বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

পুরনো মামলা নিষ্পত্তিতে অগ্রাধিকার

বিচারকদের প্রতি সুপ্রিম কোর্টের চিঠি, ১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৬ হাজার মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ

আরাফাত মুন্না

পুরনো মামলা নিষ্পত্তিতে অগ্রাধিকার

দেশের অধস্তন আদালতে বিচারাধীন পুরনো মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে অগ্রাধিকার দিয়ে ২০০০ সালের পূর্বে দায়ের হওয়া প্রায় ৬ হাজার মামলা চিহ্নিত করে আগামী ১ ডিসেম্বরের মধ্যে এগুলোর নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। সম্প্রতি এসব মামলার তালিকা যুক্ত করে অধস্তন আদালতের বিচারকদের প্রতি নির্দেশনাসহ চিঠি দেওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট থেকে।

সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালের আগে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা ৫ হাজার ৮৬১টি। এর মধ্যে এমন মামলার সংখ্যা ঢাকায় সবচেয়ে বেশি। এই জেলায় ২২ বছরের পুরো মামলার সংখ্যা ৬১৫টি। এরপর উল্লেখযোগ্য জেলার মধ্যে পর্যায়ক্রমে রয়েছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জ, বাগেরহাট, গাজীপুর ও খুলনা।

সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের অধস্তন আদালতগুলোতে বিচারাধীন রয়েছে ৩৬ লাখ ৯৮ হাজার ২১৬টি। এর মধ্যে পাঁচ বছরের অধিক দেওয়ানি ও ফৌজদারি পুরাতন মামলা বিচারাধীন রয়েছে সাড়ে ৬ লাখেরও বেশি। এ ছাড়া দেশের উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে আরও সোয়া ৫ লাখ মামলা। এই তথ্যানুযায়ী উচ্চ ও অধস্তন আদালত মিলিয়ে মোট বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪২ লাখেরও বেশি।

অধস্তন আদালতে পাঠানো প্রধান বিচারপতির নির্দেশনা সংবলিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘কাক্সিক্ষত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি বিচারপ্রার্থীদের প্রত্যাশা। দীর্ঘ ২২ বছরের অধিককাল মামলা বিচারাধীন থাকায় আদালত তথা বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত থাকা মামলা ছাড়া ২০০০ সাল ও তার পূর্বের মামলাগুলো সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। এমতাবস্থায় আপনার আদালতে ২০০০ সাল ও তার পূর্বের বিচারাধীন পুরাতন মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চলতি বছরের ১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য  আপনাকে নির্দেশ প্রদান করা হলো। একই সঙ্গে সংযুক্ত তালিকায় উল্লিখিত মামলাগুলো ১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিষ্পত্তি করে তার বিবরণী অত্র কোর্টে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করা হলো।’ জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মামলাজট নিরসনে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এর অংশ হিসেবে তিনি পুরনো মামলা নিষ্পত্তিতে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। সাইফুর রহমান বলেন, পুরনো মামলা নিষ্পত্তিতে প্রধান বিচারপতির নির্দেশনার পর সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। এসব মামলার মধ্যে যেগুলো উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে, সেগুলোর বিষয়েও যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এই কর্মকর্তা। জানা গেছে, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী গত ১ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরদিন আপিল বিভাগে তাঁকে দেওয়া আইনজীবীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি মামলা জট কমাতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধান বিচারপতি ২৭ জানুয়ারি আট বিভাগের জন্য হাই কোর্ট বিভাগের আটজন বিচারপতির নেতৃত্বে পৃথক মনিটরিং কমিটি গঠন করেন।  ওই নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমানে ঢাকা বিভাগে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম, খুলনা বিভাগে বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, বরিশাল বিভাগে বিচারপতি জাফর আহমেদ, চট্টগ্রাম বিভাগে বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা, সিলেট বিভাগে বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, রংপুর বিভাগে বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিন, ময়মনসিংহ বিভাগে বিচারপতি মো. জাকির হোসেন ও রাজশাহী বিভাগে বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান অধস্তন আদালত মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। আর প্রতিটি বিভাগে সংশ্লিষ্ট বিচারককে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনে কর্মরত আটজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা। জানা গেছে, মনিটরিং কমিটি গঠনের পর বিচারিক আদালতের বিচার কার্যক্রম তদারকিতে গতি বেড়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারপতিরা বিভিন্ন আদালত পরিদর্শন করেছেন। বিচারকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এ ছাড়া বিচার কাজে গতিশীলতা এনে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করেছেন। গত ১ মার্চ প্রধান বিচারপতি মনিটরিং কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারপতিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর পর একাধিক বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। গত ১৪ মার্চ জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে সাত দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে অধস্তন আদালতের বিচারকদের প্রতি।

সর্বশেষ খবর