মঙ্গলবার, ২ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
বাড়ছে তিস্তা-যমুনার পানি

ফের বন্যার পদধ্বনি

প্রতিদিন ডেস্ক

ফের বন্যার পদধ্বনি

লালমনিরহাটে বেড়েছে বন্যার পানি ও ভাঙন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রংপুরের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হওয়ায় ৪৪টি গেটই খুলে দেওয়া হয়েছে। একই ধারায় পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণের কারণে দুই দিন ধরে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বাড়তে শুরু করেছে। তবে তা বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

রংপুর : তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পানি আরও বাড়তে পারে। গতকাল বিকাল ৩টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ ছিল ৫২ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ড  বন্যার  পূর্বাভাস দিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে সতর্ক বার্তা পাঠিয়েছে। ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আবারও তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নিম্নাঞ্চল ও চরের মানুষজনকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তাপাড়ের মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বসতভিটা ও ফসলহানির আশঙ্কা করছেন তারা।  রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। পানি আরও বাড়তে পারে।

নীলফামারী : নীলফামারীতে উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। বিকাল ৩টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর ফলে জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে দুই সহস্রাধিক পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। আকস্মিক ওই পানি বৃদ্ধিতে টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি গ্রামে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার বিধ্বস্ত হয়েছে। বাঁধের ওই ভাঙা স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় দেড় শতাধিক বিঘা আমন ধান খেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে জানান স্থানীয়রা।

লালমনিরহাট : ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। বিকাল ৬টায় হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫  সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল ৯টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর বিভাগীয় উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাশেদিন ইসলাম তিস্তা পানি ২৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সিরাজগঞ্জ : পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণের কারণে দুই দিন ধরে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। তবে এখনো বিপৎসীমার ১৩৯ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ায় নিম্নাঞ্চলে পানি উঠতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে খোকসাবাড়ী, কাওয়াকোলা ও মেছড়াসহ চরাঞ্চলের ইউপির নিম্নভূমি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে আমন ধান আবাদ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে কৃষক। অন্যদিকে পানি বাড়ায় যমুনার অরক্ষিত অঞ্চলে ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে এনায়েতপুরে অন্তত ২৫টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কাজীপুর উপজেলার তেকানী ইউনিয়নের হাড্ডিখোলা বেড়িবাঁধের ১০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত ১৫-২০ দিন চরাঞ্চলে ভাঙনে নদীতীরের আশপাশের প্রায় ২০০ হেক্টর আবাদি জমি, একটি স্কুল, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, মসজিদসহ ২০টি বসতবাড়ি যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। কাজীপুর তেকানী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ জানান, হাড্ডিখোলা বেড়িবাঁধটি রক্ষা করা না গেলে ভাটিতে অবস্থিত তেকানীর পাঁচটি গ্রাম ও মেছড়া ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের বিরাট এলাকা যমুনা নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ বলেন, পানি বৃদ্ধির কারণে এনায়েতপুরে তীব্র নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ২৫টি বসতবাড়ি ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে যমুনাপাড়ের মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণের কারণে যমুনায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। তবে বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই। বৃষ্টি কমলেই পানি কমতে শুরু করবে।

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর