বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

নিজ ফ্ল্যাটে অর্ধগলিত লাশ চিকিৎসকের

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বড় মগবাজারের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব ডা. ইকবাল উদ্দিন আহমেদকে ৫/৬ দিন ধরে ফোনে পাচ্ছিলেন না স্বজনরা। তার স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে বর্তমানে কানাডায় রয়েছেন। মেয়ের স্বামী আরিফুর রহমান থাকেন মালিবাগ। আরিফুরও তার শ্বশুর ইকবালকে ফোনে পাচ্ছিলেন না। কিন্তু ছয় দিনের মধ্যে একবারও মালিবাগ থেকে মগবাজারে এসে তার শ্বশুরের খোঁজ নেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার মধ্যরাতে যখন পুলিশ ইকবাল উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে, তখন শ্বশুরের বাসায় ছুটে আসেন তিনি। এর আগেই পেশায় চিকিৎসক এই বৃদ্ধের লাশে পচন ধরে। জানা গেছে, স্ত্রী হাবিবা ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে সৌদি আরবে থাকতেন ইকবাল। সেখানে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তবে ৫/৬ বছর আগে তিনি দেশে চলে আসেন এবং বড় মগবাজারে নিজ ফ্ল্যাটে থাকতেন। তার স্ত্রী ও মেয়ে সম্প্রতি কানাডায় ঘুরতে গিয়েছেন। কানাডা থেকে তারা ফোনে ইকবাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। কিন্তু ৫/৬ দিন ধরে ইকবাল উদ্দিনকে ফোনে পাচ্ছিলেন না। পরে খবর দিলে পুলিশ মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে বড় মগবাজার ২২৭ নম্বর গ্র্যান্ড প্লাজা বাড়ির সাত তলার ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে তার লাশ উদ্ধার করে।

ইকবাল উদ্দিনের জামাই আরিফুর রহমান জানান, তিনি মালিবাগ এলাকায় থাকেন। একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। ৫/৬ মাস আগে তিনি বিয়ে করেছেন। তার স্ত্রী ও শাশুড়ি প্রায় ১৫/১৬ দিন আগে কানাডায় ঘুরতে যান। এ কারণে তার শ্বশুর ইকবাল উদ্দিন বেশ কয়েকদিন ধরে ওই বাসায় একা থাকতেন। কানাডা থেকেই তার স্ত্রী ও শাশুড়ি তার শ্বশুরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখতেন। তবে ৫/৬ দিন ধরে তাকে কেউ কল করে পাচ্ছিলেন না। মঙ্গলবার রাতে তিনি গিয়ে তার শ্বশুরের লাশ দেখতে পান। ৫/৬ দিনের মধ্যে একবারের জন্যও আপনি ওই বাসায় গিয়ে শ্বশুরের খোঁজ না নেওয়ার কারণ কী? জানতে চাইলে উত্তরে আরিফুর বলেন, আসলে আমি ওনাদের সঙ্গে তেমন একটা ফ্রি না। গত মাসের ১৯ তারিখে আমার সঙ্গে একবার কথা হয়েছে। আর কথা হয়নি।

সিদ্ধেশ্বরী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) মোফিজুর রহমান জানান, ৯৯৯-এর কল পেয়ে তিনিসহ একটি টিম ওই বাসায় গিয়ে ইকবাল উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। টয়লেটে তার লাশ উপুর হয়ে পড়ে ছিল। লাশে পচন ধরেছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ৫/৬ দিন আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। তবে এ ঘটনায় স্বজনদের কারও কোনো অভিযোগ নেই। তারা বলছেন, স্ট্রোক করে ইকবার উদ্দিনের মৃত্যু হতে পারে। কেননা, এর আগেও তিনি দুবার স্ট্রোক করেছেন।

মঙ্গলবার ইকবাল উদ্দিনের বাসায় যাওয়া এক পুলিশ সদস্য বলেন, একজন মানুষ মারা গেল, অথচ তার নিকটাত্মীয় কেউ আসেননি। ২/১ জন আসলেও তারা বাসার ভিতরে ঢোকেননি। লাশে পচন ধরায় গন্ধ বের হচ্ছিল, তাই স্বজনদের কেউ ভিতরে ঢুকতেই রাজি হননি।

ঢামেক মর্গে আসেন ইকবাল উদ্দিনের কয়েকজন স্বজন। তাদের কেউ কেউ বলছিলেন, জীবনের পরিণতি বুঝি এমনই হয়। এক সময় ডাক্তার ছিলেন, ফ্ল্যাট কিনেছেন। মেয়েকে পিএইচডি করতে দেশের বাইরে পাঠিয়েছেন। কিন্তু মৃত্যুর সময় কাউকে কাছে পাননি।

সর্বশেষ খবর