শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
হোটেলে নারী চিকিৎসক খুন

পথের কাঁটা সরিয়ে দিতেই হত্যার পরিকল্পনা স্বামীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেসবুক থেকেই শুরু। ২০১৯ সালে পরিচয়ের কিছুদিন পরই তা রূপ নেয় প্রেমে। ২০২০ সালের অক্টোবরে গোপনে বিয়ে করেন রেজাউল করিম রেজা ও চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম। তবে স্বামী রেজার একাধিক নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের জেরে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। ক্রমেই বাড়তে থাকে মনোমালিন্য। স্ত্রী নামের পথের কাঁটা সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন রেজা। ব্যাগে ছুরি বহনও শুরু করেন। সবশেষ ১২ আগস্ট স্ত্রীর জন্মদিন জাঁকজমকভাবে পালনের কথা বলতে তাঁকে নিয়ে যান পান্থপথের ‘ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্ট’ নামে আবাসিক হোটেলে। ব্যাগে বহন করা ছুরি দিয়ে জান্নাতুল নাঈমকে খুন করেন রেজা।

চট্টগ্রামের মুরাদপুরের একটি ছাত্রাবাস থেকে রেজাকে গ্রেফতারের পর গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী জান্নাতুল নাঈমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও জখমের চিহ্ন ছিল। গলা কেটে জান্নাতের মৃত্যু নিশ্চিত করেন রেজা। নৃশংসভাবে খুন করে ঠান্ডা মাথায় গোসল সারেন। জান্নাতের মোবাইল ফোন নিয়ে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে প্রথমে চলে যান মালিবাগে নিজ বাসায়। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে একটি হাসপাতালে গিয়ে তার নিজের হাতের ক্ষতস্থান সেলাই করান এবং প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসযোগে চট্টগ্রামে গিয়ে মুরাদপুরে আত্মগোপন করেন। জিজ্ঞাসাবাদে রেজার দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে কমান্ডার মঈন আরও বলেন, ‘ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছুরিতে নিজের হাতও কেটে যায় রেজার। পরে কীভাবে এ হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেন সেজন্য একজন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগও করেন। এর মধ্যেই র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হন তিনি। নিহতের বাবা ডা. শফিকুল আলম বাদী হয়ে রাজধানীর কলাবাগান থানায় হত্যা মামলা করেন। আমাদের প্রত্যাশা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরও তথ্য বের করতে পারবেন।’ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-২ ও র‌্যাব-৭-এর যৌথ অভিযানে চট্টগ্রামের মুরাদপুর থেকে রেজাকে (৩১) গ্রেফতার করা হয়। এ সময় জব্দ করা হয় হত্যার সময় রেজার পরিহিত রক্তমাখা গেঞ্জি, মোবাইল ফোন সেট ও ব্যবহৃত ব্যাগ এবং ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সেট। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই রেজা হত্যার দায় স্বীকার করেন। র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার রেজা ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেন। এমবিএ পড়াকালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। তবে নারীঘটিত ঝামেলায় তার চাকরি চলে যায়। চলতি বছরের জুনে তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগ দেন। বিবাহিত অবস্থায় রেজার একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক চলছিল। স্ত্রী জেনে যাওয়ায় তাদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। তবে বৈবাহিক সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে জান্নাতুল নাঈম স্বামী রেজাকে কাউন্সেলিং ও আলাপচারিতার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

সর্বশেষ খবর