মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

জমিদার বাড়িতে চরে গরু

ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে পর্যটন সম্ভাবনা

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

জমিদার বাড়িতে চরে গরু

সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিলে মানিকগঞ্জের তেওতা জমিদার বাড়িটি হতে পারে জেলার শ্রেষ্ঠ পর্যটন কেন্দ্র। সংস্কার না করার কারণে দৃষ্টি নন্দিত কারুকাজ করা ভবনগুলো পরিণত হচ্ছে ধ্বংসস্তূপে। বহু আগেই চুরি হয়ে গেছে জমিদারদের ব্যবহার্য দামি আসবাবপত্রসহ ঘরের দরজা জানালা। বহু জায়গা এখনো দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে। বাড়িঘর স্থাপন করে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে অর্ধশত পরিবার। পরিত্যক্ত ভবনগুলো মাদকসেবীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। খোলা জায়গায় ঘুরে বেড়ায় গরু-ছাগল। সরেজমিন দেখা যায়, ভবনগুলোর বিভিন্ন রুমে যুবকদের আনাগোনা। মানিকগঞ্জে বিনোদনের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। জেলার লোকজন একটু বিনোদনের জন্য সাভার, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ছুটে যায়। বিনোদন পিপাসুদের দাবি- নজরুল-প্রমীলার স্মৃতিবিজড়িত এই জমিদার বাড়িটিকে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদারবাড়িটি ৭.৭৫ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত। বংশানুক্রমে জমিদার জয়শংকর ও হেমশংকর দুই ভাই ১৯৪৭ সালে ভারতে চলে যান। পরবর্তীতে সরকার জমিদারবাড়ি অধিগ্রহণ করলেও সংস্কার না করায় অযত্নে অবহেলার কারণে বেশির ভাগ ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি রুমের দরজা-জানালাসহ দুর্লভ নিদর্শনগুলো ইতোমধ্যেই চুরি হয়ে গেছে। এই তেওতা জমিদার বাড়িতে পাঁচটি বৃহৎ ভবন রয়েছে। আর এই ভবনগুলোতে ৫৫টি রুম আছে। ভবনগুলো দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত হলেও অনেক জায়গা এখনো দখলমুক্ত হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে দখলদাররা। সীমানা প্রাচীর না থাকার কারণে দিনরাত  নির্জন রুমগুলোতে চলছে মাদক সেবনসহ অসামাজিক কার্যকলাপ। এলাকাবাসী দুঃখের সঙ্গে জানান, এত জায়গা, প্রাসাদ থাকার পর শুধু  কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এখানে পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠেনি। ইতোমধ্যে প্রাচীন দুর্লভ নিদর্শনগুলো বেহাত হয়ে গেছে। এখনো যা রয়েছে এসব সংরক্ষণ করে পর্যটন শিল্প গড়ে তুললে অনেক টাকা রাজস্ব আয় হবে। রক্ষা পাবে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য। অনেক দেরিতে হলেও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মাত্র ১৩ শতাংশ জায়গা অধিগ্রহণ করে নবরত্ন (সমাধিস্থল) সংস্কার করছে। শিবালয় উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউর রহমান খান জানু বলেন, ইতোমধ্যে অযত্ন-অবহেলায় অনেক জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে জমিদার বাড়িটি অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুলের স্মৃতিগাথা জমিদারবাড়িটি উপজেলার কাছে হস্তান্তর করা হলে এটিকে দখলমুক্ত করে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

ভৌগোলিকভাবেই এর গুরুত্ব অনেক। সড়ক যোগাযোগ ছাড়াও রয়েছে যমুনা নদীর সংযোগ। সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়ে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুললে মানিকগঞ্জসহ আশপাশের জেলার লোক এখানে ভিড় করবে, রক্ষা পাবে সরকারের সম্পত্তি, টিকে থাকবে ঐতিহ্য, আয় হবে সরকারি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর