বুধবার, ৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

সিলেট সুনামগঞ্জ ও রংপুরে বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট ও রংপুর

সিলেট সুনামগঞ্জ ও রংপুরে বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ

সিলেটের গোলাপগঞ্জে অসহায় বানভাসি মানুষের হাতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে গতকাল ত্রাণ তুলে দেওয়া হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সিলেট, সুনামগঞ্জ ও রংপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ও এখনো পানিবন্দি অবস্থায় থাকা অসহায় লোকজনের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল দিনভর তিন জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দেশের শীর্ষ শিল্পগ্রুপ বসুন্ধরার পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

সিলেট : সিলেটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং এখনো পানিবন্দি অবস্থায় থাকা অসহায় লোকজনের মধ্যে ত্রাণ  বিতরণ অব্যাহত রেখেছে দেশের শীর্ষ শিল্পগ্রুপ বসুন্ধরা। বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ অসহায় মানুষের হাতে পৌঁছে দেয় জেলা পুলিশ। গতকাল জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ, সদর ও বিশ্বনাথসহ বিভিন্ন থানা এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেন সংশ্লিষ্ট থানার ওসিরা। তারা নৌকায় করে পানিবন্দি লোকজনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় বন্যার্ত লোকদের জড়ো করে সুশৃঙ্খলভাবে বিতরণ করা হয় ত্রাণ। বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণের প্যাকেট হাতে পেয়ে জকিগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের গণিপুর গ্রামের বাসিন্দা মঈন মিয়া বলেন, ‘বন্যার পানি নামলেও এলাকায় কোনো কাজ নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে খুবই অসহায়ত্বের মধ্যে আছি। এর মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের এই ত্রাণ যেন আমাদের জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছে।’ সিলেটের পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ভয়াবহ বন্যায় সিলেটবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের বৃহত্তম শিল্পগ্রুপ বসুন্ধরা। তাদের এমন মানবিক কাজ সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। বসুন্ধরার মতো এভাবে অন্যান্য শিল্পগ্রুপ এগিয়ে এলে বানভাসি মানুষের অনেক কষ্ট কম হতো।

প্রসঙ্গত, ২৯ মে থেকে এখন পর্যন্ত সিলেট জেলায় বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে ২৪ হাজার প্যাকেট ত্রাণ পাঠানো হয়। জেলা পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। সুনামগঞ্জেও সমসংখ্যক প্যাকেট ত্রাণ পাঠানো হয়েছে।

রংপুর : রংপুরে বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ সহায়তা পেয়ে খুশি নদী ভাঙনে বসতহারা মানুষ। ঈদুল আজহার আগে এই সহায়তা পেয়ে আবেগে আপ্লুত তারা। গতকাল সকালে গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের মহীপুর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এই ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা হয়। বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান এবং পরিচালক ইয়াশা সোবহানের উদ্যোগে এ খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড। সহায়তা নিতে আসা জাহেদুল ইসলামের (৬০) এবারের বন্যায় বসতভিটা তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তিনি মা, স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। সহায়তা পেয়ে তিনি বলেন, ‘ঈদের আগত এই ত্রাণ পায়া কি যে উপকার হইল তা ভাষায় প্রকাশ করবার পারিম না।’ তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ বসুন্ধরা গ্রুপের সবার জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করে বলেন, ‘আল্লাহ যেন সব সময় বসুন্ধরা গ্রুপের মালিককে গরিবের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ দেন।’ তার মতো এবার তিস্তা নদীতে বসতভিটা হারিয়েছেন ফয়সাল মিয়া (৬৫), প্রতিবন্ধী আফজাল হোসেন (৫৫), মতিবার (৬০) ও পচা মিয়া (৫৮)। নদী ভাঙনের শিকার হয়ে তারা রাস্তার পাশে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। বসুন্ধরার সহায়তা পেয়ে তারা দারুণ খুশি। তারা বলেন, ঈদের আগে এই সহায়তা তাদের পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবে। মহীপুরের আকালি বেগম, রাহেলা খাতুন, ফাতেমা বেগমসহ আরও অনেকেই বন্যার কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছিলেন। বসুন্ধরার সহায়তা তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। তারা বলেন, এই খাদ্য সহায়তা তাদের পরিবারের ছেলেমেয়েদের পেট ভরাবে। ঈদের দিন কী খাবে এ নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় ছিলেন। এই সহায়তায় তাদের অনেক উপকার হলো। তারা বলেন, ‘আমাদের মতো নদীভাঙা মানুষকে খুঁজে বের করে বসুন্ধরা গ্রুপ সহায়তা দিয়েছে। এই সহায়তায় কয়েক দিনের খাবারের চিন্তা দূর হয়েছে।’

বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেডের ম্যানেজার (নর্থবেঙ্গল) খায়রুল ইসলাম, রংপুরের এরিয়া ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম টুটুল ও এরিয়া ম্যানেজার হাসান আলী। এ সময় লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রফিকুল ইসলাম, ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আবদুল মন্নাফসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। সহায়তা হিসেবে চাল, ডাল, বিস্কুট, চিড়া, গুড়, লবণ, সাবান ও খাবার স্যালাইন দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর