রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
জনসভায় শামীম ওসমান

ঘণ্টা বাজালাম, ডেট দেন কবে খেলবেন

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

ঘণ্টা বাজালাম, ডেট দেন কবে খেলবেন

গতকাল জনসভায় বক্তব্য দেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সংসদ সদস্য শামীম ওসমান স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সভা-সমাবেশ করার সুযোগ পেয়ে বিএনপি-জামায়াত বলছে রাজপথ দখলে নেব। সরকার উৎখাত করব বলে তারা হুমকি দেন। যারা আরেকটি পঁচাত্তর ঘটানোর হুমকি দেন তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, ‘ডেট দেন কবে খেলবেন, কোথায় খেলবেন। আপনারা দেশ ধ্বংসের পক্ষে, আমরা খেলব দেশ গড়ার পক্ষে। আপনারা খেলবেন সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে, আমরা খেলব অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে ঘণ্টা বাজাব বলেছিলাম। আজ ঘণ্টা বাজালাম নারায়ণগঞ্জ থেকে। মনে রাখবেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমরা শেখ হাসিনার কর্মীরা লাখো লোক নিয়ে নারায়ণগঞ্জে প্রস্তুত আছি। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে খেলার জন্য নারায়ণগঞ্জের কর্মীরাই যথেষ্ট।’

গতকাল শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে এক  জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। জনসভায় লাখো মানুষের সমাগম ঘটে।

শামীম ওসমান বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান  দেশে এলেন। ২২টি সংগঠন গেল, গিয়ে বলল র‌্যাব এটা করেছে,  সেনাবাহিনী এটা করেছে। এটা কেন বলতে ভুলে গেলেন আমাদের দেশে ১৫ লাখ রোহিঙ্গা এসে বসে আছে। এ পুলিশ রাষ্ট্রের। সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব। এই র‌্যাবের ভূমিকা আপনারা অস্বীকার করতে চান?  রোহিঙ্গা ইস্যু তো সবচেয়ে বড় বিষয়। বার্মায় গিয়ে কেন বলেন না রোহিঙ্গা ফেরত নাও, নয় তো স্যাংশন দেওয়া হবে।’

এ সময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কোথায় ছিল সেই মানবাধিকার? ’৮১ সালে আমাদের নেত্রী যখন দেশে ফিরে কাকুতি-মিনতি করলেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে গিয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে চান। গেটটা জিয়াউর রহমান খুলে দেননি। সেখানে বসে একটু কান্নার সময়ও দেননি। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা আর্তনাদ করে কেঁদেছিলেন। আরেক বোন শেখ রেহানা তো কাঁদতেও পারেননি।

শামীম ওসমান বলেন, ‘আপাকে বললাম অনেক হয়েছে আমাদের ছুটি দেন। তিনি বললেন, তোদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আমার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। আমার স্বপ্ন হচ্ছে, বাবা চেয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে, সেই স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। তিনি বাংলাদেশকে পৃথিবীর মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাতে কাজ করে যাচ্ছেন। সেই শেখ হাসিনাকে ২১ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এর পরও তিনি দমে যাননি। সেই নেত্রীর সন্তানেরাও দমে যাবে না।

একটি আফসোস রয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে হত্যা করার পর প্রতিশোধ নিতে বড় ভাই সেলিম ওসমান একাই বের হয়ে নিরুদ্দেশ ছিলেন। বাবা গ্রেফতার হয়েছিলেন। খুব ছোট ছিলাম। আফসোস লাগত বঙ্গবন্ধু পরিবারের জন্য যদি কখনো সময় আসে জীবন দিতে আমরা প্রস্তুত থাকব। তাই তো সব সময় প্রস্তুত থাকি। শেখ হাসিনা  ও তাঁর পরিবারের প্রতি তিল পরিমাণ কোনো আঘাত এলে জীবন দিতে নারায়ণগঞ্জে লাখো কর্মীরা মুখিয়ে রয়েছে।’

তিনি বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা তারেক  রহমান সাহেবের কথায় লাফাচ্ছেন। একবার ভাবুন, যার কথায় লাফাচ্ছেন তিনিই তো তার অসুস্থ মাকে দেখতে একবারও দেশে এলেন না। এটা থেকে বুঝে নিন। যারা দেশে বসে লাফাচ্ছেন তারেক সাহেবের কথায়, আপনার বিপদে পড়লে তিনি আসবেন না। কারণ মায়ের জন্য যে দেশে আসতে পারেন না, তিনি আপনাদের জন্য কেন দেশে আসবেন!’

তিনি বলেন, যারা অশুভ খেলা খেলার চেষ্টা করছেন তারা জেনে রাখুন, নারায়ণগঞ্জের মাটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি ছিল, শেখ হাসিনার ঘাঁটি ছিল, এখনো আছে এবং থাকবে। নারায়ণগঞ্জের কর্মীরা কিন্তু ঘুমান না। দিনে সজাগ থাকেন আর রাতে না ঘুমিয়ে শুধু অপেক্ষায় থাকেন, কখন স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির ডাক আসবে।’

২০০১ সালের ১৬ জুন চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলায় দুই পা হারানো নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি বাবু চন্দন শীল সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। এতে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ রশীদ, সোনারগাঁ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুল ইসলাম ভুইয়া, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফউল্লাহ বাদল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক শিরীন বেগম, মহানগর সভাপতি ইসরাত জাহান খান স্মৃতি প্রমুখ।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর