শিরোনাম
শনিবার, ২ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
হোলি আর্টিজান হামলা

ফুলেল শ্রদ্ধায় নিহতদের স্মরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফুলেল শ্রদ্ধায় নিহতদের স্মরণ

রাজধানীর গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় নিহতদের স্মরণ করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার, র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি), পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এসবি (বিশেষ শাখা) প্রধান মনিরুল ইসলাম, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তা এবং নিহতদের স্বজনরা। হোলি আর্টিজানে হামলার সময় জিম্মিদের উদ্ধারে অভিযানে নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার স্মরণে নির্মিত ‘দীপ্ত শপথ’ ভাস্কর্যে গতকাল শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গি দমনে আমরা আর তৃপ্তিতে ভুগি না। কারণ এখনো জঙ্গি তৎপরতা মাঝে মাঝে চোখে পড়ছে। জঙ্গিদের সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভিটিসহ সব বিষয়ে আমরা মনিটরিং করছি।

প্রসঙ্গত, হোলি আর্টিজান হামলায় তৎকালীন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন নিহত হন। তাদের স্মরণে নির্মাণাধীন গুলশান মডেল থানার সামনে দীপ্ত শপথ নামে এই দুই অফিসারের ভাস্কর্য বানানো হয়। প্রতি বছর হোলি আর্টিজানের হামলার বার্ষিকীতে দীপ্ত শপথ ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় তাদের স্মরণে। এখানে র‌্যাব ডিজিও নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এদিকে গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের পাঁচ নম্বর প্লটে যেখানে হোলি আর্টিজান বেকারি ছিল, ওই ভবনের সামনে হামলায় নিহতদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। দীপ্ত শপথ ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ডিএমপি কমিশনার বলেন, বিভিন্ন সময় এন্টি টেররিজম ইউনিট-সিটিটিসিসহ বিভিন্ন মেট্রো ও জেলা পুলিশ অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের গ্রেফতার করছে। জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক নস্যাৎ করে দেওয়া হচ্ছে। আর বাংলাদেশে হরকাতুল জিহাদের মধ্য দিয়ে জেএমবির উত্থান হয়। পরে ইরাকে যখন আইএসের উৎপাত শুরু হয়, তখন বাংলাদেশের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য বাংলাদেশের কিছু মানুষ তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বে হোলি আর্টিজানে হামলা করে। তিনি বলেন, হোলি আর্টিজানের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পর থেকেই বাংলাদেশ পুলিশ জঙ্গি দমনে নতুন একটি ইউনিট খোলে। এই ইউনিটের অধিকাংশ সদস্যই ইউএস সরকারের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন। এ ছাড়া ইউএস সরকারের পক্ষ থেকে ইকুইপমেন্ট পাওয়ার পর চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার ও খুলনা বিভাগের যেসব জায়গায় জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে। সেই জায়গার জঙ্গিদের আস্তানা তছনছ করে দেওয়া হয়েছে।

শফিকুল ইসলাম বলেন, হোলি আর্টিজানের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পরে যদি আমরা ঘুরে দাঁড়াতে না পারতাম, তাহলে আজ যে পদ্মা সেতু দেখছি, মেট্রোরেল দেখছি, তার কোনো কিছুই বাস্তবায়ন করতে পারতাম না। কারণ কোনো বিদেশি টেকনিশিয়ান-ইঞ্জিনিয়ার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে আসতেন না।

এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ দমনে যে ভূমিকা দেখিয়েছে তা সত্যি প্রশংসনীয়।

হোলি আর্টিজানে হামলার সময় জিম্মিদের উদ্ধারে অভিযানে নিহত বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিনের স্ত্রী রেমকিন বলেন, তার মৃত্যুর পর থেকে এক সেকেন্ডের জন্য আমি ভুলে যাইনি। প্রতিটি মুহূর্ত আমার স্বামীকে মিস করি। আমার স্বামী দেশ ও দেশের মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন- এই একটা বিষয় ভেবেই মনে শান্তি পাই। এ ছাড়া তিনি সব সময় আমার মনের ভিতরেই রয়েছেন। এ সময় সঙ্গে তার ছেলে-মেয়েও উপস্থিত ছিল।

গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে প্রথমেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। তারপর ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, ছয় বছর আগের হামলায় সাতজন জাপানি নাগরিক নিহত হয়েছেন, যারা মেট্রোরেল লাইন ওয়ান প্রকল্পের গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। আমরা কখনই তাদের ভুলব না। বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। সেপ্টেম্বরে লাইন ১ এর কাজ শুরু হবে। এ কাজ চালিয়ে যাওয়া ও শেষ করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, এটা খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। বাংলাদেশ, ভারতসহ এ ঘটনায় যারা ভুক্তভোগী হয়েছেন, তাদের সবাইকে স্মরণ করছি। বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে আমরা খুবই ব্যথিত। এটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটছে, কীভাবে ঘটছে। একসঙ্গে কাজ করে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর