বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

বাস ভাড়া নিয়ে চলছে তর্ক হাতাহাতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাস ভাড়া নিয়ে চলছে তর্ক হাতাহাতি

রাজধানীর মেরাদিয়া থেকে মোহাম্মদপুরগামী আলিফ পরিবহনে রামপুরা ইউলুপের গোড়ায় নামার উদ্দেশে উঠে ছিলেন মো. আবদুল কাইয়ুম। বাসের সহকারী ভাড়া চাইলে তিনি ১০ টাকা দেন। সহকারী বললেন, আরও পাঁচ টাকা দেন। সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা, সেখানে ১৫ টাকা দিতে হবে কেন? কারণ জানতে চাইলে হেলপার বলেন, পাঁচ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এই নিয়ে যাত্রী ও হেলপারের মধ্যে কিছুক্ষণ তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে হেলপার বলেন, চেকপ্রতি ১৫ টাকা নির্ধারণ করেছে কোম্পানি। আমরা কী করব। ভাড়া আরও পাঁচ টাকা দিতে হবে। গতকাল সকালে আলিফ পরিবহন, তরঙ্গ, ইতিহাস পরিবহনে তর্ক-বিতর্কের এমনই চিত্র দেখা গেছে। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাস ভাড়া বাড়ানোর পর থেকে অধিকাংশ বাসে প্রায়শই এমন ঘটনা ঘটছে। সকালেই কথা হয় সামিউল ইসলাম নামে আরেকজনের সঙ্গে। তিনি বাস থেকে রাগ করে নেমে চায়ের দোকানে বসে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। কারণ জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষ, ৫-১০ টাকাও আমাদের জন্য অনেক। কাজে বের হয়ে সকালবেলা যদি তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে দিন শুরু করি তাহলে সারা দিনের কোনো কাজই ভালোভাবে হবে না।’ বাসের হেলপার ও কন্ড্রাকটরদের ভাষ্য, সরকারের পক্ষ থেকে এখনো ভাড়ার নতুন তালিকা ছাপানো হয়নি।

ফলে মালিক যেভাবে বলেছেন, সেভাবেই তারা ভাড়া কাটছেন। স্বাভাবিকভাবেই যাত্রীদের অনেকে ওই বাড়তি ভাড়া দিতে রাজি হচ্ছেন না। এতে অনেক জায়গায় বাস কর্মীদের সঙ্গে তাদের বিতণ্ডা কিংবা হাতাহাতিও ঘটছে।

আলিফ পরিবহনের চালকের সহকারী সেলিম বললেন, ‘শতকরা ৮০ জনের সঙ্গে ‘ভাড়া নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। চিৎকার চেঁচামেচি করছে। গালাগালও দিচ্ছে।’

হাসান নামের এক যাত্রী তরঙ্গ বাসে রামপুরা বাসস্ট্যান্ড থেকে মৌচাক যাচ্ছিলেন। তার কাছে ১৫ টাকা নেওয়া হলে প্রতিবাদ করে ভাড়ার তালিকা দেখতে চাইলেন। কিন্তু বাসের সহকারী হাসান মিয়া তা দেখাতে না পারায় শুরু হয় কথা কাটাকাটি। বচসা চলতে চলতেই মৌচাক এসে গেল। টাকা ফেরত না পেয়ে হাসানও নেমে গেলেন।

হাসান মিয়ার কাছে ভাড়ার তালিকা এবং মৌচাকের দূরত্ব জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘মালিক সর্বনিম্ন ভাড়া ১৫ টাকা নিতে বলেছে। সব বাসে এই টাকাই নিচ্ছে।’

এই অবস্থা শুধু মেরাদিয়া ও রামপুরায় নয়, মহাখালী, বনানী, মগবাজার, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকায় এই ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও যাত্রী ও হেলপারের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে।

প্রসঙ্গত, গত রবিবার বিকালে বিআরটিএ-এর সঙ্গে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর জানানো হয়েছিল, মহানগর এলাকায় প্রতি কিলোমিটারে বাস ভাড়া ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হচ্ছে। আর মিনিবাসের ক্ষেত্রে ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ২ টাকা ৫ পয়সা। বাসের সর্বনিম্ন  ভাড়া ১০ টাকা এবং মিনিবাসে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয় ওই বৈঠকে। পরে সে অনুযায়ী প্রজ্ঞাপনও জারি হয়। কিন্তু অনেক বাসেই তা মানতে দেখা যায়নি।

মিরপুর হার্ট ফাউন্ডেশনের সামনে ইতিহাস পরিবহনের একজন কর্মী বললেন, মিরপুর থেকে সাভারের ভাড়া আগে নেওয়া হতো ৩০ টাকা। তার মালিক এখন ৪৫ টাকা করে নিতে বলেছেন। যারা ওই ভাড়ায় রাজি হচ্ছেন, কেবল তাদেরই বাসে তোলা হচ্ছে।

এ বিষয়ে গতকাল এক সেমিনারে যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি  মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দিনে শহরে যাতায়াত খরচ বেড়েছে গড়ে ৭০ থেকে ২০০ টাকা। আর দূরপাল্লার বাসে খরচ বেড়েছে ১০০  থেকে ৩০০ টাকা। শহরে প্রতি কিলোমিটারে আড়াই টাকা নির্ধারণ করা হলেও তিন থেকে সাত টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে বিভিন্ন পরিবহন।

 

সর্বশেষ খবর