শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

অর্পিতায় তোলপাড় পশ্চিমবঙ্গ

উদ্ধার আরও ৪০ কোটি রুপি মন্ত্রী পার্থর অপসারণ

কলকাতা প্রতিনিধি

অর্পিতায় তোলপাড় পশ্চিমবঙ্গ

পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ (এসএসসি স্ক্যাম) দুর্নীতি মামলায় ফের বিপুল অঙ্কের অর্থের খোঁজ পেল ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। রাজ্যের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও বর্তমান শিল্প বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখার্জির বেলঘরিয়ার বহুতল আবাসনের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় আরও ৪০ কোটি রুপি। এর আগে উদ্ধার করা হয় ২১ কোটি ৯০ লাখ রুপি। রথতলায় ‘ক্লাব টাউন হাইটস’ নামে একটি বহুতল আবাসনের অর্পিতার নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। সেখানেই বুধবার সকালে অভিযান চালায় ইডির তদন্তকারী কর্মকর্তারা। কিন্তু ফ্ল্যাট দুটি বন্ধ থাকায় তালা ভেঙে ওই দুটি ফ্ল্যাটে ঢুকে ইডির কর্মকর্তারা। তারই একটি ফ্ল্যাট ব্লক-৫ এ বিপুল অর্থের সন্ধান পায় ইডি। যা দেখে চোখ কপালে ওঠে ইডির কর্মকর্তাদের। এই বিপুল অর্থ গোনার জন্য চারটি ক্যাশ কাউন্টিং মেশিন নিয়ে আসা হয়। শুরু হয় গণনা। বিপুল অর্থ নিয়ে যাওয়ার জন্য রাত ১১টা নাগাদ ক্যাশ বহনকারী একটি গাড়ি আসে ওই ফ্ল্যাটে। ইডির তরফ থেকে রুপির যে ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে তাতে অর্থের পরিমাণ আনুমানিক ৪০ কোটি রুপি হতে পারে। উদ্ধার করা হয় প্রচুর স্বর্ণের জিনিস এবং অন্যান্য নথি।

এই আবাসনের অন্য ফ্ল্যাটটি এদিন সিলগালা করে দেয় ইডির কর্মকর্তারা। সেখানে একটি নোটিসও টাঙিয়ে দেয় তারা। অর্পিতার বেলঘরিয়ার দেওয়ান পাড়ায় পৈতৃক বাড়িতেও এদিন ইডি কর্মকর্তারা যান। ভিতরে প্রবেশে বাধা দেন অর্পিতার বৃদ্ধা মা মিনতি মুখার্জি। পরে তাকে বুঝিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে অভিযান চালায়। যদিও সেখান থেকে আপত্তিকর কোনো নথি বা জিনিস পাওয়া যায়নি। 

দুর্নীতি মামলায় গত ২২ জুলাই মধ্য রাতে গ্রেফতার করা হয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। আদালতের নির্দেশে বর্তমানে ইডি হেফাজতে রয়েছেন তিনি। ওইদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দক্ষিণ কলকাতার নাকতলার বাড়িতে তদন্ত চালায় ইডির কর্মকর্তারা। কিন্তু তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ওই দিনেই অর্পিতার টালিগঞ্জের করুণাময়ী এলাকায় ডায়মন্ড সিটি আবাসনে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার হয় ২১ কোটি ৯০ লাখ রুপি। রুপি ছাড়াও অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে বাজেয়াপ্ত হয় ৭৯ লাখ রুপির গয়না, ৫৪ লাখ রুপির বিদেশি মুদ্রা, ২০টি মোবাইল। অর্পিতার বাড়িতে টাকার পাহাড়ের মাঝেই উচ্চশিক্ষা দফতরের খামও পাওয়া যায়। এর পরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় অর্পিতাকে। পরে ২৪ জুলাই তাকে গ্রেফতার করে ইডি। ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে নবম ও দশম শ্রেণিতে শিক্ষক, গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি পদে নিয়োগ মামলায় প্রায় ৫০০ কোটি রুপির দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। এই আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন সময়েই।

পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত পার্থ চট্টোপাধ্যায় : পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার ছয় দিন পর অবশেষে মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারিত হলেন মমতা ব্যানার্জি মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

গতকাল রাজ্য সরকারের সচিবালয় নবান্নের তরফ থেকে মুখ্য সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর স্বাক্ষর করা একটি বিবৃতি জারি করে এ কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি পরিষদীয় এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সে ক্ষেত্রে ওই তিনটি দফতর থেকেই সরিয়ে দেওয়া হলো পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। আপাতত ওই তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বই নিজের হাতে রাখবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। উল্লেখ্য, দুর্নীতি মামলায় ২২ জুলাই মধ্য রাতে গ্রেফতার হন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আদালতের নির্দেশে বর্তমানে ইডি হেফাজতে রয়েছেন তিনি। ওই দিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দক্ষিণ কলকাতার নাকতলার বাড়িতে তদন্ত চালান ইডির কর্মকর্তারা। কিন্তু তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পার্থর সঙ্গেই গ্রেফতার হন তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ নারী মডেল ও অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। শুধু তা-ই নয়, টালিগঞ্জ ও বেলঘরিয়ার রথতলা এলাকায় দুটি আবাসনে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৫০ কোটি রুপি উদ্ধার করেন ভারতের ইডির কর্মকর্তারা।

২২ জুলাই অর্পিতার টালিগঞ্জের করুণাময়ী এলাকায় ডায়মন্ড সিটি আবাসনে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার হয় ২১ কোটি ৯০ লাখ রুপি। রুপি ছাড়াও অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে বাজেয়াপ্ত হয় ৭৯ লাখ রুপির গয়না, ৫৪ লাখ রুপির বিদেশি মুদ্রা ও ২০টি মোবাইল। অর্পিতার বাড়িতে টাকার পাহাড়ের মধ্যে উচ্চশিক্ষা দফতরের খামও পাওয়া যায়। এর পরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় অর্পিতাকে। পরে ২৪ জুলাই তাকে গ্রেফতার করে ইডি।

এরপর ২৭ জুলাই বেলঘরিয়ার রথতলায় ‘ক্লাব টাউন হাইটস’ নামে একটি বহুতল আবাসনের অর্পিতার দুটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালান ইডির কর্মকর্তারা। এরই একটি থেকে উদ্ধার হয় ২৭ কোটি ৯০ লাখ রুপি। এ ছাড়া ছিল ৪ কোটি ৩১ লাখ রুপি মূল্যের স্বর্ণের জিনিস, জমির দলিল, হার্ডডিস্ক ইত্যাদি। উদ্ধার অর্থের বেশির ভাগই ছিল বিছানার তলায়। বাকিটা ছিল শৌচাগারের ভিতরে। একের পর অভিযোগ উঠে আসায় তৃণমূলের অভ্যন্তরে পার্থকে অপসারণের দাবি ওঠে।

সর্বশেষ খবর