সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশৃঙ্খলায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

রাতের বদলে কাজ করা হয় দিনের বেলা, সারি সারি দাঁড়ানো ভ্যান ছড়ায় দুর্গন্ধ, নিয়মিত সরানো হয় না ময়লার ভ্যান, অধিকাংশ এসটিএসই অকার্যকর

হাসান ইমন

বিশৃঙ্খলায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

দিনদুপুরে চলছে ময়লা পরিষ্কারের কাজ। অনেক জায়গায় রাস্তার পাশেই পড়ে থাকে ময়লা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে বাসাবাড়ি এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে ময়লা অপসারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা থাকলেও তা মানছেন না ঠিকাদাররা। এই নির্দেশনা ভেঙে দিনের বেলা বাসা বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করছেন নিয়োজিত শ্রমিকরা। একই অবস্থা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেও।

এদিকে কোথাও ভ্যানচালকরা বাসাবাড়ির ময়লা সংগ্রহ করে ময়লার ভ্যান এসটিএসের সামনে সারি সারি দাঁড় করিয়ে রাখেন। কোথাও আবার এসটিএস অকার্যকর থাকায় এসব ময়লা সড়কের পাশে কনটেইনারে ফেলা হচ্ছে। কনটেইনার উন্মুক্ত থাকায় এসব ময়লার দুর্গন্ধে পথচারী চলাচলে দায় হয়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভ্যানচালকরা বাসাবাড়ির ময়লা সংগ্রহ করার কথা। এই নিয়ম ভঙ্গ করে দিনের ময়লা সংগ্রহ করছে- সেটা আমার নলেজে নেই। নিয়মিত বাসাবাড়ি থেকে ময়লা নেয় না এবং ভ্যানচালকরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে- সেটাও আমি জানি না। আর বর্জ্য ব্যবস্থা বিভাগও আমাকে জানায়নি। দেখি আমি খোঁজখবর নেব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পুরনো এসটিএসগুলোর অধিকাংশ নষ্ট। এগুলো ঠিক করার জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে এগুলোর কাজ শুরু হবে।’ এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম বলেন, ‘বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহের আগে সময় ছিল বিকাল ৬টার পর। তবে সন্ধ্যায় অনেক বাড়িওয়ালা ঢুকতে দেয় না। তাই নতুন সিদ্ধান্ত হলো দুপুর ১২টা থেকে বর্জ্য অপসারণ করার।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এসটিএসের জায়গা ছোট হওয়ায় ভ্যানের দীর্ঘ লাইন হয়। আমরা এ বিষয়টা চিন্তা করছি বিকল্প কী করা যায়। কিছু এসটিএসের টিনসহ অবকাঠামোর কিছু সমস্যা আছে, সেগুলো ঠিক করা হচ্ছে।’

এদিকে সরেজমিনে ডিএসসিসির ৩ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন মূল সড়কের পাশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এসটিএস। এখানে ৩ নম্বর ওয়ার্ড অর্থাৎ মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন বনশ্রী ও দক্ষিণ বনশ্রীর বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলা হয়। এই এলাকায় সকাল ৯টা থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত বাসাবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে ময়লা সংগ্রহ করছেন পিসিএসপির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইয়াছিন টিম্বার অ্যান্ড ট্রেডার্সের নিয়োজিত কর্মচারীরা। তারা এই এলাকার প্রতিটি বাসা থেকে ভ্যানে করে ময়লা সংগ্রহ করেন। তবে নিয়মিত বাসাবাড়ি থেকে ময়লা নেন না বলে অভিযোগ করেছেন অনেক বাসিন্দা। তারা বলেন, ‘ভ্যান চালকরা দু-তিন দিন পর পর বাসা থেকে ময়লা নেয়। এতে করে বাসার ময়লা পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। তাদের আবার কিছু বলা যায় না। কিছু বললে ময়লা নেবে না বলে ধমক দিয়ে যায়।’ ‘আর বাসাবাড়ি থেকে ভ্যানচালকরা যেসব ময়লা সংগ্রহ করে সেগুলো দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত এসটিএসের সামনে সড়কে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। সন্ধ্যা ৬টার পর এসটিএসের সামনে কনটেইনারে ময়লা ফেলা হয়।’ এই এসটিএসে ময়লা ফেলা হয় না কেন- জানতে চাইলে এক ভ্যানচালক বলেন, ‘এই এসটিএসটি অনেকদিন থেকে নষ্ট। সে জন্য সিটি করপোরেশন কনটেইনারগুলো সড়কের পাশে রেখেছে। আমরা এখানে ময়লা ফেলি। তবে এই এসটিএসের টিনের তৈরি ছাল নষ্ট হয়ে গেছে। এই ছালের অধিকাংশ টিন নেই। আর গেটসহ অন্যান্য কাঠামোর অবস্থা খুবই নাজুক অবস্থায় দেখা যায়।’ একই অবস্থা ২ নম্বর ওয়ার্ডের গোড়ান, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের মালিবাগ, বকশীবাগ, শান্তিবাগ এলাকা, ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের শকুরসী জোকা, সান্দিরা জোকা তিতাস কলোনি এলাকা, ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের গোপ দক্ষিণ হাজী নগর ও সারুলিয়া বিভিন্ন এলাকা এবং ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের নন্দিপাড়া বাজারসহ আশপাশের এলাকায়। এসব ওয়ার্ডেও দিনের বেলায় ময়লা সংগ্রহ করতে দেখা যায়। একই চিত্র ডিএনসিসির অধিকাংশ ওয়ার্ডের। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ডিএসসিসির ৫৬টি এসটিএসের মধ্যে ২৩টি অকার্যকর। এগুলো হলো ৩, ১২, ১৪, ১৫, ১৯, ২১, ২২, ২৪, ৩৩, ৩৫, ৩৮, ৩৯, ৪১, ৪৪, ৪৬, ৪৮, ৪৯, ৫০ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের। এর মধ্যে ২২, ৩৩, ৩৯ ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে দুটি করে এসটিএস রয়েছে। সবগুলোই অকার্যকর। অন্যদিকে ডিএনসিসির ৬০টি এসটিএস রয়েছে। এর মধ্যে ১৫টির অবস্থা খারাপ। এগুলোর টিন নষ্ট হয়ে গেছে। ১০টির ফ্লোর মেরামত করা হবে। যা মেরামতে আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মিলে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য সংগ্রহ করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ল্যান্ডফিলে নিয়ে যাচ্ছে। বাকি বর্জ্য রাস্তাঘাট, খালবিল ও নদীতে পড়ে থাকছে।

সর্বশেষ খবর