বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

দিশাহারা বন্যাদুর্গত মানুষ

প্রতিদিন ডেস্ক

দিশাহারা বন্যাদুর্গত মানুষ

কুড়িগ্রামে থামছে না ভাঙন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বন্যাদুর্গত প্রায় সব এলাকায়ই নদ-নদীর পানি নামতে শুরু করেছে। তবে পানি যত নামছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্য তত ফুটে উঠছে। পানি নামলেও কুড়িগ্রামে তীব্র ভাঙন চলছে, সিরাজগঞ্জে ফসল হারিয়ে কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে এবং নেত্রকোনায় সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া মানুষ এখন কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়েছে। তবে পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ রয়েছে। দুর্র্গত এলাকায় খাদ্য সংকটের পাশাপাশি পানি বাহিত রোগ বেড়েছে। উঁচু স্থানে ও বাঁধে আশ্রয় নেওয়াদের কেউ কেউ ঘরেও ফিরতে শুরু করেছেন।

নদ-নদীর পানি কমলেও এখনো ভাটিতে ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বেশি থাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত রয়েছে। চলতি বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষক, যাদের প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমির নানা ফসল পানিতে ডুবে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। অপরদিকে, তিস্তা ও ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীপারের মানুষজন। ঘরবাড়ি, বসতভিটা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে নদী ভাঙনের হুমকিতে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্র্ড জানায়, তিস্তা ও ধরলার ২২টি পয়েন্টে নদী ভাঙলেও তারা বিভিন্ন পয়েন্টে বালুর বস্তা ফেলাসহ বিভিন্ন উপায়ে প্রতিরোধে তারা কাজ করছেন।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমায় বসতবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন বন্যাকবলিতরা। তাদের বসতভিটার নিম্নাংশ পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বসতভিটা দেখে মেরামত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন বন্যাকবলিতরা। স্যাঁতসেঁতে ও কাদাযুক্ত বসতবাড়িতে রোগ জীবাণুর ভয়ে শঙ্কিত তারা। অন্যদিকে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত ফসল দেখে কৃষকরা হাপিত্তেশ করছেন। কীভাবে ক্ষতি পোষাবেন- তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। চলতি বন্যায় জেলার দেড় শ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় চলাচলেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সরঞ্জামাদি নষ্ট হওয়ায় তাঁতিরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়াও পানি কমায় যমুনার অরক্ষিত অঞ্চলে ভাঙন শুরু হয়েছে। চলতি বন্যায় প্রায় ১ হাজার ২০০ বসতভিটা সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। জায়গাজমি না থাকায় পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে, কেউবা ওয়াপদার ওপর ঝুপড়ি তুলে বসবাস করছেন। সব মিলিয়ে বন্যাকবলিতরা এবার নানা সংকটে রয়েছেন।

বগুড়া : গতকাল বিকাল ৩টার পর হতে যমুনার পানি কমতে শুরু করেছে। গতকাল দুপুরে পানি কমে বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

নেত্রকোনা : নেত্রকোনার সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। যে নদীর পানি বেড়ে নেত্রকোনার কলমাকান্দায় প্রথম বন্যা শুরু হয় সেই উদ্বাখালী নদীর পানি গতকাল সন্ধ্যার তথ্য অনুযায়ী, বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। খালিয়াজুরীর ধনু নদীর পানি নেমেছে ২৯ সেন্টিমিটার নিচে। কংশ নদীর পানি ১২৪ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে বিপৎসীমার। ফলে বন্যাকবলিত জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামগুলো থেকে পানি নামছে। তবে হাওরের পানি না কমায় এখনো কিছু কিছু এলাকার পানি একেবারে সরেনি। অনেকেরই বাড়ি-ঘর ভেঙে তারা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

দুর্গাপুর উপজেলার চণ্ডীগড় ইউনিয়নের মৌ গ্রামের বজলু মিয়া বাড়ি হারিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। এমন ঘর ভাঙা অবস্থা নেত্রকোনা সদর উপজেলার সিংহের বাংলা ইউনিয়নের ভদ্রপাড়া গ্রামের ফরিদের। গাছ কাটা শ্রমিকের কাজ করেন ফরিদ।

কিন্তু ভাঙা ঘর মেরামত করার ক্ষমতা তার নেই। সামনে ঈদুল আজহায় ঈদ উদযাপন করবেন নাকি নিজেদের আশ্রয়স্থল ঘরে ফিরবেন এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলা ঘুরে দেখা হচ্ছে এবং মানুষের ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে কাজ চলছে।

লালমনিরহাট : পানির স্রোতে জেলার ৫টি উপজেলার ১৭টি পয়েন্টে তিস্তায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার ৩৫টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান। মহিষখোচা ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী জানান, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, তিস্তা নদীর পানি কমে যাওয়ায় প্রবল স্রোতে গড্ডিমারি পাউবোর বাঁধ, সির্ন্দুনার বালুর বাঁধ, মহিষখোচা ইউনিয়নের সলেডি স্পার-২ সংলগ্ন এলাকা ও গোবরধন ৭ নম্বর ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু অংশে আঘাত হানছে। তিস্তা-ধরলার চরে পানিবন্দি মানুষগুলোর মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত রোগ। অধিকাংশ চরেই পৌঁছেনি ত্রাণ কিংবা সাহায্য সহযোগিতা, দুর্ভোগে পড়েছেন ভানভাসি মানুষ। সরকারিভাবে যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

সর্বশেষ খবর