মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

গরুর গাড়ি এখন রূপকথার গল্প

নওগাঁ প্রতিনিধি

গরুর গাড়ি এখন রূপকথার গল্প

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্রাম বাংলার একসময়ের জনপ্রিয় গরুর গাড়ি যেন রূপকথার গল্প। দেশের সবখানেই যাতায়াত ও পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যান ছিল গরুর গাড়ি। মৎস্য ও শস্যভাণ্ডার খ্যাত নওগাঁর আত্রাইয়ের এক সময়ের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল গরুর গাড়ি। সময়ের পরিবর্তনে এটি এখন বিলুপ্তির পথে। গরুর গাড়ির চালককে বলা হয় গাড়িয়াল। চালককে উদ্দেশ করে রচিত হয়েছে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’, ‘আস্তে বোলাও গাড়ি, আরেক নজর দেখিয়া ন্যাং মুই দয়ার বাপের বাড়িরে গাড়িয়াল’ এরকম যুগান্তকারী ভাওয়াইয়া গান। দুই যুগ আগেও গরুর গাড়িতে চড়ে বর-বধূ যেত। গরুর গাড়ি ছাড়া বিয়ে কল্পনাও করা যেত না। বিয়ে বাড়ি বা মাল পরিবহনে গরুর গাড়ি ছিল একমাত্র বাহন। কৃষিজাত দ্রব্য ও ফসল বহনের কাজে এর প্রচলন ছিল ব্যাপক।

গরু গাড়ি দুই চাকা বিশিষ্ট গরু বা বলদে টানা এক প্রকার যান। এ যানে সাধারণত একটি মাত্র অক্ষের সঙ্গে চাকা দুটি যুক্ত থাকে। গাড়ির সামনের দিকে একটি জোয়ালের সঙ্গে দুটি গরু বা বলদ জুটি মিলে গাড়ি টেনে নিয়ে চলে। সাধারণত চালক বসেন গাড়ির সামনের দিকে। আর পেছনে বসেন যাত্রীরা। বিভিন্ন মালপত্র বহন করা হয় গাড়ির পেছন দিকে। গরুর গাড়ির ইতিহাস সুপ্রাচীন। খ্রিস্টজন্মের ১৬০০-১৫০০ বছর আগে সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল। যা ক্রমে ক্রমে দক্ষিণেও ছড়িয়ে পড়ে। উত্তরাঞ্চলের পল্লী এলাকার জনপ্রিয় বাহন ছিল গরুর গাড়ি। মানুষ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের জন্য বাহন হিসেবে ব্যবহার করছে ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন মালগাড়ি। মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি, বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা ইত্যাদি। ফলে গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পড়ে না গরুর গাড়ি। অথচ গরুর গাড়ির একটি সুবিধা হলো, এতে কোনো জ্বালানি লাগে না।

ফলে ধোঁয়া হয় না। পরিবেশের কোনো ক্ষতিও করে না। এটি পরিবেশবান্ধব বাহন। ধীরগতির কারণে দুর্ঘটনারও আশঙ্কা থাকে না। যুগের বিবর্তনে আমাদের প্রিয় এই গরুরগাড়ি আজ হারিয়ে যাচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর