শিরোনাম
রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

ঘুরে দাঁড়াতে পারে শেয়ারবাজার

কমেছে বিনিয়োগ ঝুঁকি - আসছে ব্যাংকের নতুন বিনিয়োগ ঘোষণা

আলী রিয়াজ

কয়েক সপ্তাহ ধরে টানা দরপতনে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা। সাম্প্রতিক সময়ের অর্থনৈতিক চাপের প্রভাবে শেয়ারবাজারও অস্থির হয়ে ওঠে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এ অস্থিরতার কারণে প্রায় এক মাস ধরে পতনের মধ্যে রয়েছে শেয়ারবাজার। এর মধ্যে গত সপ্তাহে লেনদেনের পাঁচ দিনই দরপতন হয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম অস্বাভাবিক হারে কমেছে। ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই) মাসের ব্যবধানে সাড়ে ৩ শতাংশের ওপরে কমে ১৪ দশমিক ৫ হয়েছে। ১৫ শতাংশের নিচে থাকা আয় অনুপাতকে বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত মনে করা হয়। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগ এখন নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত। টানা দরপতন হলেও বাজারে এখন বিনিয়োগের জন্য ভালো পরিবেশ রয়েছে। শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াতে পারে শেয়ারবাজার।

জানা গেছে, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকি নির্ণয় করা হয় মূল্য আয় অনুপাত দিয়ে। সাধারণত ১০-১৫ পিইকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিমুক্ত ধরা হয়। আর কোনো কোম্পানির পিই ১০ এর নিচে নেমে গেলে ওই কোম্পানির শেয়ার দাম অবমূল্যায়িত বা বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ ধরা হয়। ডিএসইর সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত অনেক আগেই ১৫ এর নিচে নেমেছে। গত ১৬ জুন লেনদেন শেষে ডিএসইর পিই দাঁড়ায় ১৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ের দরপতনে তা আরও কমে এখন ১৩ দশমিক ৫৫ পয়েন্টে নেমে গেছে। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে পিই দশমিক ৫০ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমেছে। বর্তমান চার খাতের পিই এখনো সার্বিক বাজার পিইর নিচে রয়েছে। এই চার খাতের মধ্যে রয়েছে- ব্যাংক, ওষুধ, বিবিধ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি। আগের মতো সবচেয়ে কম পিই রয়েছে ব্যাংক খাতের। বর্তমানে এই খাতের পিই রয়েছে ৭ দশমিক ৬০ পয়েন্ট, যা এক মাস আগে ছিল ৭ দশমিক ৮০ পয়েন্টে। আয় অনুপাতের এই সূচক বাজারে বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিমুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ফলে এখন বাজার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ হিসেবে বর্ণনা করছেন বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে শেয়ারবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের যৌথ সিদ্ধান্তে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত মতে শেয়ারবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূলধনের ২৫ শতাংশ বিনিয়োগের জন্য স্পষ্টীকরণ করে নতুন নির্দেশনা জারি করা হচ্ছে। যা চলতি সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জারি করতে পারে বলে সূত্রে জানা গেছে। নতুন নির্দেশনা জারি করার আগে বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতামতের জন্য ইতোমধ্যে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্মতি দিলেই চলতি সপ্তাহে জারি করা হবে। এ নির্দেশনায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ কস্ট প্রাইস বা ক্রয় মূল্যে হিসাব করা হয়। যা বর্তমানে বাজার মূল্যে হিসাব করা হচ্ছে। ক্রয় মূল্যে হিসাব করা হলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সক্ষমতা যেমন বাড়বে তেমনি বিনিয়োগের ঝুঁকিও কমবে। ফলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বড় বিনিয়োগ হতে পারে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আবু আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনেকে মনে করছে ডিজেল চালিত পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে যাবে, দ্রব্যমূল্য বাড়বে এসব কারণে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে ভীতি তৈরি হয়েছে। সেই ভীতির কারণে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন হচ্ছে। তবে এটা কোনো আতঙ্কিত হওয়ার মতো ঘটনা নয়। বিনিয়োগকারীরা সবাই পেনিক সেল করছে। এটা সাময়িক। দীর্ঘমেয়াদে লোকসান কারও হবে না যদি শেয়ার ধরে রাখে। তিনি আরও বলেন, আমরা দেখছি প্রতিদিন শেয়ারের দর কমছে। এটা কারেকশন হচ্ছে। এক দিনের কারেকশন ৩/৪ দিনে হচ্ছে। বিএসইসির দুই শতাংশে যে ক্যাপ এখন প্রত্যাহার করা উচিত। এটা না থাকলে এক দিনের ওভার প্রাইসের কোম্পানিগুলোর দর কারেকশন হয়ে যেত। বাজার এখন বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়। আগের চেয়ে ঝুঁকি এখন অনেক কম।

সর্বশেষ খবর