সোমবার, ২৭ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

পি কের সহযোগীর স্ত্রীকে নোটিস

কলকাতায় তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ

কলকাতা প্রতিনিধি

পি কের সহযোগীর স্ত্রীকে নোটিস

বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইতোমধ্যে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হাতে গ্রেফতার হয়েছেন পি কে হালদার। এবার তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগে পিকের অন্যতম সহযোগী স্বপন মৈত্রের স্ত্রী পূর্ণিমা মৈত্রকে নোটিস ধরাল ইডি। ইডির তদন্ত কর্মকর্তা অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর পদমর্যাদার বিজয় কুমারের স্বাক্ষর করা একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে                পূর্ণিমাকে। চিঠিতে সব নথি নিয়ে আগামী ২৯ জুন সকাল সাড়ে ১০টায় ইডির আঞ্চলিক কার্যালয় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে তাকে দেখা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট, ২০০২ আইনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে ইডি। ১৩ ও ১৪ মে অশোকনগরসহ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালায় ইডি। এরপর ১৪ মে পি কে হালদারের সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয় তার ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার ও আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদারকে। ১৩ মে অভিযান চালানো হয় অশোকনগরের ১৬২/৮ দক্ষিণপল্লী ঠিকানায় অবস্থিত পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী সুকুমার মৃধার বাড়িতেও। ওই বাড়ির আলমারি ও ট্রাঙ্ক থেকে বেশ কিছু দলিল ও নথি উদ্ধার করা হয়, যা দেখে হতবাক হন তদন্ত কর্মকর্তারা। তাদের প্রাথমিক অনুমান, সুকুমারের বিশাল সম্পত্তির পেছনে রয়েছে কোনো বেআইনি লেনদেন।

স্বাভাবিকভাবেই প্রাথমিক তদন্তে আর্থিক অসঙ্গতির সন্ধান মেলায় ওই দিন রাতেই অভিযুক্ত সুকুমার মৃধার বাড়ি সিলগালা করে দেন ইডির কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে বাড়ির প্রধান গেটে তদন্তকারীদের তরফে একটি নোটিসও লাগিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিনই অশোকনগরের ৫২৭/৮ নম্বর ঠিকানার বাসিন্দা পি কে হালদারের (প্রশান্ত কুমার হালদার) আরও দুই সহযোগী স্বপন মৈত্র ও তার ভাই উত্তম মৈত্রের বাসায়ও অভিযান চালানো হয়। সে সময় স্বপন মৈত্রের স্ত্রী পূর্ণিমা জানান, কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে তারা এ দেশের পাসপোর্ট, রেশন কার্ড, ভোটার আইডেনটিটি কার্ডসহ বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহ করেছেন। পূর্ণিমা মৈত্রের দাবি, তার স্বামী স্বপন মৈত্র মাছের ব্যবসা করেন এবং কোনোরকম অবৈধ কাজকর্মের সঙ্গে তারা যুক্ত নন। যদিও তাদের বিলাসবহুল বাড়ি এবং আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি দেখে পূর্ণিমা মৈত্রের ওপরও নজর ছিল ইডির তদন্ত কর্মকর্তাদের। পি কে হালদারসহ গ্রেফতার ছয়জনের বিরুদ্ধেই প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট বা অর্থপাচার সম্পর্কিত আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে অর্থপাচারের ক্ষেত্রে পূর্ণিমার আদৌ কোনো ভূমিকা ছিল কি না, থাকলেও তা কোন পর্যায়ের- সে সবই খতিয়ে দেখছিলেন ইডির কর্মকর্তারা। কিন্তু এরই মধ্যে স্বপনের পরিবারের বাকি সদস্যরা অশোকনগরের বাড়ি তালাবদ্ধ করে অন্যত্র চলে গেছেন। এমনও অভিযোগ উঠেছে, তদন্তকারীদের কোনোরকম সহযোগিতা তারা করছেন না। এর পরই শনিবার তদন্তকারীদের একটি দল অশোকনগরে এসে স্বপনের তালাবদ্ধ বাড়ির বাইরের দেয়ালে একটি নোটিস টাঙিয়ে দিয়ে যায়, যেখানে স্বপনের স্ত্রী পূর্ণিমা মৈত্রের উদ্দেশে লেখা রয়েছে, আগামী ২৯ জুন সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে ইডির আঞ্চলিক দফতর সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে যেন তিনি দেখা করেন। সে সময় তার পাসপোর্ট, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, ব্যাংকের পাসবই, ইনকাম ট্যাক্স সম্পর্কিত নথি, বারাসাতে থাকা তাদের একটি ফ্ল্যাটের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ তার নামে এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা যাবতীয় সম্পত্তির হিসাব সম্পর্কিত নথি নিয়ে পূর্ণিমাকে দেখা করতে বলা হয়। যদিও রবিবার স্বপন মৈত্রের আশোকনগরের বাড়ির সামনে গেলে তার প্রতিবেশীরা কেউই এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি। ইতোমধ্যে আদালতের তরফে কয়েক দফায় ইডি রিমান্ড নিয়েছে অভিযুক্তদের। আর জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়ার পর পি কে হালদারসহ ছয় অভিযুক্তের প্রত্যেকেই কারাগারে বন্দি রয়েছেন। অভিযুক্তদের জেরা করে ইতোমধ্যে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। প্রচুর সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গেছে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের একাধিক শহরে। এখনো পর্যন্ত ৮৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছেন ইডির তদন্ত কর্মকর্তারা। উল্লেখ্য, ১৪ দিনের জেল হেফাজত শেষে ৫ জুলাই অভিযুক্তদের ফের কলকাতার নগর দায়রা আদালতে তোলা হবে।

সর্বশেষ খবর