রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

ছয় লেন সড়ক হতে কয় মাস দেরি

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোড প্রকল্পে ৩০ মাসে বাস্তবায়ন অগ্রগতি ৩১ শতাংশ, নির্ধারিত মেয়াদ শেষে সময় বাড়ল আরও এক বছর

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ছয় লেন সড়ক হতে কয় মাস দেরি

যানজট নিরসনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেনে উন্নীত করার জন্য আড়াই বছর আগে একটি প্রকল্প গ্রহণের পর এখন দেখা যাচ্ছে গৃহীত প্রকল্পটি ওই রোডে আরও বেশি যানজটের সৃষ্টি করছে। ফলে সাইনবোর্ড থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার ছয় লেনের এ প্রকল্পটি আর কয় মাসে শেষ হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে নগরবাসীর মধ্যে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আলোচ্য প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের জুনে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের আর্থিক ও বাস্তব কাজ অর্ধেকও সম্পন্ন হয়নি। ২০ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, প্রকল্পটি অনুমোদনের ৩০ মাসে এর আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৩১ শতাংশ। আর ক্রমপুঞ্জীভূত বাস্তব অগ্রগতির হার ৪০ শতাংশের কাছাকাছি। এ পরিস্থিতিতে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কার্যক্রম শেষ করতে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) কর্মকর্তারা জানান, এটি একটি ধীরগতির প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। যে সময় যে কাজ হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। প্রকল্পের আওতায় ভূমির সীমানা নিয়েও জটিলতা রয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রকল্পের ডিপিপিতে শূন্য দশমিক ১৭৯ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও বাস্তবে এর কোনো প্রয়োজন নেই। সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যয় না বাড়িয়ে আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ করার সুপারিশ করা হয়েছে। বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করতে মনিটরিং জোরদার করতে বলা হয়েছে বাস্তবায়নকারী বিভাগকে। বর্ধিত সময়ের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শেষ হচ্ছে কি না সে সম্পর্কে তিন মাস পরপর আইএমইডিকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। জানা গেছে, যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোড (সাইনবোর্ড-চাষাঢ়া) ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প প্রস্তাবটি ২০২০ সালের জানুয়ারিতে একনেকে অনুমোদিত হয়। ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রকল্প বাস্তবায়নে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এনডিই-টিবিএল-এইচটিবিএল-জেভি নামক যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে। বাস্তবায়ন মেয়াদ নির্ধারণ হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মেহেদী ইকবাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, লিঙ্ক রোডের দুই পাশে বর্জ্য ও অবৈধ স্থাপনা সরাতে সময় বেশি লেগেছে। এ ছাড়া সড়কের পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থানান্তর করতে বিদ্যুৎ বিভাগকে ২২ কোটি টাকা পরিশোধ করার পরও তারা সময়মতো খুঁটি সরাননি। মেহেদী ইকবাল জানান, রাস্তার পাশে ৫ ফুট বর্র্জ্য সরানোর পরিকল্পনা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে ২০ থেকে ২৫ ফুট বর্জ্য সরিয়ে রাস্তা করতে হচ্ছে। এ ছাড়া রাস্তার পাশে কিছু দোকানপাট ও স্থাপনা সরানো নিয়ে জটিলতা থাকার কারণেও প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি বলে জানান তিনি। প্রকল্পের কারণে লিঙ্ক রোডে যানজট বেড়েছে- এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, যানজটের বিষয়টি আসলে বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। তাঁর দাবি, আগে সাইনবোর্ড এলাকায় দীর্ঘ সময় যানজট হতো, এখন ১ মিনিটে ওই এলাকা পার হওয়া যাচ্ছে। লিঙ্ক রোডের কোথায় যানজট হচ্ছে, এ বিষয়ে প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্নও করেন নির্বাহী প্রকৌশলী। লিঙ্ক রোডের ভুঁইগড়, জালকুঁড়িসহ শিবু মার্কেট এলাকার যানজটের কথা বলা হলে মেহেদী ইকবাল জানান, ওই এলাকায় আগেও যানজট হতো। চলমান গাড়িগুলো রাস্তায় থেমে থেমে চলার কারণে এ যানজট হচ্ছে বলে জানান তিনি। সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডটি ৫০ ফুট চওড়া। ছয় লেনে উন্নীত করার পর এর মোট প্রশস্ততা হবে ১৩৮ থেকে ১৪০ ফুট। শিবু মার্কেট, জালকুঁড়ি ও ভুঁইগড়ে একটি করে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে। যাত্রী ওঠানামার জন্য যানবাহন যেন থামতে পারে সেজন্য বাস-বে নির্মাণ করা হবে। লোকজনের পারাপারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান সাইনবোর্ড ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর