সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
পানি বাড়ছে নদীতে, উৎকণ্ঠা

খুলনা-সাতক্ষীরায় বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

প্রতিদিন ডেস্ক

খুলনা-সাতক্ষীরায় বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

সাতক্ষীরায় বন্যার পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত বিস্তীর্ণ অঞ্চল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাড়ছে নদ-নদীর পানি। বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে খুলনা-সাতক্ষীরায়। পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও ঝালকাঠিতে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। ব্যাহত হচ্ছে জীবনযাত্রা। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

খুলনা : জেলার কয়রার দক্ষিণ বেদকাশিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গতকাল দুপুরের জোয়ারের পানিতে চরামুখা, দক্ষিণ বেতকাশি, পাতাখালি, ঘড়িলাল ও মধ্যপাড়া গ্রামে রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, মাছের ঘের ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়েন প্রায় ৩ হাজার মানুষ। এর আগে সকালে ইউনিয়নের চরামুখা এলাকায় কপোতাক্ষ নদের তীরে বেড়িবাঁধে ভাঙন শুরু হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ওসমান গনি সরদার জানান, সকালে চরামুখা খালের একপাশের রাস্তা ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। রাস্তাটি দীর্ঘদিন নাজুক অবস্থায় ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করা হলেও পানির চাপে সম্ভব হয়নি। পরে দুপুরের দিকে জোয়ারের পানি গ্রামে ঢুকতে শুরু করে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মশিউল আবেদীন বলেন,  ওই স্থানে বাঁধ দুর্বল ছিল। দেড় শ মিটারের মতো জায়গা ভেঙে ক্লোজার (খালের মতো) তৈরি হয়ে গেছে। পানি আটকানো গেলে বাঁধ মেরামত কাজ শুরু হবে।

সাতক্ষীরা : প্রবল জোয়ারের কারণে সাতক্ষীরার সুন্দরবন সংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীর দুর্গাবাটি সাইক্লোন শেল্টার-সংলগ্ন বেড়িবাঁধটি গত দুই দিনেও মেরামত করা সম্ভব হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদারদের সহায়তায় বাঁশ খুঁটি পুঁতে ও বালির বস্তা দিয়ে রিংবাঁধের মাধ্যমে সংস্কার কাজ করছে। কিন্তু খোলপেটুয়া নদীর তীব্র জোয়ারের কারণে কোনোভাবেই লোকালয়ে পানি প্রবেশ ঠেকাতে পারেনি। ভাটার সময় লোকালয় থেকে কিছুটা পানি নেমে গেলেও দিনে দুইবার জোয়ারের তীব্রতায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে দুর্গাবাটি সাইক্লোন শেল্টার সংলগ্ন ২০০ ফুট এলাকাজুড়ে উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। গত দুই দিনে ভেঙে যাওয়া বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার সংস্কার করতে ব্যর্থ হওয়ায় গত ৪৮ ঘণ্টায় বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে হাজার হাজার হেক্টর মৎস্য ঘের ও ছোট-বড় পুকুরের মাছ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পশ্চিম পোড়াকাটলা, পূর্ব পোড়াকাটলা, পশ্চিম ও পূর্ব দুর্গাবাটি, আড়পাঙ্গাশিয়া, দাতিনাখালীসহ আশপাশের আরও ১০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল। এ ছাড়া হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের লোনা পানিতে একাকার হয়ে আছে। ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে ঘের ব্যবসায়ীরা। গ্রামবাসীরা লোনা পানিতে বন্দি হয়ে পড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

পিরোজপুর : পিরোজপুরের বিভিন্ন নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন স্থান প্লাবিত হয়েছে। পিরোজপুর শহরের রাজারহাটে শহর রক্ষা বাঁধের ওপরে পানি ঢুকে পড়েছে। এ ছাড়া শহরের আদর্শপাড়া, নামাজপুর, হুলারহাট, কুমিরমাড়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পিরোজপুরের ইন্দুরকানিতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে তিন ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ফেরি পার হওয়া যানবাহন ও সাধারণ মানুষদের।

গতকাল দুপুরে সরেজমিন উপজেলার কচা নদীর টগড়া ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, নদীতে পানির খুব চাপ। ফেরিঘাট ২/৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে অনেক যানবাহন পার হচ্ছে। পথচারীরা পানিতে ভিজে ফেরিতে ওঠা-নামা করছেন। ঘাটের দুই পাশের দোকান পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক ছোট গাড়ি পার না হয়ে ভাটার অপেক্ষা করছে।

পটুয়াখালী : পূর্ণিমার ‘জো’র প্রভাবে কয়েক দিন ধরে পটুয়াখালীর উপকূলের অর্ধশতাধিক চরসহ নিম্নাঞ্চলে জোয়ারের পানি ঢুকে দফায় দফায় প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ও জেলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপচর রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে তলিয়ে যায় মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক শ পরিবার। এতে ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, চরম ভোগান্তিতে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে পটুয়াখালী শহরের কয়েকটি এলাকায়।

ঝালকাঠি : পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে সপ্তাহ খানেক ধরে ঝালকাঠির সুগন্ধা-বিষখালী নদী প্লাবিত হয়ে নদী ও খাল সংলগ্ন প্রায় অর্ধ শতাধিক গ্রামে স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৩ ফুট পানি বেড়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ স্থানীয় বাজার ও সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে কাঁঠালিয়া উপজেলা পরিষদ ভবন, ইউএনওর অফিস ও বাসভবনসহ ১৪টি গ্রাম বিষখালী নদীর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সুগন্ধার পানি বেড়ে রাজাপুর উপজেলার বাদুড়তলা বন্দর তলিয়ে গেছে। মানকি সুন্দর, নাপিতের হাট, বড়ইয়া, পালট,  ঝালকঠি সদরের পৌরসভা খোয়াঘাট, নতুন চর, কলাবাগান, কাঠপট্টি, দিয়াকুল, পোনাবালিয়ালসহ বেশ কিছু গ্রামে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুগন্ধা-বিষখালী নদীর জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে তিন ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর