শিরোনাম
বুধবার, ২০ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

টানা সাত দিন গাড়ি চালানোয় সর্বনাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা সাত দিন ট্রাক চালাচ্ছিলেন চালক রাজু। ছিল না নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল গাড়ির ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট। এ ছাড়া ট্রাকের ধারণক্ষমতা সর্বোচ্চ ৭ টন হলেও মালামালসহ সেটির ওজন ছিল ১৩.৫ টন। ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাবা-মাসহ এক সন্তানের নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় ট্রাকচালক রাজু আহমেদ ওরফে সিপনকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব। র‌্যাব জানিয়েছে, র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৪ অভিযান চালিয়ে সোমবার রাতে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে ট্রাকচালক মো. রাজু আহমেদ ওরফে সিপনকে (৪২) গ্রেফতার করেছে। রাজু রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মর্মান্তিক এ ঘটনার পরপরই জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় র‌্যাব। রাজু জানিয়েছে, ছয়-সাত মাস আগে থেকে তিনি শতকরা ১০ ভাগ কমিশনে ট্রাকটি চালাচ্ছিলেন। গাড়িটিতে সবসময় কাঁচামাল পরিবহন করা হতো। গাড়ির বর্তমানে ট্যাক্স টোকেন এবং ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদ শেষ। ধারণক্ষমতা ৭ টন হলেও দুর্ঘটনার সময় গাড়িটির ওজন ছিল ১৩.৫ টন। ভারী যানবাহন চালানোর জন্য তার বৈধ লাইসেন্স নেই। আগে মাঝারি ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল, যা ২০১৬ সালে হারিয়ে ফেলে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, রাজু গত ১১ জুলাই থেকে একটানা ট্রাক চালিয়ে আসছিলেন। ১৫ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট থেকে আম এবং পরে রাজশাহীর নৌহাটা থেকে আলুবোঝাই করে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে যাচ্ছিলেন। রাত ১২টায় ট্রাক নিয়ে রওনা হন তিনি। পথে হালকা বিরতি নিয়ে দুর্ঘটনার আগ পর্যন্ত একটানা গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন। ময়মনসিংহের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডের কাছে পৌঁছালে রাস্তা পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী-সন্তানকে চাপা দেন তিনি।

খন্দকার মঈন আরও বলেন, দুর্ঘটনার পর উপস্থিত লোকজন ট্রাকটি থামায়। তখন সুযোগ বুঝে রাজু ঢাকাগামী একটি বাসে উঠে পড়েন। পরে বাস থেকে ময়মনসিংহ বাইপাসে নামেন এবং সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশায় প্রথমে মুক্তাগাছা এবং পরে আরেকটি বাসে করে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা যান। সেখান থেকে তার পরিচিত বিভিন্ন ট্রাকচালকের ট্রাকে উঠে আত্মগোপনে থাকেন। সোমবার এমন একটি ট্রাক সাভারে পৌঁছালে সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই দুপুরে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রায়মণি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও এক কন্যাকে নিয়ে রাস্তা পারাপারের জন্য মহাসড়কের পাশে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ময়মনসিংহগামী  ট্রাক বেপরোয়া গতিতে এসে তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রত্মা বেগম (২৬)। তাদের তিন বছর বয়সী কন্যা সন্তান সানজিদা আক্তারকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে মারা যান। দুর্ঘটনার সময় অন্তঃসত্ত্বা রত্না বেগমের উপর দিয়ে ট্রাক চলে যাওয়ার পর তার গর্ভে থাকা কন্যা সন্তান অলৌকিকভাবে ভূমিষ্ঠ হয়। দুর্ঘটনায় ভূমিষ্ঠ শিশুর ডান হাতের কনুইয়ের উপরের হাড়ে ফ্র্যাকচার ও কলারবোন ভেঙে গেছে। এ ঘটনায় নিহত জাহাঙ্গীর আলমের বাবা বাদী হয়ে ১৭ জুলাই ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানায় সড়ক পরিবহন আইনের ৯৮/১০৫ ধারায় মামলা করেন। মামলা নম্বর ১৮।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর