শিরোনাম
বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

বিপুল বিদেশি মদে তোলপাড়, আলোচনায় ইউপি চেয়ারম্যান

সাখাওয়াত কাওসার

বিপুল বিদেশি মদে তোলপাড়, আলোচনায় ইউপি চেয়ারম্যান

ব্যাটারির আড়ালে শ্রীনগর ষোলঘরে ‘গোল্ডেন অটো’র গোডাউনে ঢুকত বিদেশি ব্র্যান্ডের দামি দামি মদ। অটোরিকশার ব্যাটারির আমদানিকারক ষোলঘর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হওয়ায় স্থানীয়দের ধারণা ছিল, গভীর রাতে বড় বড় কনটেইনার লরিতে করে ব্যাটারি ঢুকছে গোডাউনে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপকমিটির সদস্য এবং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হওয়ার কারণে ওই গোডাউন নিয়ে সন্দেহ তো দূরের কথা, কেউ চোখ তুলে তাকাত না। সোনারগাঁ থানায় আজিজুল ইসলামের ছোট ছেলে আবদুল আহাদসহ তিনজন তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের এমনই তথ্য দিয়েছেন। আবদুল আহাদ দুই দিন এবং দুই লরির চালক তিন দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের দুই চালান ও চট্টগ্রাম বন্দরে জব্দ হওয়া আরও তিন চালানের সঙ্গে জড়িত থাকায় ১০ জনকে হন্যে হয়ে খুঁজছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। সম্ভাব্য সবগুলো স্থানে তারা এরই মধ্যে দফায় দফায় অভিযান চালিয়েছে।

র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মোহাম্মদ পাশা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছি। আমাদের একাধিক টিম অপরাধীদের ধরতে মাঠে কাজ করছে।

একাধিক সূত্র এবং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যারা এখনো দেশ ছেড়ে পালাতে পারেননি তাদের ব্যাপারে সবগুলো স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর এবং বিমানবন্দরগুলোকে অবহিত করা হয়েছে। যদিও ইতোমধ্যে তারা জানতে পেরেছেন, বন্দরের সিএন্ডএফ ‘মেসার্স জাফর আহমেদ’-এর মালিক জাফর আহমেদের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী শনিবারই ইতোমধ্যে দেশ ছেড়েছেন। জাফর আহমেদের বাড়ি ফেনীতে। চট্টগ্রামের ডবলমুরিংয়ে তাদের একটি গাড়ির শোরুমও রয়েছে। জব্দ হওয়া চালানগুলোতে জাফর আহমেদের সঙ্গে আরও একজন প্রভাবশালীর সম্পৃক্ততা আছে বলে জানতে পেরেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। চালানগুলোর মালিক আজিজুল ইসলাম ও তার বড় ছেলে মিজানুর রহমান আশিক (২৪) শনিবার দুবাই পাড়ি দিয়েছেন। এরই মধ্যে মদের আজিজুল ইসলামের মদের সাপ্লাই চেইনের দুজন বিশ্বস্ত দুই গাড়ি চালকের নাম জানতে পেরেছেন তারা। এরা রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন এলাকার নামিদামি ক্লাব এবং বারে মদ সরবরাহ করতেন।

সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান জানান, আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করছি। রিমান্ডে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন আসামিরা। তবে সেগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এলাকায় তারা ব্যাটারি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। মানুষ ভাবত তাদের গোডাউনে ব্যাটারি ঢোকানো হয়। আসামির দেওয়া তথ্যের বিশ্লেষণ করে আমরা অন্তত এতটুকু নিশ্চিত এরা রাষ্ট্রকে শত শত কোটি টাকা ফাঁকি দিয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরে টানা তিন দিনে আটক হয়েছে পাঁচটি মদের চালান। এ ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এত এত পরিমাণ মদ কোত্থেকে আসে, কীভাবে আসে, আবার বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে খালাস হয় সেটি নিয়েও জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। এর মধ্যেই সর্বশেষ সোমবার চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) সিএফএস শেড থেকে মদ ও সিগারেটের দুটি চালান আটক করে চট্টগ্রাম কাস্টমসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখার কর্মকর্তারা। পণ্য চালান দুটি মিথ্যা ঘোষণায় মদ আমদানির মাধ্যমে ২০ কোটি ৬৮ লাখ রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করে।

চালান দুটির মধ্যে একটি এসেছে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল (বিডি) লিমিটেডের নামে। ওই চালানে সিনথেটিক প্লাস্টিকজাত পণ্য তৈরির কাঁচামাল পলিপ্রপলিন রেজিন আমদানির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। গত ১২ জুলাই জাহাজে কনটেইনারটি চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। এ ছাড়া টেক্সটাইল সুতা আমদানির ঘোষণা দিয়ে বাগেরহাটের মোংলা ইপিজেডের ভিআইপি ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের নামে আসা চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে আসে গত ২ জুলাই। চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার ভোরে নারায়ণগঞ্জের সোনাগাঁয়ে জব্দ হওয়া দুটি কনটেইনার আইপি জালিয়াতির মাধ্যমে কুমিল্লা ও পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডের হেশি টাইগার কোম্পানি ও বিএইচকে টেক্সটাইলের নাম ব্যবহার করে কনটেইনার দুটি খালাস করা হয়। চীন থেকে আসা ১৯ হাজার ৬৫০ কেজি ও ২০ হাজার ৭৫০ কেজি ওজনের কনটেইনার দুটির বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে চট্টগ্রামের ডবলমুরিংয়ের কেবি দোভাষ লেনের জাফর আহমেদ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় চালান দুটিতে ১ হাজার ৩৩০টি কার্টনে পাসপোর্ট স্কচ হুইস্কি, ভ্যালান্টাইনস স্কচ হুইস্কি, ম্যাটেউস দ্য অরিজিনাল ওয়াইন, চিভাস রিগাল স্কচ হুইস্কি, জনি ওয়াকার রেড লেবেল/ব্ল্যাক লেবেল স্কচ হুইস্কি, টিচার্স হাইল্যান্ড স্কচ হুইস্কি, স্মারনফ ভদকা ও রেড রোজ ব্র্যান্ডের মদ পাওয়া যায়। এর মোট পরিমাণ ৩১ হাজার ৬২৫ লিটার। এসব মদের আনুমানিক শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। উচ্চ শুল্কের পণ্য হওয়ায় এই চালানের মাধ্যমে ২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানায় চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

গার্মেন্টস পণ্যের মিথ্যা ঘোষণায় এই মদ আমদানির পেছনে রয়েছে মুন্সীগঞ্জকেন্দ্রিক একটি চক্র, যাদের নেটওয়ার্ক দুবাই পর্যন্ত বিস্তৃত। দুবাই বসে চক্রের কলকাঠি নাড়ছেন নাসির উদ্দীন নামে এক ব্যক্তি। তার বাড়িও মুন্সীগঞ্জে। চলতি বছরই তারা আরও তিনটি চালানে মিথ্যা ঘোষণায় প্রায় ৪৮ হাজার বোতল বিদেশি মদ এনেছে।

অন্যদিকে রবিবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আরও একটি মদভর্তি কনটেইনার আটক করে কাস্টমসের এআইআর শাখা। নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি লিমিটেডের নামে আসা চালানটির শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় ১৫ হাজার ২০৪ লিটার মদ পাওয়া যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর