শুক্রবার, ৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

চলন্ত বাস থেকে যুবককে ধাক্কা, প্রাণ গেল চাকার নিচে

গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুরে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে এক যাত্রীকে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চাকায় পিষ্ট করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তাকওয়া পরিবহনের হেলপার ও চালককে আটক করেছে পুলিশ। উত্তেজিত লোকজন এ ঘটনায় একটি বাস ভাঙচুর করেছে। গতকাল গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত যুবকের নাম মো. সায়েম (২০)। তিনি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার হাওলাপাড়া দক্ষিণ এলাকার মো. আবু সাঈদের ছেলে।

আটক বাসের চালক মো. শফিকুল ইসলাম  (২৬) নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ থানার কুটিপাড়া এলাকার আবদুল মামুদের ছেলে। হেলপার মো. হীরা মিয়ার (২৭) বাবার নাম মো. হারিচ মিয়া। বাড়ি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ থানার মাগান এলাকায়। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) সদর থানার এসআই সাঈদুর রহমান ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর ছায়াবীথি এলাকায় আলমের বাসায় ভাড়া থেকে বিলাসপুর এলাকার একটি ওয়ার্কশপে গ্রিল মিস্ত্রির কাজ করতেন সায়েম। গতকাল সকালে শহরের শিববাড়ী মোড়ে যাওয়ার জন্য জোড়পুকুর এলাকা থেকে তিনি তাকওয়া পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। পথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে বাসচালকের সহযোগী (হেলপার) হীরার সঙ্গে বাগবিতণ্ডা শুরু হয় তার। বাগবিতণ্ডার জেরে সায়েমকে শিববাড়ী না নামিয়ে বেপরোয়া গতিতে বাস চালিয়ে চান্দনা চৌরাস্তার দিকে নিয়ে যেতে থাকেন চালক ও হেলপার। কিছুদূর যাওয়ার পর জয়দেবপুর-চান্দনা চৌরাস্তা সড়কের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গেটের পাশে (শিববাড়ী বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশে) এশিয়ান ফার্নিচারের সামনে সায়েমকে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেন হেলপার হীরা। বাস থেকে নিচে পড়ে ওই বাসেরই চাকায় পিষ্ট হন সায়েম। পরে বাসটি নিয়ে দ্রুতগতিতে পালিয়ে যাওয়ার সময় প্রায় ৪ কিলোমিটার ধাওয়া করে পুলিশ জিএমপি হেডকোয়ার্টারসের সামনে (ওয়্যারলেস গেট) বাসসহ চালক শফিকুল ইসলাম (২৬) ও হেলপার হীরা মিয়াকে (২৭) আটক করে। স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সায়েমকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ লোকজন ওই পরিবহনের অপর একটি বাসের কাচ ভাঙচুর করেন। ঘটনার পর থেকে ওই সড়কে তাকওয়া পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। জিএমপি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে নিহতের বাবা মো. আবু সাঈদ বাদী হয়ে বাসের হেলপার ও চালককে আসামি করে মামলা করেছেন। পুলিশ এ ঘটনায় বাসসহ চালক শফিকুল ইসলাম ও হেলপার হীরা মিয়াকে আটক করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের লাশ শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের বাবা মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘আমার ছেলেকে চলন্ত বাস থেকে ফেলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন বাসের চালক ও হেলপার। আমি আমার ছেলে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও তাদের লাঞ্ছিত করার অহরহ অভিযোগ রয়েছে তাকওয়া পরিবহনের চালক-হেলপারদের বিরুদ্ধে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজেদের ইচ্ছামতো যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করছেন তারা। ট্রাফিক আইন না মেনে ওই পরিবহনের গাড়িগুলো বেপরোয়াভাবে চলাচল করায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এ পরিবহনের অধিকাংশ চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ বৈধ কাগজপত্র নেই। এ ছাড়া চালক ও হেলপারদের অধিকাংশই অপ্রাপ্তবয়স্ক। জেলার আইনশৃঙ্খলা সভায় এসব বিষয় নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে ওই সড়কসহ শহর এলাকায় তাকওয়া পরিবহনের চলাচল নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়। অথচ প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় প্রশাসনের সামনে দিয়ে বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে এ পরিবহনের বাসগুলো। কিন্তু কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে বিআরটিএ গাজীপুরের উপ-পরিচালক মো. আবু নাঈম বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়েছি। কয়েকজনকে জেল-জরিমানাও করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর