সোমবার, ৪ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
সামাজিক অপরাধের শেষ নেই

আড়াইহাজারে গলা কেটে হত্যা মা-ছেলেকে

নারায়ণগঞ্জ ও আড়াইহাজার প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে একই বাড়ির পৃথক দুটি কক্ষ থেকে মা  রাজিয়া সুলতানা কাকলী (৪২) ও তার আট বছরের শিশু তালহা কাজীর গলা কাটা রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের উজান গোবিন্দী পশ্চিমপাড়া এলাকার বসতবাড়ি থেকে ওই লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়। নিহত রাজিয়া সুলতানা কাকলী উজান গোবিন্দী পশ্চিমপাড়া এলাকার মৃত আউয়াল নবীর স্ত্রী। আউয়াল নবী দুই বছর আগে মারা যান। এরপর থেকে রাজিয়া সুলতানা স্বামী আউয়াল নবীর বসতবাড়িতে একমাত্র ছেলে তালহাকে নিয়ে  বসবাস করতেন। জোড়া খুনের এ চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ইতোমধ্যে আড়াইহাজার থানা পুলিশ, সিআইডি ও পিবিআইর পৃথক পৃথক টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আইনশৃঙ্খলা তদন্ত টিমগুলো খুনের রহস্য উদঘাটনে কয়েকটি সূত্র ধরে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বাড়িতে লুটপাট করতে এসে কোনো দুর্বত্ত গ্রুপ এ হত্যাকা  ঘটিয়েছে। তবে ঘটনার নেপথ্যে কী রয়েছে তা তদন্তে কাজ শুরু করেছে গোয়েন্দা টিম। বিশেষ করে এটি যদি ডাকাতি বা লুটপাটের মতো ঘটনা ঘটত সেক্ষেত্রে খুনিরা লুটপাট ও ডাকাতি করেই চলে যেতে পারত। কিন্তু মা ও ছেলেকে হত্যার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। হতে পারে খুনি পূর্ব পরিচিত। খুনিদের চিনে ফেলায় হয়তো খুনিরা মা ও ছেলেকে হত্যা করেছে। এ ছাড়া নিহত রাজিয়া সুলতানা কাকলী ও তার ছেলে মো. তালহা কাজী (৮) একই বিছানায় ঘুমাতেন। তবে লাশ উদ্ধারের সময় মা ও ছেলের লাশ আলাদা দুটি কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাড়িটি পরিদর্শন শেষে পুলিশ জানায়, মা রাজিয়ার লাশের পাশেই একটি বাটিতে কাঁঠাল ও কাঁঠালের বিচি পড়ে ছিল। এর পাশেই ছিল পানির বোতল। এদিকে আরেক কক্ষে নিহত ছেলে তালহার লাশের পাশে থাকা স্টিলের আলমারিটি চাবি দিয়ে খোলা অবস্থায় পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। তবে  আমরা খুঁজে দেখার চেষ্টা করছি নানা তথ্য-উপাত্ত। যে কাঁঠাল পাওয়া গেছে তা কি মা রাজিয়া সুলতানা বাইরে থেকে কিনে এনেছেন, না অন্য কেউ বাড়িতে দিয়ে গেছে। ওই কাঁঠালে অচেতন হওয়ার কোনো ওষুধ মেশানো ছিল কি না- এ রকম নানা তথ্য-উপাত্ত পুরো খুনের রহস্য উদঘাটনে তদন্ত দল সব বড়-ছোট সূত্রগুলো যাচাই-বাছাই শুরু করেছে। মূল কথা এখনি খুনের কারণ বা রহস্য বলা যাচ্ছে না। পরিদর্শনে এসে তদন্ত টিমের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আমরা বাড়ির মধ্যে খুনিদের ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। বিশেষ করে মা রাজিয়ার মোবাইল ফোনে কল লিস্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি দেখা হচ্ছে আশপাশে কোনো সিসি ক্যামেরা আছে কি না। থাকলে বাড়িটির  আশপাশে রাস্তায় কারও চলাফেরা খুনের রাতে ছিল কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে।

খুন হওয়া রাজিয়ার বোন ফারহানা সুলতানা বলেন, রাজিয়ার পাশের বাড়িটিতে তার ভাতিজার স্ত্রী জান্নাতুল থাকেন। জান্নাতুলের স্বামী সৌদি প্রবাসী। গতকাল ভোরে জান্নাতুল প্রথম রাজিয়াদের লাশ দেখতে পান। পরে তিনি স্বজনদের বিষয়টি জানান। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশ দুটি উদ্ধার করে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দুটি মানুষকে এভাবে খুন করা কি দরকার ছিল। যদি চুরি বা ডাকাতি করতে খুনিরা এসে থাকে তা করেই চলে যেত। এদিকে দুপুর সোয়া ১টায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি দল ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছে।

এ বিষয়ে আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক জানান, সকালে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ওই নারীর লাশ মেঝেতে পড়ে আছে। পাশের কক্ষের বিছানায় ওই শিশুর লাশ পড়ে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, গতকাল দিবাগত রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা তাদের গলা কেটে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তে পুলিশ কাজ করছে। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান, কয়েকটি বিষয় নিয়ে মা ও ছেলে হত্যার তদন্ত শুরু করেছি। এর মধ্যে খুন হওয়া মায়ের মোবাইল কল লিস্ট পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ ছাড়া জমি সংক্রান্ত বা কারও সঙ্গে শক্রতা ছিল কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত তদন্তে হত্যার কারণ ব্যাখ্যা করার মতো কোনো কিছু পাওয়া যায়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর