সোমবার, ৮ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
জাহালম বিষয়ে পর্যবেক্ষণ হাই কোর্টের

আর কোনো ব্যক্তিকে যেন ভুলভাবে মামলায় জড়ানো না হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আরও সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত করা উচিত। আর কোনো ব্যক্তিকে যেন ভুলভাবে মামলায় জড়ানো না হয়। অর্থ আত্মসাতের মামলায় নিরীহ জাহালমকে কারাভোগের জন্য ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রায়ে এমন অভিমত দিয়েছেন হাই কোর্ট। ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। গতকাল রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। ঋণ জালিয়াতির ৩৩টি মামলায় প্রকৃত আসামি ছিলেন আবু সালেক। তার বদলে নিরীহ পাটকল শ্রমিক জাহালমকে আসামি দেখিয়ে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে তিন বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। একটি দৈনিক সংবাদপত্রে খবর প্রকাশের পর হাই কোর্টের নির্দেশে ২০১৯ সালে মুক্তি পান জাহালম। রায়ে ব্র্যাক ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা সম্পর্কে আদালত বলেন, তদন্ত রিপোর্টে দেখা যায়, বিশেষত ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা সালেকের স্থলে জাহালমকে এনেছেন। তারা যেনতেনভাবে একজন আবু সালেককে দুদকের সামনে হাজির করে তাকে (জাহালম) আবু সালেক হিসেবে শনাক্ত করেন। তারা তদন্ত কর্মকর্তাকে ভুল পথে পরিচালিত (মিসগাইড) করেছেন। তারা ইচ্ছা করে এ কাজ করেছেন। আর দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার উদ্দেশে রায়ে হাই কোর্ট বলেন, দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করেননি।

তদন্ত রিপোর্টেও এটা উঠে এসেছে। কিন্তু সব দেখে মনে হয়েছে তার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। এখানে দুদকের ৩১ ধারা (সরল বিশ্বাসের ভুল) প্রযোজ্য। যদিও তারা অদক্ষ ও অযোগ্য। কিন্তু আমরা ওই অফিসারদের প্রতি ক্ষতিপূরণ আরোপ করছি না। এখানে সালেকের স্থলে জাহালমকে জড়ানোর কোনো উদ্দেশ্য দেখছি না।

রায়ে দুদককে সতর্ক করে হাই কোর্ট বলেন, দুদক একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে গঠিত স্বাধীন কর্তৃপক্ষ। আইন ও বিধি অনুসারে দুদক তার তদন্ত কার্যক্রম চালাবে এবং ভবিষ্যতে কোনো মামলায় কোনো ব্যক্তিকে এ ধরনের ভুলভাবে যেন না জড়ানো হয় সে ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে।

রায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাহালম নিয়ে হাই কোর্টের রায় প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ে বিশদ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আদালত। সেখানে দুদককে উদ্দেশ করে শক্ত ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে। আমি মনে করি, এ রায় দুদকের জন্য একটা পথনির্দেশনা ও সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। ভবিষ্যতে কাজের ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তারা আরও সতর্ক থাকবেন। আর ব্র্যাক ব্যাংককে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তদন্ত কর্মকর্তাকে ভুল পথে পরিচালিত করার জন্য।’

সর্বশেষ খবর