সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশ্ববিদ্যালয়কে সনদ দিতে প্রস্তুত অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল

গুণগত মান না থাকলে পাবে না সনদ উদ্বোধন বুধবার

আকতারুজ্জামান

সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা স্তরে পাঠদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সনদ দেবে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল (বিএসি)। তবে শিক্ষায় ‘গুণগত মান’ না থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই সনদ পাবে না। নির্দিষ্ট মানদন্ডের ভিত্তিতে শর্ত পূরণ করলে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া হবে একটি স্কোর। ৭০ শতাংশ বা তার বেশি স্কোর পেলে বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া হবে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ। আগামী বুধবার সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অ্যাক্রেডিটেশন প্রক্রিয়া উদ্বোধন করবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এরপর থেকে সনদ পেতে কাউন্সিলে আবেদন করতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল (বিএসি) আইন ২০১৭ অনুসরণ করে ইতোমধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে অ্যাক্রেডিটেশন বিধিমালা ২০২১। এই বিধিমালা মেনেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেওয়া হবে অ্যাক্রেডিটেশন।

অ্যাক্রেডিটেশন বিধিমালা অনুযায়ী, নির্ধারিত স্কোরের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি স্কোর পেলে কোনো প্রোগ্রাম বা বিশ্ববিদ্যালয়কে অ্যাক্রেডিটেশন সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। ৬০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ স্কোর পেলে দেওয়া হবে কনফিডেন্স সার্টিফিকেট। তবে ৬০ শতাংশের কম নম্বর পেলে কোনো সার্টিফিকেট দেওয়া হবে না। কনফিডেন্স সার্টিফিকেট প্রাপ্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান/একাডেমিক প্রোগ্রাম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় অ্যাক্রেডিটেশন মানদন্ড ও শর্তাবলি পূরণ করতে পারলে অ্যাক্রেডিটেশন সার্টিফিকেট পাবে। অ্যাক্রেডিটেশন সার্টিফিকেটের মেয়াদ ইস্যুর তারিখ থেকে পাঁচ বছর। নির্দিষ্ট সময় পর ফের এই সনদ নিতে হবে। তবে কনফিডেন্স সার্টিফিকেটের মেয়াদ ইস্যুর তারিখ থেকে সর্বোচ্চ এক বছর। কনফিডেন্স সার্টিফিকেট কোনোভাবেই নবায়ন করা যাবে না। অ্যাক্রেডিটেশন সার্টিফিকেট পাওয়া উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান/একাডেমিক প্রোগ্রাম পরিচালনায় মানদন্ড বজায় রাখার ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটালে কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটি নির্দিষ্ট কারণে অ্যাক্রেডিটেশন সার্টিফিকেট/ কনফিডেন্স সার্টিফিকেটের বৈধতা স্থগিত করতে পারবে।

বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন সনদ যথাযথ মানের স্বীকৃতি। যে কোর্স বা প্রোগ্রাম অথবা বিশ্ববিদ্যালয় এ স্বীকৃতি পাবে সেটির পড়াশোনা, পাঠদান পদ্ধতিও মানসম্মত বলে বিবেচিত হবে। দেশের উচ্চশিক্ষা সেক্টরকে কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সিস্টেম ম্যানেজমেন্টের আওতায় আনাই আমাদের উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, যারা মানসম্মত পাঠদান করবে না তারা অ্যাক্রেডিটেশন সনদও পাবে না। আগামী বুধবার এ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে আবেদন নেওয়া হবে। অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রমের বিস্তারিত জানাতে সোমবার (আজ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছ থেকে আবেদন পাওয়ার পর এ সংক্রান্ত কমিটি সরেজমিন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবে। পরিদর্শনকালে অ্যাক্রেডিটেশন কমিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশকিছু বিষয় পর্যবেক্ষণ করবে। এসবের মধ্যে রয়েছে- পাঠদান ও শিখন পদ্ধতি মূল্যায়ন ব্যবস্থা; অ্যাসাইনমেন্ট, প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্র পর্যালোচনা পদ্ধতি; গবেষণা পদ্ধতি; পাঠদানের পরিবেশ; বিভিন্ন সভার কার্যবিবরণী; কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্সের বিভিন্ন বিষয়; অ্যাক্রেডিটেশনের মানদন্ডের পরিপ্রেক্ষিতে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরাজমান পরিস্থিতি ইত্যাদি। পরিদর্শন শেষে অ্যাক্রেডিটেশন কমিটি কাউন্সিলের মানদন্ড অনুযায়ী গুণগত মান নিরূপণ করে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে। কাউন্সিল সভায় অ্যাক্রেডিটেশন প্রদান সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদককে বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি, বিভাগ ও একাডেমিক প্রোগ্রামের মান যাচাই করে সনদ দেবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা, অভিভাবকরা জানবেন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিভাগ বা প্রোগ্রাম কতটা মানসম্পন্ন। এর ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শিক্ষাকে মানসম্মত করার সুস্থ প্রতিযোগিতা ও পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি হবে, গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে উঠবে। সার্বিকভাবে আমরা আমাদের উচ্চশিক্ষাকে কাক্সিক্ষত মানে নিয়ে যেতে পারব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর