শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

সন্তানের সন্ধানে কাঁদলেন মা

♦ নিখোঁজ হয়ে গেছে উত্তাল সাগরে ♦ সচিব ও রাষ্ট্রদূতের মতবিনিময় অভিবাসন নিয়ে

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

সন্তানের সন্ধানে কাঁদলেন মা

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতাকে সামনে পেয়ে সন্তানের সন্ধান চেয়ে কেঁদে ফেলেন এই মা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার দক্ষিণ লোনসিং গ্রামের নাছিমা বেগমের ছেলে কামাল মুন্সী (৩০) তিন বছর আগে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়েছেন। তার সন্ধান চেয়ে গতকাল অভিবাসন সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠানে কেঁদেছেন মা নাছিমা বেগম। অনুষ্ঠানে ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতাসহ অন্য অতিথিরা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসন মানব পাচার ও নিরাপদ অভিবাসন উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পৌরসভা মিলনায়তনে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান।  প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব আখতার হোসেন, আইজিপি বেনজীর আহম্মেদ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুছ, শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুজ্জামান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন যখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে সভায় অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন তখন নাছিমা বেগম দাঁড়িয়ে কেঁদে ওঠেন এবং ছেলেকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানাতে থাকেন।

কামাল মুন্সীর পরিবার এ সময় জানায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া পৌরসভার দক্ষিণ লোনসিং এলাকার মৃত ফজলুল হক মুন্সীর চার ছেলে। তাদের মধ্যে মেজো ছেলে কামাল মুন্সী গ্রামে কৃষিকাজ করতেন। সংসারের  অভাব দূর করতে ইতালি যাওয়ার জন্য স্থানীয় দালাল হানিফ সরদারের মাধ্যমে তিনি লিবিয়া যান। তখন ওই দালালকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দেয় কামালের পরিবার। এরপর লিবিয়ায় অবস্থান করা আরেক বাংলাদেশি দালাল হাসানের সঙ্গে চুক্তি হয় কামালের পরিবারের। তাকে বিভিন্ন সময় দেওয়া হয় আরও ১০ লাখ টাকা।

গত ২৯ জুন কামাল বাড়িতে ফোন করে মা নাছিমা বেগম ও স্ত্রী সামিয়া আক্তারের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি তাদের কাছে জানান, ১ জুলাই তাকে নৌযানে করে ভূমধ্যসাগর পারি দিয়ে ইতালির সীমানায় পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু ২৯ তারিখের পর আর কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না পরিবার। ৩ জুলাই লিবিয়ার দালাল হাসান ফোন করে কামালের পরিবারকে জানায়, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় কামাল হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। তার মরদেহ ফেরত পাঠানোর জন্য পরিবারের কাছে টাকা দাবি করা হয়।

ঘটনা শোনার পর পররাষ্ট্র সচিব ওই নারীকে আশ্বস্ত করে বলেন, অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার সময় নিখোঁজ কামাল মুন্সীর সন্ধানে কাজ করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তিনি উপস্থিত সবার প্রতি আহ্বান জানান, অবৈধ পথে বিদেশ না যাওয়ার জন্য জনসচেতনতা তৈরিতে ভূমিকা রাখতে।

ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা এ সময় বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিপজ্জনক পথে ইতালি গমন আমাদের সবার জন্য উদ্বেগজনক। তাই মানবিক কারণে জীবন বাঁচাতে শ্রম অভিবাসীদের প্রতারণা ও নির্যাতন থেকে বাঁচাতে সর্বোপরি মানব পাচার দমনে জনসচেতনতা বৃদ্ধি একান্ত প্রয়োজন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর