সোমবার, ৮ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

মোল্লা শামীমের জন্য আটকা চার্জশিট

টিপু হত্যাকান্ড

সাখাওয়াত কাওসার

রাজধানীর শাহজাহানপুরে চাঞ্চল্যকর আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও শিক্ষার্থী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যা মামলার তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সাড়ে চার মাসের তদন্তে ইতোমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের নেপথ্যের কারণ, প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ মদদদাতা, অস্ত্র ও মোটরসাইকেল সরবরাহকারী। স্পষ্ট হয়েছে টিপুর অবর্তমানে ফসল কার ঘরে উঠবে এমন তথ্য-উপাত্ত। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কেবল মোটরসাইকেল চালক এবং অস্ত্র সরবরাহকারী মোল্লা শামীমের জন্যই অপেক্ষা করা হচ্ছে। তার কাছ থেকে অস্ত্র না পেলেও অন্তত মোটরসাইকেলটি আদালতে চার্জশিটের সঙ্গে জমা দিতে পারলেই হবে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার মো. রিফাত রহমান শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জোড়া খুনের মামলার বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য নয়। তবে আমরা অনেক কিছুই গুছিয়ে এনেছি। এখন মোল্লা শামীমকে গ্রেফতারের অপেক্ষা করছি। আমরা প্রত্যাশা করছি তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আধিপত্য ও ভাগবাটোয়ারা নিয়ে টিপুর সঙ্গে সরাসরি বিরোধে জড়িয়ে পড়েন আন্ডারওয়ার্ল্ডসহ প্রভাবশালী দুটি মহল। এর মধ্যে, ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যার পর মামলার আসামি হিসেবে টিপুর ক্ষমতায় ভাটা পড়ে। তবে ক্যাসিনো অভিযানের পর তৎকালীন প্রভাবশালী অনেকের গ্রেফতারে আবারো সদর্পে ফিরেন টিপু। রাজধানীর মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি-বাণিজ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে টিপুর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন অনেকেই। মতিঝিলের ক্রীড়া ভবনের ঠিকাদার সমিতির সভাপতি হওয়ায় টিপুর কাছ থেকে ওই ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া কঠিন ছিল বিরোধী পক্ষের। এসব কারণে টিপুকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে একাট্টা হয়েছিল দুটি পক্ষ। নেপথ্য থেকে কলকাঠি নেড়েছেন অনেকেই। টিপু কিলিং মিশন বাস্তবায়ন করতে কানাডায় অবস্থানরত শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিক, ইউরোপে বসবাসকারী দুই সহোদর বিকাশ কুমার বিশ্বাস ও প্রকাশ কুমার বিশ্বাস এবং দুবাই অবস্থানরত জিসান আহমেদ ঐকমত্য হন। সবশেষ স্থানীয় আরও অন্তত পাঁচজন রাজনৈতিক নেতার মতামত নেয় পরিকল্পনাকারীরা। আর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশে ফিরে আসেন মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শটগান সোহেল। মিশন বাস্তবায়ন করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় সুমন সিকদার ওরফে মুছাকে। সম্প্রতি রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর রশিদ বলেছেন, টিপুর এবং শিক্ষার্থী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যার ঘটনায় নির্দোষ কাউকে গ্রেফতার কিংবা হয়রানি করা হচ্ছে না। আমরা পারিপার্শ্বিকতা, সাক্ষ্যপ্রমাণ ও আগে গ্রেফতার হওয়াদের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে যাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছি কেবল তাদেরই গ্রেফতার করেছি। আমি মনে করি অন্যায়ভাবে কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। তবে নিহত টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি গ্রেফতারদের জবানি থেকে আরও কয়েকজন রাজনীতিবিদের নাম এসেছে। তাদের গ্রেফতার করা হোক। জড়িত না হলে আদালত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিবেন।

তদন্ত সূত্র জানায়, সবশেষ গ্রেফতার মারুফ রেজা সাগর ক্যাসিনোকান্ডে গ্রেফতার দুই প্রভাবশালীর ঘনিষ্ঠ। সোহেল শাহরিয়ারের যোগাযোগ ছিল অপরাধ জগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের অনেক শীর্ষ নেতার সঙ্গে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য চেষ্টাও করছিলেন তিনি। অন্যান্য বিরোধের সঙ্গে তিনি এমপি মনোনয়নে টিপুকে তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দী মনে করেছিলেন। গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে টিপু হত্যাকান্ডে গ্রেফতারদের জবানিতে উঠে এসেছে, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির নাম।

উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ রাতে শাহজাহানপুরের আমতলী এলাকার রাস্তায় অস্ত্রধারীর গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং তার মাইক্রোবাসের পাশে রিকশায় থাকা বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী সামিয়া আফনান প্রীতি। আহত হন টিপুর গাড়িচালক মুন্না। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিলিংয়ের দৃশ্য ভাইরাল হওয়া সন্দেহভাজন শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশকে গত ২৬ মার্চ রাতে বগুড়া থেকে গ্রেফতার করে ডিবি। এই মামলায় মোট গ্রেফতার হয়েছেন ২২ আসামি। তারা সবাই কারাগারে রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর