শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

কাঁধে লাল কাপড়ে মোড়ানো সারি সারি পেয়ারার ভার

চট্টগ্রামে দাম নিয়ে খুশি বিক্রেতারা

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

কাঁধে লাল কাপড়ে মোড়ানো সারি সারি পেয়ারার ভার

চট্টগ্রামে পেয়ারা সংগ্রহে ব্যস্ত কর্মীরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিক্রেতাদের কাঁধে লাল কাপড়ে মোড়ানো সারি সারি পেয়ারার ভার। তখনো ভালো করে ফোটেনি ভোরের আলো। সেই আবছা অন্ধকারে লালসালু কাপড়েই নেওয়া হয় বাগানের সেই পেয়ারাগুলো। এরপর কাঁধে পেয়ারাভর্তি ভার নিয়ে বিক্রির উদ্দেশেই ছুটে চলে বিভিন্ন বাজার বা হাটে। পেয়ারা মৌসুম এলেই পটিয়া ও চন্দনাইশে দেখা যায় এসব দৃশ্য। এসব পেয়ারাবাগান মূল সড়ক থেকে ৮ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে।

বাগান মালিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের দুই উপজেলা পটিয়া ও চন্দনাইশের বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চল জুড়ে পেয়ারার বাম্পার ফলন হয়েছে। এ ফলনে চাষিদের মুখেও দেখা দিয়েছে হাসির ঝিলিক। লাল কাপড়ের থলিতে করেই পেয়ারা বিক্রি করেন বিক্রেতারা। পটিয়া, চন্দনাইশসহ বিভিন্ন উপজেলায় উৎপাদিত পেয়ারা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, স্বাদেও অনন্য। এ পেয়ারা পাওয়া যাবে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত। পটিয়ার খরনা এলাকার পেয়ারা চাষি মো. বাবুল বলেন, ‘পেয়ারার ফলন তেমন ভালো হয়নি। তবে দাম ভালো রয়েছে। এ দাম মৌসুমের শেষ পর্যন্ত থাকলে লাভের মুখ দেখব।’ পেয়ারা চাষি আহমেদ হোসেন বলেন, ‘প্রায় ৭ বিঘা জমিতে পেয়ারাবাগান রয়েছে। এবার বাজারে যে পেয়ারার দাম তাতে পরিচর্যাসহ সব খরচ মিলিয়ে লাভের মুখ দেখব।’ চন্দনাইশের বাসিন্দা ব্যবসায়ী হাসান মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন বলেন, ‘গ্রামের ভাষায় পেয়ারাকে “গয়াম” বলি। খেতে মিষ্টি ও দেখতে সুন্দর বলে এ পেয়ারার চাহিদাও বেশ। এসব পেয়ারা সারা দেশে যাচ্ছে।’ পটিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কল্পনা রহমান ও চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. ইমরান হোসেন বলেন, পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় এসব এলাকার পেয়ারার স্বাদ ভালো। পেয়ারা চাষ বিষয়ে কোনো কৃষক সহযোগিতা চাইলে সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন তাঁরা।

কৃষি অফিস ও প্রশাসনসহ স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পটিয়া ও চন্দনাইশে বিশাল পাহাড়ি এলাকাজুড়ে রয়েছে পেয়ারার শত শত বাগান। শুধু চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চনাবাদ, ছৈয়দাবাদ, লালুটিয়া, হাসিমপুর ও জামিজুরী ইউনিয়নের পাহাড়ে ছোট-বড় মিলিয়ে ৯০০ থেকে ১ হাজারের ওপরে পেয়ারাবাগান রয়েছে। পটিয়ায় রয়েছে ৩০০-এর ওপরে পেয়ারাবাগান। পটিয়ার খরনা, কচুয়াই, উত্তর শ্রীমাই, হাইদগাঁও, কেলিশহরে পেয়ারার চাষ হয়। এ ছাড়া পাশের সাতকানিয়া, বোয়ালখালী ও বাঁশখালীতে পেয়ারার চাষ হচ্ছে। এখানকার অনেকেই পেয়ারা চাষ করে ঘুচিয়েছেন বেকারত্বের অভিশাপ। জানা গেছে, এবার চন্দনাইশের কাঞ্চননগরসহ পটিয়ার পাহাড়ি অঞ্চলজুড়ে পেয়ারার ভালো ফলন হয়েছে। স্বাদে অতুলনীয় ঢাউস সাইজের এ পেয়ারা যাচ্ছে সারা দেশে। চাষিরা দামও পাচ্ছেন ভালো। পটিয়া-চন্দনাইশ, বোয়ালখালী, বাঁশখালী, সাতকানিয়াসহ চট্টগ্রামের আরও কয়েকটি এলাকায় শত শত পেয়ারা চাষি রয়েছেন। পেয়ারা সংগ্রহ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পেয়ারার বাজার রৌশনহাটে বিক্রি করেন। পেয়ারা বিকিকিনিতে জমজমাট পটিয়ার কমলমুন্সিহাট, চন্দনাইশের রৌশনহাট, সাতকানিয়ার কেরানীহাট, দোহাজারী বাজার, খরনা রাস্তার মাথা, হাসিমপুর, পটিয়ার ভট্টাচার্যহাট, উত্তর শ্রীমাই, দক্ষিণ শ্রীমাই, মৌলভীবাজার, দারোগাহাটসহ একাধিক স্থানে লাল কাপড়ে মোড়ানো সারি সারি পেয়ারার ভার দৃশ্যমান থাকে সব সময়।

সর্বশেষ খবর