শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

ভর্তি পরীক্ষার প্রক্সিতে ৩০ সদস্যের গ্যাং

মর্তুজা নুর, রাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন চারজন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উঠে এসেছে ৩০ সদস্যের একটি গ্যাংয়ের তথ্য। যারা ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি হিসেবে কাজ করেছেন। আর এ গ্যাংটি পরিচালিত হয়েছে নওগাঁর একটি হোটেল থেকে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাছ থেকে এসব তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, প্রক্সি চক্রের চারজন গ্রেফতার হলেও একাধিক ভুয়া প্রার্থী পার পেয়ে গেছেন। যারা প্রক্সি পরীক্ষা দিয়েছেন তার অধিকাংশই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তাদের কেউ কেউ কোনো না কোনো কোচিং সেন্টারের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। আর সেখান থেকেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচয় ও প্রক্সির জন্য দেনদরবার হয়। তবে তাদের মূল হোতা হিসেবে কাজ করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন প্রভাবশালী শিক্ষার্থী। তার মধ্যে একজন পুরো চক্রটির প্রধান। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা মূল হোতা হিসেবে কাজ করেছেন তার মধ্যে একজন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। তার আয়ের কোনো পথ না থাকলেও জুলাই পর্যন্ত তার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে ৪২ লাখ ২৪ হাজার ৭৫৮ টাকা। ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি খোলা হয় ২০১৬ সালের ২২ মার্চ। তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আরেক শিক্ষার্থী। জানা গেছে, তাদের আটকের জন্য কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মঙ্গলবার প্রক্সি দিতে গিয়ে গ্রেফতার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জান্নাতুল মেহজাবিনের কাছ থেকেও পাওয়া গেছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এর আগেও বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষার প্রক্সি দিয়েছেন তিনি। গত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দিয়ে তিনজনকে পাস করান। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্টে পাওয়া গেছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মেহজাবিনের সঙ্গে প্রক্সি দিতে যান রনি নামে আরেক ভুয়া প্রার্থী। পরীক্ষা শুরুর আগে রনির সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার কথা বলেন মেহজাবিন। এ ছাড়া পরীক্ষা শেষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় গোপনে রনিকে একটি খুদেবার্তাও পাঠান তিনি। সেখানে রনিকে তার আটক হওয়ার বিষয়টি জানান। লিখেন, ‘কই তুমি, আমি ধরা খাইছি।’ রনির সঙ্গে মেহজাবিনের মেসেঞ্জারে বিভিন্ন সময়ের কথোপকথনের চ্যাট থেকে এর আগেও বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রক্সি দেওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। রনি ও মেহজাবিন মূলত কাজ করেন জুয়েল নামে জনৈক ব্যক্তির অধীনে। রাবির প্রক্সি চক্রের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক জানান, জালিয়াতির ঘটনায় অভিযুক্তদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এদের সঙ্গে কারা জড়িত তা খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছু তথ্য এরই মধ্যে পেয়েছে। এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘আমাদের তদন্ত চলমান। আশা করছি খুব দ্রুত প্রমাণ সাপেক্ষে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারব।

সর্বশেষ খবর