রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

সেই খুনি ছিনতাইকারী চক্র এখনো হয়নি গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তরার আবদুল্লাহপুরে ছুরিকাঘাতে নিহত সাহেদের খুনি ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অথচ ছিনতাইকারী চক্রটি প্রতিদিন ওই এলাকায় ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, আবদুল্লাহপুরের এই পয়েন্টে ছিনতাইকারীদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি। একটু সুযোগ পেলেই যাত্রীদের লাগেজ, মোবাইল, চেইন, মানিব্যাগ নিয়ে দিনদুপুরে টান দেয়। আর রাত হলেই অস্ত্রধারী ছিনতাইকারীরা অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাই করে। বিশেষ করে টঙ্গী থেকে আসা একটি গ্রুপ খুব সক্রিয়।

টঙ্গী ব্রিজ পার হয়ে আবদুল্লাহপুরে এসে ছিনতাই করে। আবদুল্লাহপুর ব্রিজের উত্তর পাশ টঙ্গীতে একটি অস্ত্রধারী ছিনতাইকারী গ্রুপ রয়েছে। ছিনতাইয়ের সময় বাধা দিলেই তারা আক্রমণ করে। সাহেদ হত্যার আগেও জিসান নামে এক কলেজছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা করে তারা। ছিনতাইকারী গ্রুপের মধ্যে ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের সুমন মোল্লা, ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের নাজমুল, ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের হুমায়ুন, একই এলাকার ইউসুফ, কাইল্যা সাগর, রনি, জুয়েল ও জীবন, ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের রহিম ও পারভেজের নাম উল্লেখযোগ্য।

অভিযোগ রয়েছে, ছিনতাইকারী এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন সোহেল রানা। তিনি ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের রাসেলকে দিয়ে পুরো সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। স্থানীয় লোকজন বলছেন, কিশোর গ্যাংয়ের অন্তত অর্ধশত সদস্য রয়েছে তাদের দলে। এরাই ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত।

জানা গেছে, ৬ জুন রাত ১টার দিকে টঙ্গী ব্রিজ দিয়ে হেঁটে পার হচ্ছিলেন মো. সাহেদ হোসেন (২২)। ব্রিজের মাঝামাঝি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন তিনি। ছিনতাইকারীরা তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা ধারালো ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে তাকে। এতে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে যান সাহেদ। ছিনতাইকারীরা তার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান সাহেদ। সাহেদের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ফতিয়ার দাউড়ে। তার বাবার নাম মো. বাবু আলী। এদিকে সাহেদ হত্যার পর ৫৪ দিন অতিবাহিত হলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। নিহত সাহেদের বাবা বাবু আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আত্মীয়ের বাড়িতে এসেছিলাম। রাতে বাসা থেকে ছেলে রাস্তায় আসে। আর এখানে এ ঘটনা ঘটে। ছেলেকে হত্যার এত দিন হয়ে গেল, অথচ পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এমনকি মামলার পর কোনো পুলিশ আমার সঙ্গে যোগাযোগও করেনি। স্থানীয় আবদুর রহমান বলেন, আবদুল্লাহপুরে বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার জন্য বাস কাউন্টার রয়েছে। এ কারণে সব সময় যাত্রীরা এখানে আসা-যাওয়া করেন। ফলে বড় একটি জনসমাগম থেকেই যায়। এটিকেই টার্গেট করে ছিনতাইকারী গ্রুপগুলো সক্রিয়। আর এর নেতৃত্বে রয়েছেন সোহেল রানা। আবদুল্লাহপুর-টঙ্গী ব্রিজ এলাকায় ঈদের আগে ও পরে অন্তত ৩০টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। দিনে-রাতে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়তে হয়েছে লোকজনকে। যারা বাধা দিয়েছেন তারাই চাপাতির কোপে আহত হয়েছেন। সর্বশেষ সাহেদকে ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাবেদ হোসেন বলেন, ‘সাহেদ হত্যার ঘটনায় এজাহারে কারোর নাম নেই। তবে আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কয়েকজনকে শনাক্ত করেছি। আশা করছি দ্রুতই তাদের গ্রেফতারে সক্ষম হব।’

 

 

সর্বশেষ খবর