সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

পাহাড়ে এখনো পর্যটকের ভিড়

প্রতিদিন ডেস্ক

পাহাড়ে এখনো পর্যটকের ভিড়

ঈদের ছুটি শেষ হলেও পর্যটকের ভিড় কমেনি পাহাড়ি জনপদে। এখনো প্রতিদিন হাজার হাজার ভ্রমণপিয়াসু মানুষ এখানে ছুটে আসছেন। ফলে পর্যটনের সবগুলো স্পটে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

রাঙামাটি : এখনো পর্যটকের ভিড় জমছে রাঙামাটির পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। প্রতিদিনই আসছেন হাজার হাজার পর্যটক। তাদের হইচই আর আনন্দ-উল্লাসে পাহাড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ হাজার পর্যটকের ভিড় থাকছে রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ঝুলন্ত সেতু ও পলওয়েল পার্কে। এতে যেমন রাজস্ব আয় বাড়ছে, তেমনি সচ্ছল হচ্ছে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান। পর্যটন কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহের প্রথম দিন অর্থাৎ গতকালও ছিল রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুতে স্থানীয়সহ আশপাশের জেলার পর্যটকদের আনাগোনা। ঝুলন্ত সেতুর কাউন্টারে ছিল উপচে পড়া ভিড়। রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা তাহামিদ আহসান জানান, সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে ভেসে বেড়ানো মেঘ দল দেখে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। তাই তো প্রতি বছর ঈদের ছুটিতে রাঙামাটি আসি।

এ ছাড়া কাপ্তাই হ্রদের আশপাশের ঝরনার কারণে ব্যস্ততা বেড়েছে বোর্ট মালিকদেরও। পর্যটকরা যাতে নিরাপদে কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণ করতে পারেন তার জন্য পর্যটন কমপ্লেক্সের ঝুলন্ত সেতুর ঘাটে রাখা আছে সারি সারি ট্যুরিস্ট বোট। ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতির ম্যানেজার রমজান আলী বলেন, আমাদের ১০০টি ট্যুরিস্ট বোট আছে। প্রতিটি বোট প্যাকেজ আকারে ছাড়া হয়। এগুলো তিন থেকে চারটি পর্যটন স্পট ঘুরছে। এ জন্য পর্যটকদের জনপ্রতি দিতে হয় ১২ থেকে ১৫ টাকা। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য বোটে আছে লাইভ জ্যাকেটও।

খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ির পর্যটন কেন্দ্রগুলো এখনো উৎসবমুখর রয়েছে। ঈদের আমেজ কাটেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন করে সাজানো আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে এখন ভিড় সবচেয়ে বেশি। এখানে সুরঙ্গপথ, ব্রিজসহ নানা সৌন্দর্যবর্ধন স্থান থাকায় ছুটে আসছেন অনেকেই। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬০০ ফুট ওপরে এই আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র। দীর্ঘদিন এটি অবহেলিত থাকলেও এবার এটিকে পুরো বদলে ফেলা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে ঝুলন্ত ব্রিজ, নন্দনকানন পার্ক, কুঞ্জছায়া ভিউ পয়েন্ট ও স্বর্ণতোরণ। এ ছাড়াও এখন আম্ফি থিয়েটার ও খুমপই রেস্ট হাউসের নির্মাণের কাজ শেষ হতে চলেছে। এগুলো চালু হলে পর্যটক আরও বাড়বে। স্থানীয় হোটেল মালিক ছালেহ আহমদ জানান, এবারে বেশ পর্যটক আসছেন। ব্যবসা ভালো হচ্ছে। জিপ সমিতির সভাপতি আজিম জানান, চাঁদের গাড়ি, পিকাপগুলো রাত-দিন পর্যটকদের নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সব মিলে পাহাড়ের পর্যটন কেন্দ্রগুলো এখন পর্যন্ত খুব জমজমাটভাবে চলছে।

শ্রীমঙ্গল : বিপরীত অবস্থা শ্রীমঙ্গলে। মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকরা। এখানে আর আগের মতো পর্যটক আসছেন না। তাই ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এখানকার প্রায় ৯০ শতাংশ হোটেল রিসোর্ট খালি পড়ে আছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, শ্রীমঙ্গলে আলাদা করে ব্র্যান্ডিং না করা, সন্ধ্যার পর কোনো বিনোদন ব্যবস্থা না থাকা এবং পর্যটন তথ্য কেন্দ্র না থাকার কারণে পর্যটকদের এখানে এসে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তাই তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তারা আরও জানান, প্রতি বছর ঈদ, কিংবা সরকারি ছুটির দিনে এখানে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকত। হোটেল রিসোর্টে রুম পাওয়া দুষ্কর হয়ে যেত। কিন্তু এবারের ঈদে বাইরের কোনো পর্যটক আসেননি। উপজেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলো অনেকটা পর্যটকশূন্য ছিল। স্থানীয় কিছু মানুষের আনাগোনা ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থান থেকে আসা কোনো পর্যটক দেখা যায়নি। ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সদস্য খালেদ হোসেন বলেন, সিলেটে বন্যার কারণে এবার শ্রীমঙ্গলে পর্যটক আসছেন না। সবাই পদ্মা সেতুমুখী হয়ে পড়েছেন। ভ্রমণ পিপাসুদের মনে সবসময় নতুন কিছু দেখার তৃষ্ণা থাকে। তাই শ্রীমঙ্গলের পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে এখন আরও আকর্ষণীয় করতে হবে। সব রকম সুযোগ-সুবিধা রাখতে হবে। এসকেডি আমার বাড়ি রিসোর্টের মালিক সজল দাশ বলেন, ‘খুব করুণ অবস্থা। আমার রিসোর্টে ৪০টি রুমের মধ্য মাত্র দুটি রুম ভাড়া হয়েছে। এমনটা হবে কখনো ভাবীনি।’ পর্যটন সেবা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমেদ বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু না, এখন মনে হচ্ছে পর্যটকরা শ্রীমঙ্গল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তাই এখন পর্যটকদের জন্য নতুন বিনোদনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। হোটেল রিসোর্টগুলোতে সেবার মান আরও উন্নত করতে হবে। পর্যটকদের জন্য একটি তথ্য কেন্দ্র থাকতে হবে। এ ছাড়া সরকারি উদ্যোগে শ্রীমঙ্গলে আলাদা করে ব্র্যান্ডিং করতে হবে।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর