বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

রহস্যের বেড়াজালে যুক্তরাজ্য প্রবাসীর পরিবারের ট্র্যাজেডি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে যুক্তরাজ্য প্রবাসী পরিবারের পাঁচ সদস্যকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার ও বাবা-ছেলের মৃত্যুর ঘটনাটি এখনো রহস্যাবৃত। একসঙ্গে পরিবারের পাঁচ সদস্য অচেতন হওয়ার কারণ উদঘাটন করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঘটনার পর একই বাসায় সুস্থ অবস্থায় থাকা স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করেও গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য পায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাই এই ট্র্যাজেডির রহস্য উদঘাটনে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পরিবারের সদস্যদের সুস্থতা ও মৃত দুজনের ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। গতকাল ময়নাতদন্ত শেষে ঘটনায় মৃত যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে মাইকুল ইসলামের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর স্কুল রোডের ভাড়া বাসা থেকে একই উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের ধিরারাই খাতুপুর গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম (৫০), তার স্ত্রী হোসনে আরা বেগম (৪৫), ছেলে মাইকুল ইসলাম (১৬) ও সাদিকুল ইসলাম (২৫) এবং মেয়ে সামিরা ইসলামকে (২০) অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের ওসমানী মেডিকেলে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকি তিনজন এখনো হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, চিকিৎসাধীন হোসনে আরা বেগম ও সাদিকুল ইসলামের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে অবনতি হয়েছে মেয়ে সামিরার শারীরিক অবস্থা। ভিকটিম পরিবার সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাতে যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে ওই বাসায় রাতযাপন করেন তার শ্বশুর আনফর আলী, শাশুড়ি বদরুন্নেছা, শ্যালক দেলোয়ার হোসেন, শ্যালকের স্ত্রী শোভা বেগম ও মেয়ে সাবিলা বেগম। ঘটনার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তাদের হেফাজতে নেয়। এ ছাড়া সোমবার দুপুরে রফিকুলের বাসায় আরও কয়েকজন আত্মীয় বেড়াতে এসেছিলেন। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। তবে তাদের দেওয়া তথ্য থেকে ওই ট্র্যাজেডির রহস্য উদঘাটন সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশ সুপার আরও জানান, ‘খাদ্যে বিষক্রিয়া থেকে এই ট্র্যাজেডি ঘটেছে এমনটাও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তাই রহস্য উদঘাটনে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই পরিবারের সদস্যদের সুস্থ হওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। তারা সুস্থ হলে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। তাদের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে আত্মীয়-স্বজনদের দেওয়া বক্তব্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। এ ছাড়া মৃত বাবা-ছেলের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলেও মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’ প্রসঙ্গত, গত ১২ জুলাই রফিকুল ইসলাম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন। এরপর ঢাকায় এক সপ্তাহ থেকে ১৮ জুলাই তাজপুর স্কুল রোডের একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। সোমবার রাতের খাবার খেয়ে স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েদের নিয়ে বাসার একটি কক্ষে রফিকুল এবং অপর দুটি কক্ষে শ্বশুর-শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী ও শ্যালকের মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে বাসার অন্যান্য কক্ষে থাকা আত্মীয়রা ডাকাডাকি করে রফিকুলদের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন দেন। খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে ওসমানীনগর থানা পুলিশের একটি দল গিয়ে দরজা ভেঙে অচেতন অবস্থায় পাঁচ যুক্তরাজ্য প্রবাসীকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেলে পাঠায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম ও মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাকি তিনজনকে হাসপাতালের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

 

সর্বশেষ খবর