বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

১২ মাসই খোঁড়াখুঁড়ি ঢাকায়

গুলশানে আবার কাটা হচ্ছে রাস্তা, বারবার হয় সমন্বয় নেই কারও

হাসান ইমন

১২ মাসই খোঁড়াখুঁড়ি ঢাকায়

রাজধানীতে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বিড়ম্বনা ও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন পথচারীরা। ছবিটি গুলশান-১ ডিএনসিসি মার্কেটের সামনে থেকে তোলা । ছবি : রোহেত রাজীব

রাজধানীর অভিজাত হিসেবে খ্যাত গুলশান এলাকা। এই অভিজাত এলাকার বিভিন্ন সড়ক, এমনকি মূল সড়কেও চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। কোথাও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো), আবার কোথাও খোদ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন চালাচ্ছে এ কর্মযজ্ঞ। ড্রেনেজ, ফুটপাত, মিডিয়ামওয়ে ও বৈদ্যুতিক তার মাটির নিচ দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে চলছে এ কাজ। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সড়কে সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়িতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।

সরেজমিনে দেখা যায়, গুলশান-১ থেকে মহাখালী আমতলী সড়কে চলছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বৃহৎ কর্মযজ্ঞ। সড়কের মধ্যখানে মিডিয়ামওয়ের পাশে প্রায় ১০ ফুট অংশ কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। ড্রেন নির্মাণে কোথাও রাখা হয়েছে পাইপ। এখনো চলছে সড়ক খননের কাজ। রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে অনেক পথচারী গর্তে পড়েও গেছেন। আবার অনেককে খুব সতর্কতার সঙ্গে পার হতে দেখা গেছে। এ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলা রাস্তার উন্নয়ন কাজের কারণে বাড়ছে যানজট ও জনদুর্ভোগ। ফলে চলাচলে প্রতিবন্ধকতার কারণে এ রাস্তা পাড়ি দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নগরবাসীকে। ফলে একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা, তেমনি পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় ভোগান্তি।

গতকাল সকাল ৮টায় রাজধানীর রামপুরা থেকে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে যেতে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে রওনা দেন শহিদুল ইসলাম। গুলশান-১-এ এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তার। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় যানজট থাকায় হাতে সময় নিয়ে বের হয়েছি। পাসপোর্ট অফিসে যত দ্রুত যেতে পারব তত তাড়াতাড়ি ফিরতে পারব। কিন্তু হলো না। গুলশান-১-এ আসতে সময় লেগেছে ২ ঘণ্টা। এখানে অনেকক্ষণ জ্যামে পড়ে আছি। এই জ্যাম কখন যে পরিষ্কার হয় জানি না। আর পাসপোর্ট অফিসে কখন পৌঁছাব সেটাও জানি না।’ তিনি বলেন, এখানে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে যানজট তৈরি হচ্ছে। এই সড়কের অনেকটা জায়গা কেটে ফেলা হয়েছে। এতে সড়ক সরু হয়ে গেছে। ফলে যানজট তৈরি হচ্ছে। এ কাজগুলো দ্রুত না করলে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গুলশান-১ থেকে আমতলী সড়কের এক কিলোমিটারে ড্রেন, ফুটপাত ও মিডিয়ামওয়ে সংস্কার করা হবে। প্রাথমিকভাবে ড্রেনের সংস্কার শুরু হয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে ফুটপাত ও মিডিয়ামওয়ে নির্মাণ করা হবে।

একই অবস্থা গুলশান-২ এলাকার বিভিন্ন সংযোগ সড়কের। এ এলাকায় ডেসকো বৈদ্যুতিক সংযোগের জন্য সড়ক খুঁড়ে রেখেছে। প্রায় এক মাস ধরে ওই সড়কের অচলাবস্থা। বৈদ্যুতিক সেবা সংযোগ কাজের জন্য তারা ইচ্ছেমতো খোঁড়াখুঁড়ি করেছে। তাদের কাজের ধরন এমন যে, ঢিমেতালে যেভাবে হোক তারা তাদের কাজ করছে। তাদের কাজের জন্য নগরবাসীর সীমাহীন দুর্ভোগ হচ্ছে, সেদিকে তাদের কোনো দৃষ্টি নেই। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গুলশান এলাকার ৮০, ৮৪, ৯০, ১০৪ সড়কের ১ ফুট অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। সংস্কার কাজ করতে গিয়ে সড়ক খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে মাটি, বালু। এতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। কোথাও কোথাও কাজ শেষ করে বালু ভরাট করে রেখে দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির মৌসুম হওয়ায় এসব স্থানে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। এতে সড়কে চলাচলকারী যানবাহন খানাখন্দে পড়ে দেবে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন অনেকে। এ বিষয়ে ৯০ নম্বর সড়কে কথা হয় রিকশাচালক যুবরাজের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই সড়কটির কাটা অংশে দুই মাস হলো বালু ভরাট করে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন সময় গাড়িকে সাইড দিতে গিয়ে মাটিতে আটকে যাই। কয়েকজন রিকশাচালক পড়েও গেছেন। আর রাস্তার সংস্কার শেষ না করায় যানজটও তৈরি হচ্ছে এ সড়কে।’ সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নগরবাসীকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে আমরা সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করেছি। আমরা এখন কাউকে সড়ক কাটার জন্য অনুমতি দিইনি। তবে ডেসকো যে কাজ এখন করছে, সেটা আগের অনুমতি নেওয়া।’ তিনি বলেন, ‘এই সময় সড়ক সংস্কারের নিয়ম নেই। কিন্তু জনগুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়, যেগুলো করা লাগে। নইলে জলাবদ্ধতা, এমনকি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। এ জন্য কিছু কাজ করা লাগে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, গুলশান-১ থেকে আমতলী সড়কের সংস্কার কাজ। তবে নাগরিক ভোগান্তি লাঘবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর