকে মিন্টুর আর কোনো ভাইবোন নেই। বাবার সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। প্রায় সময়ই সৎ ভাইবোনেরা বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলত। স্ত্রী-পুত্র কাছে নেই। নিজ বাড়িতে শান্তি নেই। সব মিলিয়ে মানসিকভাবে মন্টু একেবারেই ভেঙে পড়েছিল, বিষিয়ে উঠেছিল জীবন।

সর্বশেষ খবর