সোমবার, ৪ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
বিএসএফের ধাওয়ায় নদীতে নিখোঁজ

৩৬ ঘণ্টা পর ভাই বোনের লাশ উদ্ধার

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

মা-বাবাসহ রাতের আঁধারে সীমান্ত পার হওয়ার সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ধাওয়ায় নদীতে পড়ে নিখোঁজ হয় দুই শিশু। ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর তাদের লাশ উদ্ধার হয়েছে। গতকাল দুপুরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিয়াবাড়ী সীমান্তের ধর্মপুর জিরো লাইনের কাছে ভারতের দিগলাকুরা এলাকার নীলকমল নদী থেকে ভাইবোনের লাশ উদ্ধার করে বিএসএফ ও ভারতীয় পুলিশ। পরে ভারতীয় সাহেবগঞ্জ থানা পুলিশের মাধ্যমে দুই শিশুর লাশ স্থানীয় মর্গে পাঠানো হয়। এ সময় সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

লালমনিরহাট বিজিবি-১৫ ব্যাটালিয়নের কাশিপুর কোম্পানি কমান্ডার কবির হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। উদ্ধার দুই শিশুর নাম পারভীন খাতুন (৮) ও শাকিবুল হাসান (৪)। তারা কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের সরকারটারি গ্রামের রইচ উদ্দিন-সামিনা বেগম দম্পতির সন্তান।

শুক্রবার ভারতের দিল্লি থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেন তারা। এ সময় বিএসএফের ধাওয়ায় নদীতে পড়ে নিখোঁজ হয় পারভীন ও হাসান। অন্ধকার থাকায় তাদের উদ্ধারে ব্যর্থ হন বাবা-মা। প্রায় ১৬ বছর আগে রইচ উদ্দিন ও তার স্ত্রী সামিনা বেগম বাংলাদেশ থেকে সীমান্তপথে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের সুলতানপুরে ইটভাটায় কাজ করতে যান। সেখানেই তাদের দুই সন্তানের জন্ম।

স্থানীয়রা জানান, বিএসএফের ধাওয়ায় নদীতে ডুবে যাওয়া ভাইবোনের লাশ গতকাল সকালে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ভারতের অভ্যন্তরে নীলকমল নদীতে ভেসে ওঠে। লাশ দেখতে পেয়ে বিজিবিকে খবর দেন স্থানীয়রা। তবে নদীর ওই অংশ ভারতীয় ভূখন্ডে হওয়ায় বিজিবি বিষয়টি বিএসএফকে জানায়। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে বিজিবি-বিএসএফের যৌথ টহলে ভারতের কুচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় মর্গে পাঠায়।

বিএসএফের বরাতে বিজিবি জানায়, পরিচয় সংক্রান্ত কাগজপত্র দেওয়া হলে নিহত দুই শিশুর লাশ হস্তান্তরের বিষয়টি বিবেচনা করবে বিএসএফ।

এদিকে দুই সন্তানের মৃত্যুতে রইচ উদ্দিন ও সামিনার পরিবারে শোকের মাতম পড়েছে।

সন্তানদের মরদেহ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে রইচ বলেন, আমরা বাংলাদেশি হলেও শিশুদের জন্ম হয়েছে ভারতে। এ কারণে তাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্বের কাগজপত্র নেই। ফলে দুই সন্তানের লাশ ফিরিয়ে আনতে তিনি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

লালমনিরহাট বিজিবি-১৫ ব্যাটালিয়নের কাশিপুর কোম্পানি কমান্ডার কবির হোসেন বলেন, দুই শিশুর লাশ উদ্ধারের পর বিএসএফ ভারতীয় পুলিশের মাধ্যমে তা ওই দেশের স্থানীয় মর্গে পাঠিয়েছে।

পতাকা বৈঠকের বরাতে বিজিবির এই সদস্য জানান, বিএসএফ জানিয়েছে শিশুদের লাশ এক সপ্তাহ মর্গে থাকবে। তাদের বাংলাদেশি পরিচয়ের কাগজপত্র পাওয়া গেলে হস্তান্তরের বিষয়টি তারা বিবেচনা করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর