সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

পার্থর আট অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি রুপি

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

পার্থর আট অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি রুপি

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-ঘনিষ্ঠ মডেল, অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দুটি ফ্ল্যাট থেকে আগেই উদ্ধার হয়েছিল প্রায় ৫০ কোটি রুপি। এর পরই রাজ্যের মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয় পার্থকে। এমনকি দলীয় সব পদও কেড়ে নেওয়া হয় পার্থর। আর এবার পার্থ-অর্পিতার ফ্রিজ হওয়া আটটি অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার হদিস মিলল। ভারতের তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সূত্রে জানা গেছে এ খবর। ওই রুপির উৎস কী, কোনো লেনদেনের জন্য ওই রুপি রাখা হয়েছিল কি না তা খতিয়ে দেখছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। কলকাতার পাশেই বেলঘরিয়ার দেওয়ানপাড়ার মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে অর্পিতার হঠাৎ করে বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়ে যাওয়া সত্যি রূপকথার কাহিনির মতো! নগদ ৫০ কোটি রুপি ছাড়াও কয়েক কোটি টাকার বিদেশি মুদ্রা, সোনা ও হীরার গয়না, সোনা-রুপার কয়েন, সোনার বিস্কুট, নামে-বেনামে একাধিক ফ্ল্যাট, বাগানবাড়ি- কোথা থেকে এলো এই বিপুল সম্পত্তি এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে ইডি।

 আর সেই তদন্তের সূত্র ধরে শনিবার তাদের আটটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়। অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স চেক করতেই চমকে ওঠেন ইডির কর্মকর্তারা। সব মিলিয়ে সেখানে রয়েছে ৮ কোটি রুপি। গত কয়েক মাসে ওই অ্যাকাউন্টগুলো থেকে কোথায় কোথায় রুপি পাঠানো হয়েছে, কে কে ওই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছেন, কেন এত রুপি অ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছিল- এই পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এই কোটি কোটি রুপির মালিক কে? কোন পথে এসেছে এই রুপি?

অর্পিতার দাবি, তার ফ্ল্যাট মিনি ব্যাংক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই বিপুল পরিমাণ রুপি তার ফ্ল্যাটে লুকিয়ে রেখেছেন। পার্থর পরিচিতরাই এই রুপি রেখে যেতেন। এর সঙ্গে তার কোনো যোগ নেই। তার ফ্ল্যাটে কত রুপি রাখা হতো তা নাকি তিনি জানতেনই না!

অন্যদিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, তিনিও এই রুপির মালিক নন। গতকাল ইডির আঞ্চলিক কার্যালয় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পার্থকে নিয়ে যাওয়া হয় জোকার ইএসআই হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতালে ঢোকার আগেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পার্থ বলেন, ‘আমার কোনো রুপি নেই।’ তাহলে কি কেউ ষড়যন্ত্র করছে? এই প্রশ্নের উত্তরে পার্থ বলেন, ‘সময় এলে সব জানা যাবে।’ হাসপাতাল থেকে যখন তিনি বেরিয়ে যাচ্ছেন সে সময়ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে পার্থ বলেন, ‘আমার নয়, আমার নয়, আমার নয়।’ তাহলে এই বিপুল অর্থের আসল মালিক কে, সেটি খুঁজে বের করাই এখন ইডির কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ফ্ল্যাট থেকে রুপি-গয়না উদ্ধারের পর এবার পণ্য পরিষেবা কর (জিএসটি) নম্বর কারচুপির অভিযোগ উঠল অর্পিতার বিরুদ্ধে। ইডি সূত্রে খবর, একটি জিএসটি নম্বর অর্পিতার নেইল আর্ট পারলারের ব্যবসার। কিন্তু অন্য জিএসটি নম্বরে এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবসার হদিস পাওয়া যায়নি। তাহলে রাজস্ব ফাঁকি দিতেই অর্পিতা ওই জিএসটি নম্বর কারচুপি করতেন কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ অর্পিতার টালিগঞ্জ ও বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে যেসব নথি উদ্ধার হয়েছে, সেখান থেকেই একাধিক ভুয়া কোম্পানির হদিস পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এদিকে একের পর এক ফ্ল্যাট থেকে রুপি, সম্পত্তি উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় যখন রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস প্রবল চাপে, তখনই রুপিসহ ঝাড়খন্ডের তিন কংগ্রেস বিধায়কের গ্রেফতার হওয়ার ঘটনায় যথেষ্ট বিপাকে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস। শনিবার বিকালে হাওড়ার পাঁচলা থানাধীন রানীহাটিতে আটক করা হয় জামতারার বিধায়ক ইরফান আনসারীর নেমপ্লেট লাগানো একটি কালো গাড়ি। ইরফান ছাড়াও ওই গাড়িতে ছিলেন খিজরীর বিধায়ক রাজেশ কাশ্যপ, কোলেবিরার বিধায়ক নমন বিক্সাল কোঙ্গারি, তাদের এক সহযোগী ও গাড়ির চালক। এরপর তল্লাশি অভিযান চালিয়ে ওই গাড়ির ভিতর থেকে উদ্ধার হয় প্রায় ৪৯ লাখ রুপি। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই পাঁচজনকে নিয়ে আসা হয় পাঁচলা থানায়। রাতভর জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কথাবার্তায় অসংগতি ধরা পড়ায় গতকাল সকালে পাঁচজনকেই গ্রেফতার দেখায় পাঁচলা থানার পুলিশ। এরপর তাদের সিআইডির হাতে তুলে দেওয়া হয়। গতকাল গ্রেফতার পাঁচজনকেই হাওড়া জেলা আদালতে তোলা হয়।

এদিকে জামতারার কংগ্রেস বিভাগ ইরফান আনসারীর নেমপ্লেট লাগানো ওই গাড়ির ভিতর থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধারের পরই  ইরফান আনসারী, রাজেশ কাশ্যপ ও নমন বিক্সালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় কংগ্রেস। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর নির্দেশেই তাদের তিনজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। যদিও এই ইস্যুতে বিজেপির দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা এবং দলটির ন্যাশনাল কমিউনিকেশন ইনচার্জ জয়রাম রমেশ। এ নিয়ে টুইট করেন তিনি। ঝাড়খন্ড রাজ্যের কংগ্রেস সভাপতি রাজেশ ঠাকুরের অভিযোগ, ‘এ ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। বিজেপি কীভাবে মহারাষ্ট্র সরকারকে অস্থিতিশীল করেছিল তা সর্বসাধারণ সবই দেখেছে।’ এদিকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে ঘরে-বাইরে যখন প্রবল চাপে তৃণমূল কংগ্রেস, তখনই দিল্লিতে যাচ্ছেন দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জি। আগামী ৭ আগস্ট ‘নীতি আয়োগ’-এর বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লিতে যাচ্ছেন তিনি। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ ছাড়া দিল্লি সফরে আলাদা করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার কথা মমতার। পাশাপাশি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে. চন্দ্রশেখর রাও, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিনের সঙ্গে আলাদা বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পারেন তৃণমূল নেত্রী। আর তা নিয়েই উত্তপ্ত রাজনীতির ময়দান। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, এ রাজ্যে ইডি সক্রিয় হওয়ায় গোপন বোঝাপড়ার জন্য দিল্লি ছুটছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি তথা দলটির সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি যান ম্যানেজ করতে। যতবারই সমস্যা হয় তিনি ম্যানেজ করতে যান। এবারও তা-ই যাচ্ছেন। নীতি আয়োগের বাহানা দিয়ে এখন মিটিং করতে দিল্লি যাচ্ছেন তিনি।’ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘যখনই তিনি (মমতা) সংকটে পড়েন, তখনই দিল্লি চলে যান। নিজের লোকেরা বিগড়ে যাচ্ছে এসব দেখতে আর ভালো লাগছে না। তাই একটু শান্তির জন্য তিনি দিল্লি যাচ্ছেন।’

সর্বশেষ খবর