সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

গার্মেন্ট পণ্যের আড়ালে ৩৭ কোটি টাকার মদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

গার্মেন্ট পণ্যের আড়ালে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসছিল ৩৭ কোটি টাকার ৩৭ হাজার বোতল বিদেশি মদ। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থেকে দুটি লরিতে থাকা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অবৈধ পণ্যের চালান আটক করে র‌্যাব-১১-এর একটি দল। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা আবদুল আহাদকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১-এর যৌথ দল গ্রেফতার করে। পরে তার ওয়ারী এলাকার বাড়ি থেকে প্রায় ২ কোটি টাকার দেশি-বিদেশি মুদ্রা জব্দ করে র‌্যাব। প্রাথমিক তদন্তে র‌্যাব জানতে পেরেছে, জব্দ মদের চালানটি মুন্সীগঞ্জের আজিজুল ইসলামের। তার ছেলে মিজানুর রহমান আশিক (২৪) ও আবদুল আহাদ (২২) এসবের তদারক করেন। দুবাই থেকে এসব চালান পাঠান একই এলাকার নাসির নামে আরেকজন। আজিজুল ইসলাম শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক।

এ ঘটনায় গতকাল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানা র‌্যাব বাদী হয়ে মামলা করে। মামলায় ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে আবদুল আহাদসহ তিনজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। অভিযানের সংবাদ পেয়ে আজিজুল ইসলাম ও তার আরেক ছেলে মিজানুর রহমান আশিক শনিবার সকালে দেশ ত্যাগ করেন। তাদের ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে গণমাধ্যমকর্মীদের বিষয়টি জানান আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব-১১ অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মোহাম্মদ পাশা। কমান্ডার মঈন বলেন, শনিবার র‌্যাব-১১ খবর পায় মালবাহী দুটি কনটেইনারে করে শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে মাদকদ্রব্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছে। পরে র‌্যাব-১১-এর একটি দল রাত ১০টা ৫০ মিনিটে সোনারগাঁ থানাধীন টিপরদী গ্রামের সালাউদ্দিনের পার্কিং স্ট্যান্ডের সামনে চেকপোস্ট স্থাপন করে। বিভিন্ন গাড়ি তল্লাশির একপর্যায়ে রাত আনুমানিক সোয়া ১১টার দিকে সন্দেহভাজন দুটি কনটেইনার টেইলারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৩৬ হাজার ৮১৬ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার মাদকের মূল্য সরকারি হিসাবে ৩১ কোটি ৫৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তবে বেসরকারি হিসাবে চালানটির মূল্য অর্ধশতাধিক কোটি টাকা। তিনি বলেন, লরির চালকরা প্রথমে জানান কনটেইনারে সিগারেট রয়েছে। র‌্যাবের সন্দেহ হলে ওই দুই চালককে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেন কনটেইনারে মদের চালান রয়েছে। কুমিল্লা ইপিজেড ও ঈশ্বরদী ইপিজেডের নামে ভুয়া চালান তৈরি করে পোশাক কারখানার পণ্যের আড়ালে মদের বিশাল চালানটি আমদানি করা হয়। তবে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। পরে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলামের নাম। তিনি শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। এর আগেও তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। গ্রেফতার আবদুল আহাদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে আল মঈন বলেন, তার বাবা আজিজুল ইসলাম ও ভাইসহ সবাই মদ আমদানি করতেন। শুধু চলতি বছরই চারটি মদের চালান এনেছেন। প্রতিটি চালানে অন্তত ১৪ হাজার বোতল বিদেশি মদ শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দুবাই থেকে তারা দেশে আনতেন। এর সঙ্গে কতিপয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টও জড়িত। ওই সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মাধ্যমে পোর্ট থেকে ভুয়া কাগজপত্র প্রদর্শন করে গার্মেন্ট পণ্যের নামে তারা মদের চালান খালাস করতেন। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা শনিবার চালানটি আটকের পর প্রথমে নারায়ণগঞ্জ কাস্টম কর্মকর্তাদের জানাই। সিলগালা করা কনটেইনারটি খোলার পর তারাও চালানটি দেখে অবাক হয়েছেন। পরে তাদের উপস্থিতিতেই গণনা শুরু করা হয়। শুল্ক কর্মকর্তারাও তদন্ত শুরু করেছেন।’ র‌্যাব কর্মকর্তারা বলেন, এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা আজিজুল ইসলাম। এক বছর ধরে তিনি এই অবৈধ কারবারের সঙ্গে জড়িত। অবৈধ মাদক আমদানির ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন কোম্পানির কাগজপত্র ব্যবহার করে থাকে। চক্রটি দেশে টিভি ও গাড়ির পার্টস ব্যবসার আড়ালে অবৈধ মাদকদ্রব্য বিপণন নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। অবৈধ মাদক বিদেশ থেকে আনার পর মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, রাজধানীর বংশাল ও ওয়ারীতে ওয়্যারহাউসে রাখা হয়। পরে সুবিধাজনক সময়ে অবৈধ মাদক বিপণন করা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে পরিবহন করা ট্রাক/কনটেইনার থেকে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তবে দুবাইয়ে থাকা মাস্টারমাইন্ড নাসির সেখানে একটি বিলাসবহুল হোটেলে কর্মরত। ওই হোটেলের নাম সুইস ইন্টারন্যাশনাল। তার কাছে ইউপি চেয়ারম্যান দুবাইয়ে গিয়েছেন অন্তত ১০ বার। তার ছেলে আশিকও ১০ বার গিয়েছেন। আর গ্রেফতার আহাদ দুবাই গিয়েছেন ছয়বার। তারা দুবাই থেকে মদের চালান এনে দেশে বড় সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর