শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

আতঙ্ক ছড়াচ্ছে জ্বর-করোনা-ডেঙ্গু

ঘরে ঘরে সর্দি, কাশি, জ্বরে কাহিল মানুষ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

আতঙ্ক ছড়াচ্ছে জ্বর-করোনা-ডেঙ্গু

দেশে করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের মৌসুমে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। রোদ-বৃষ্টি, গরম-ঠাণ্ডায় আবহাওয়ার তারতম্যে জ্বর, সর্দি, কাশির রোগী মিলছে ঘরে ঘরে। পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে জ্বরের হাত থেকে রেহাই মিলছে না অন্যদেরও। জ্বর আসলে সেটা কি ভাইরাস জ্বর, ডেঙ্গু নাকি করোনা তা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে মানুষ।

ইমেরিটাস অধ্যাপক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন করোনা সংক্রমণ, ডেঙ্গু আক্রান্ত, ভাইরাস জ্বর কিংবা সাধারণ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। তাই জ্বর আসলে করোনা টেস্ট করতে হবে। জ্বর আক্রান্ত অনেক রোগী টেস্ট করালে করোনা পজিটিভ আসছে। তাই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে টেলিমেডিসিন সেবাও নিতে পারেন। তিনি আরও বলেন, অনেক রোগীর করোনা আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্তও হচ্ছেন। সেজন্য করোনা নেগেটিভ হলেও যদি জ্বর থাকে তাহলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত কি না তা টেস্ট করে দেখতে হবে। তাই জ্বর, সর্দি, কাশি হলে ফার্মেসি থেকে নিজের ইচ্ছামতো ওষুধ সেবন করা যাবে না। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, গতকাল ৯ হাজার ১০০টি নমুনা পরীক্ষা করে ১ হাজার ৫১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দুজন। করোনা শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত বৃহস্পতিবার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩২৪ জন, মারা গেছেন ছয়জন। করোনা শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। গত বুধবার ৭ হাজার ৪৪৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল, তাতে ১ হাজার ২৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়, সারা দেশে মৃত্যু হয় পাঁচজনের।  গতকাল ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ জন। এর মধ্যে ৩০ জন ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, একজন ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলেন ১৮৬ জন, ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ১৪৫ জন। গত বৃহস্পতিবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৫১ জন। গত বুধবার আক্রান্ত হয়েছেন ৫১ জন। গত মঙ্গলবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৭৩ জন। দেশে এ বছর ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬১০ জন। এ বছর ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

গত কয়েক দিনে সারা দেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে জ্বর, সর্দি-কাশি এবং ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এক পরিবারে একজন আক্রান্ত হলে পুরো পরিবারে ছড়িয়ে পড়ছে জ্বর। বর্ষা শুরু থেকেই তাপমাত্রা ওঠানামায় সারা দেশে বেড়েছে ভাইরাস জ্বর, সর্দি, কাশি এবং ডায়রিয়ার প্রকোপ। হাসপাতালগুলোতেও বাড়ছে এমন রোগীর সংখ্যা। তবে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানী ঢাকায়।  রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা ফজলুল কবির বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমি জ্বরে আক্রান্ত হই। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা, সঙ্গে হাঁচি। করোনা টেস্ট করালে নেগেটিভ আসে। ডেঙ্গুজ্বর কি না তা জানতে টেস্ট করিয়েছি, রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। কিন্তু তিন দিন ধরে জ্বরে কাহিল হয়ে পড়ছিলাম। এরপর আমার স্ত্রী আক্রান্ত হয়। এখন আমার ছেলের প্রচণ্ড জ্বর, সঙ্গে বমি। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ চলছে সবারই। কিন্তু শরীর ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এক পরিবারে একজন জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হলে অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে। সাধারণ জ্বর মনে হলেও এর মধ্যে অনেকক্ষেত্রে লুকায়িত আছে করোনার জীবাণু। এই বৃষ্টি, এই রোদ। একবার মানুষ বৃষ্টিতে ভিজছে, একবার শরীরে ঘাম শুকিয়ে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটছে। হাসপাতালের আউটডোরে জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর