মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

হাজারো মিথের সেই কামরূপ কামাখ্যা

মুহাম্মদ সেলিম, আসাম (ভারত) থেকে

হাজারো মিথের সেই কামরূপ কামাখ্যা

কামাখ্যা মন্দির ভারতের আসাম রাজ্যের কামরূপ জেলার অন্তর্গত। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ ‘মন্দির’ কথাটি উচ্চারণ না করেই বলে কামরূপ কামাখ্যা। এ মন্দির ঘিরে বহু কল্পকথা চালু আছে বাংলাদেশে। সবচেয়ে বেশি যেটা প্রচালিত তা হচ্ছে, কামরূপ কামাখ্যায় যে প্রবেশ করে তার জীবনকে হাতের পুতুল বানিয়ে ফেলেন মন্দিরের পুরোহিতরা। একেবারেই ভিত্তিহীন একটি তথ্য। বলা হয়, কামাখ্যা মন্দিরে ঢুকলেই জাদুবিদ্যায় ওস্তাদ পূজারিরা মানুষকে পশু বা পাখি বানিয়ে ফেলেন। শুধু তাই নয়, যে একবার ওই পূজারিদের খপ্পরে পড়ে অকেজো হয়ে যায় তার যৌবনশক্তি। পুরুষের পৌরুষ বলে কিছু থাকে না। এভাবে প্রচারণার দাপটে মন্দিরটির প্রকৃত খ্যাতি সম্পর্কে জানা কঠিন হয়ে পড়ে। এ মন্দির বিখ্যাত হয়েছে সতী ও শিবের পুরান কাহিনির কারণে।

কাহিনিতে আছে : সতী (শিবের প্রথম স্ত্রী) মারা গেলে লাশ হাতে নিয়ে বিরহকাতর শিব তাণ্ডবনৃত্য শুরু করেন। এতে লাশ খণ্ডবিখণ্ড হয়ে নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। দেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ পড়েছে কামাখ্যায়। কালক্রমে এখানে নির্মিত হয়েছে মন্দির। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, এখানে পূজা দিলে দুঃখকষ্ট দূর হয়; পূরণ হয় মনোবাসনা। আসামের রাজধানী গুয়াহাটির নীলাচল পাহাড়চূড়ায় স্থাপিত কামাখ্যা মন্দির হিন্দুদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। মনোবাসনা পূরণ, পাপমুক্ত হয়ে পুণ্য সঞ্চয়ের জন্য প্রতি বছর এখানে ভিড় করেন লাখ লাখ ভক্ত।

আসাম রাজ্য সরকারের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব প্রবণ কুমার বড়ো ঠাকুর বলেন, ‘তীর্থস্থানে পুজো দিতে আসা লাখ লাখ ভক্তের পদচারণে মুখরিত হয় মন্দিরপ্রাঙ্গণ। তাঁদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করে রাজ্য সরকার।’

মন্দিরের পূজারি মনোজ শর্মা বলেন, ‘প্রতিদিন ১০ হাজার ভক্ত আসেন মন্দিরে। তবে সরকারি ছুটির দিনে তা বেড়ে হয় ২০ হাজার। এখানে আসা ভক্তরা মনোবাসনা ও পুণ্যের আশায় দেবীদর্শন, জীব বলি, পূজাসহ নানা ধরনের অর্চনা করেন। ভক্তরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে দেবী দর্শন করেন।’

তিনি বলেন, ‘কেউ তান্ত্রিক মনোবাসনা পূরণের আশা নিয়ে এলে সিদ্ধি লাভ করেন। খালি হাতে ফেরেন না।’

বাংলাদেশ থেকে পুজো দিতে আসা ডা. জিসুময় দেব বলেন, ‘আমরা পারিবারিকভাবে এ মন্দিরে পুজো দিয়ে আসছি। আমার দাদার মৃত্যুর পর বাবা এবং বর্তমানে আমি পুজো দিচ্ছি। পুজোয় পবিবার ও দেশের মঙ্গল কামনা করি। মনোবাসনা পূরণে প্রার্থনা করি।’

সরেজমিন দেখা যায়, আট শতাব্দীতে নির্মিত এ মন্দির কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বেশির ভাগ ভক্ত পরে আসেন লাল শার্ট, লুঙ্গি, গামছা। নারী ভক্তের পরনেও লাল কাপড়। মন্দিরের অসাধারণ স্থাপত্যকলা দর্শনার্থীদের বিমোহিত করে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর