রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

রহস্যমৃত্যু রাবি ছাত্রীর, স্বামী গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী মহানগরীর ধরমপুর পূর্বপাড়া এলাকার ভাড়া বাড়ি থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মতিহার থানা পুলিশ স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে। মৃত ছাত্রীর নাম রিক্তা আক্তার (২১)। তিনি আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার জোতপাড়া গ্রামে। তার স্বামী আবদুল্লাহ ইশতিয়াক ওরফে রাব্বি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে। আড়াই বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। দুজনে নগরীর ধরমপুর পূর্বপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। এ ঘটনায় পুলিশ ছাত্রীর স্বামী ও স্বামীর এক বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। পরে ছাত্রীর বাবার করা মামলায় পুলিশ স্বামী আবদুল্লাহ ইশতিয়াক ওরফে রাব্বিকে গ্রেফতার দেখায়।

বাড়ির মালিক আবদুর রশিদ জানান, চারতলা ভবনের দ্বিতীয়তলায় তিনি থাকেন। নিচতলায় ছয়টি পরিবার থাকে, যারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আবদুল্লাহ ইশতিয়াক ও রিক্তা আক্তার ২৯ জুন এ বাসায় উঠেছিলেন। রাত পৌনে ১২টার দিকে শোরগোল শুনে তিনি নিচে নামেন। তিনি দেখার আগেই রিক্তা আক্তারকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই বাসার নিচ তলার কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, তারা কেউ রিক্তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেননি। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিদ্যুৎ চলে যায়। এ সময় ওই কক্ষ থেকে শোরগোল শুনে তারা সেখানে গিয়ে রিক্তাকে বিছানায় শোয়ানো অবস্থায় দেখতে পান। সেখানে রিক্তার স্বামী আবদুল্লাহ ইশতিয়াক ও আলামিন নামে তার এক বন্ধুকে দেখতে পান তারা। আলামিন তাদের জানান, রিক্তা গলায় ফাঁস দিয়েছেন। তিনি রিক্তার গলা থেকে ওড়না খুলেছেন। এরপর রিকশায় করে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক রিক্তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওই বাসার নিচতলায় বসবাস করা একজন জানান, ওই কক্ষে একটি ছোট বিছানা আছে। বিছানার পাশেই গ্রিলের জানালা। জানালার একপাশে চেয়ার রাখা। চেয়ারে কিছু জিনিসপত্রও ছিল। সেগুলো পড়েনি। স্বামী নাকি ওই কক্ষেই তখন ঘুমাচ্ছিলেন। পুলিশ নানা রকম বিষয় ধরে তদন্ত করছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সভাপতি হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, তিনি ঘটনা শুনে রাতেই হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তারা এ ঘটনায় শোকাহত। এ বিষয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। তারা চান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, তিনি ঘটনা শুনে সকালে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এটি আত্মহত্যা, নাকি অন্য কিছু, তা ময়নাতদন্তের আগে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। রিক্তা আক্তারের মৃত্যুর পর তার ও তার স্বামীর পরিবারের সদস্যরা রাজশাহীতে এসেছেন। রিক্তা আক্তারের বাবা লিয়াকত জোয়ার্দার বলেন, রিক্তা ও আবদুল্লাহ ইশতিয়াকের মধ্যে আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির লোকজন রিক্তাকে গৃহবধূ হিসেবে স্বীকৃতি দেননি। এ কারণে তার মেয়ে ওই বাড়িতে যেতেন না। তিনিই মেয়ের খরচ বহন করতেন। তিনি মেয়েকে একটি মোবাইল ফোন কিনে দিয়েছেন, সেটিও তার স্বামীর কাছে থাকত। নিজের মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তার স্বামীর মাধ্যমে কথা বলতে হতো। তার মেয়ে আত্মহত্যা করেননি। তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। আবদুল্লাহ ইশতিয়াকের বাবা ইউনুস আলী বলেন, তার ছেলে ও পুত্রবধূ দুজনই লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। এ কারণে পুত্রবধূ ঝিনাইদহে কম আসতেন। তবে দু-তিনবার এসেছেন। ছেলেও যেতেন। বৃহস্পতিবার তিনি রাজশাহীতে গিয়েছিলেন। তাদের কাছে থেকেছেন। তাদের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য ছিল না। তারা দুজনই তাকে আপ্যায়িত করেছেন। মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার আলী তুহিন বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রিক্তা আক্তারের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল বেলা ২টার দিকে ওই ছাত্রীর বাবা লিয়াকত জোয়ার্দার বাদী হয়ে মতিহার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার একমাত্র আসামি হিসেবে আগে থেকেই আটক ওই ছাত্রীর স্বামী আবদুল্লাহ ইশতিয়াক ওরফে রাব্বিকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। বিকালে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ওসি আরও বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর রিক্তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। আবদুল্লাহ ইশতিয়াককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।

 

 

 

সর্বশেষ খবর